আগামী ২৭ অক্টোবরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মত খেলতে নামবে ক্রিকেটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই খেলায় আমাদের প্রতিন্দ্বন্দ্বী হবে সাউথ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা মুখিয়ে আছে সেইদিন এসসিজিকে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আবহে ভরিয়ে দিতে। তারই ‘প্রস্তুতি’ হিসেবে এসসিজিতে ১১ ফেব্রুয়ারির অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কার টি-টুয়েন্টি ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম আমরা।
মনে হলো এক ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে এলাম।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কথা শুনলে কোন ছবিটা আপনার মনে ভেসে ওঠে? কুইজের প্রশ্নের মতো মনে হতে পারে। কত কত ম্যাচ সেই কবে থেকে হয়ে আসছে, কতসব মহারথীদের পদচারণা আর দারুণ সব রেকর্ডের সাক্ষী এই মাঠ; তা নিয়ে দু’একটা স্মৃতি তো সব ক্রিকেটপ্রেমীদের থাকবেই। এর থেকে একটি দুটি বেছে নেয়া সহজ নয় মোটেই। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে চট করে এসসিজি ভাবলে আমার চোখে ভেসে ওঠে একটি ছবি আর মনে পড়ে শেন ওয়ার্নের একটা সংলাপ।
ছবিটি খুবই আইকনিক-সেসময় সদ্যপ্রয়াত টনি গ্রেগের হ্যাটটি রাখা উইকেটের উপর। উনার মতো অসাধারণ একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এরচেয়ে ইউনিক কিছু আর হতে পারতো কিনা আমি ভাবতেও পারিনা। এবার প্রথমবারের মতো এসসিজিতে গিয়ে পতপত করে উড়তে থাকা পতাকার দিকে তাকিয়ে মনে মনে সেই ছবি এঁকে আমি স্যালুট করে এসেছি আমার সবসময়ের প্রিয় ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগের জন্য।
আর শেন ওয়ার্নের সংলাপের কথা শুনে তো বুঝতেই পারবেন আমি বলছি ব্রায়ান লারার প্রথম সেঞ্চুরির কথা; যার শেষ হয়েছিলো ২৭৭ রানে রান আউট হয়ে।
ইফ ইউ ডিডন’ট রান হিম আউট, আই থিংক হি উড স্টিল ব্যাটিং নাউ-ওয়ার্নির এই সংলাপ তো কিংবদন্তীর মর্যাদায় অভিষিক্ত তখন থেকেই। এই ঘটনার কিছুদিন পরে জন্ম নেয়া মেয়ের নাম লারা রেখেছেন সিডনি! একটা মাঠ বা একটা শহর ক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের একজন এই ব্রায়ান লারাকে কতটা জড়িয়ে আছে ভাবা যায়! লারা নিজে খুব সম্ভবত তাঁর সেরা ইনিংসের তালিকায় এই ২৭৭-কে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছেন।
আর নিজের চোখে দেখা অনেক অনেক ম্যাচের মাঝে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে ২০০৩-০৪ সিরিজে শচীন টেন্ডুলকারের অনবদ্য ২৪১* এর কথাই বেশি মনে পড়ে আমার। লারার ইনিংসটার মতোই আরেক ক্লাসিক সেটা।
এই মাঠে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, প্রথমবারের মত!
এর আগে দুটি সফরে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে বাংলাদেশ। খেলাগুলো হয়েছে কোথায় তা আজকের তরুণেরা জানলে মন খারাপ করতেই পারে। সত্যি কথা বলতে ডারউইন আর কেয়ার্নস নামে অস্ট্রেলিয়ার যে দুটো শহর আছে তা বাংলাদেশের প্রথম সেই সফরের আগে জানাই ছিলো না আমার। নিকট অতীতে সেখানে কোন আন্তর্জাতিক দল খেলেছে বলেও মনে করতে পারছি না। শ্রীলঙ্কা সম্ভবত খেলেছে ঐ মাঠ দুটোয় একবার। অবশ্য গত ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টিম এডিলেইড ওভাল আর মেলবোর্নের এমসিজিতে খেলেছিলো দুটি ম্যাচ, ব্রিসবেনের গ্যাব্বার ম্যাচটি ভেসে গিয়েছিলো বৃষ্টিতে।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এমসিজি, এসসিজি, গ্যাব্বা বা ওয়াকা’র মাঠে না খেলতে পারাটা একটা অপমান হিসেবেই ধরা যেতে পারে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ান মূলধারার মিডিয়াতেও সিএ’র এমন আচরণের নিন্দা করা হয়েছে অনেকবার। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড তো সাকিবের মতো একজন খেলোয়াড়ের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোন টেস্ট খেলতে না পারাকে রীতিমতো কৌতুকের সাথে তুলনা করেছে।
এসব প্রেক্ষাপট মাথায় রাখলে এবারের এসসিজিতে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়াই উচিত। মাঠে বাংলাদেশের ভালো খেলার জন্য এটা হতে পারে একটা বড় জ্বালানি। যদিও দুপুরে বাংলাদেশের খেলার পরেই সন্ধ্যায় ভারতের খেলা রেখেছে সিএ, তাতে বিরক্ত হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা মুখিয়ে আছেন দলে দলে মাঠে গিয়ে টাইগারদের উৎসাহ দেয়ার জন্য।
২৭ অক্টোবরে বাংলাদেশের পতাকাকে এসসিজিতে পতপত করে উড়তে দেখার আবেগকে যদি আমাদের টাইগারেরা পার্ফরমেন্সেও টেনে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আমাদের ক্রিকেটের জন্যও সেটা হয়ে উঠবে বড় একটা বিজ্ঞাপন।