জোৎস্না নামার রাত

এতসব রেকর্ড ঘটেছে একই রাতে। একটি স্মরণীয় সময়। এমন রাত ইতিহাসে আসে কালেভদ্রে। এমন রাত জমিয়ে রাখে সময় তাঁর অতলে। হঠাৎ একদিন সবাইকে মুগ্ধ করবে বলে।

অবিস্মরণীয়, অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব এক জয় দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুঁটি ১৭১ রান নিয়ে এসে লিখেছে নতুন ইতিহাস। আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে অনবদ্য এক জয়ের সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব। এমন জয় ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ বিরল। আর এই বিরল এক জয়ে হয়েছে বেশকিছু রেকর্ড।

৯৩ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ, অপরপ্রান্তে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ৮১। তিনিও ম্যাচ শেষ করেই তবে ছেড়েছিলেন বাইশ গজ। ১৭৪ রানে অপরাজিত এক জুঁটি প্রথমত বাংলাদেশের সপ্তম উইকেটের সেরা জুঁটি রানের বিচারে। আর বিশ্ব ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুঁটি। সেটা জুঁটির রেকর্ড।

আফিফ-মিরাজ জুঁটি আরো একটি রেকর্ড গড়েছে। কোন ব্যাটিং লাইনআপের ছয়ে পরে নামা ব্যাটারদের কোন জুঁটির দলের জন্যে সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ডটা করেছেন তাঁরা। দলে ৭৯.৪৫% রান করেছেন সাতে নামা আফিফ ও আটে নামা মিরাজ। ৪৫ রান থেকে দলের জয় নিশ্চিত করতে করছেন ১৭৪ রান, যদিও দরকার ছিলো ১৭১ রান। এই রেকর্ডের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড।

২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৬ রানে অলআউট হয়েছিলো ইংলিশরা। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রথম ছয় ব্যাটারের পরের সারিতে নামা ব্যাটাররা মোট রানের ৭৯.০৮% রান করেছিলেন। মঈন আলী, ক্রিস ওকস ও টম কারানরা সেদিন তুলেছিলেন ১৫৫ রান। দীর্ঘ চার বছর পর রেকর্ড বইয়ে শীর্ষস্থান হারালো ইংলিশরা।

আরো একটি রেকর্ড উপহার দিয়েছে বাংলাদেশের ২৩ ফেব্রুয়ারির অপ্রত্যাশিত জয়। প্রথম ছয় ব্যাটারদের মোট রান ৩০ কিংবা এর থেকে বাজে অবস্থা থেকে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড এর আগে ছিলো না। এর আগের সবচেয়ে বাজে অবস্থানটা ছিলো পাকিস্তানের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৯৭ সালে এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে মোট ৪১ রান করেছিলো পাকিস্তানের প্রথম ছয় ব্যাটার। অবশ্য দু’টো ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করেছিলো পাকিস্তান। সে দিক থেকে বাংলাদেশের রেকর্ডটা অনন্য বলা যেতেই পারে।

আফিফ আর মিরাজ যখন একসাথে ব্যাট করা শুরু করেন তখন বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৭১ রান। সেই রান টপকে জিতে যায় বাংলাদেশ। যা কিনা ক্রিকেটের ইতিহাসে ছয় উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে তোলা জয়। এর আগে এমন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৬৪ রান সংগ্রহ করেছিলো অজিরা।

আবার সেই ৪৫ রান আবার এর থেকেও কম রানে ছয় উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিকেট ইতিহাসের ম্যাচ জেতার নজির রয়েছে মাত্র চার বার। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ৩৮ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। সেটা ১৯৯৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে সেবার অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট ছিলো ১৭৩ রান। তবে ২০০এর বেশি রান তাড়া করতে নেমে এমন বাজে পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জেতার দৃষ্টান্ত এর আগে দেখেনি ক্রিকেট।

এতো সব গেলো দলগত সব রেকর্ড। তবে আফিফের করা অপরাজিত ৯৩ সাত নম্বরে কিংবা তাঁর নিচে ব্যাটিং করতে নামা ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আর মিরাজের ৮১* দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আবার আট নম্বরে নেমে ৮১ রানে অপরাজিত মিরাজ সেই উইকেটে সর্বোচ্চ।

এতসব রেকর্ড ঘটেছে একই রাতে। একটি স্মরণীয় সময়। এমন রাত ইতিহাসে আসে কালেভদ্রে। এমন রাত জমিয়ে রাখে সময় তাঁর অতলে। হঠাৎ একদিন সবাইকে মুগ্ধ করবে বলে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...