প্রসঙ্গ তামিমের অধিনায়কত্ব

একজন কেমন, তার স্ট্যাট হচ্ছে সফলতা তথা জয়ের হার। বিশ্বকাপ ২০২৩ এর বাছাই পর্ব তথা সুপার লিগে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলে নয় ম্যাচ জিতেছে, হেরেছে মাত্র চারটি। টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ফলে, তামিমকে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সফল না বলার কোন উপায় নেই। কিন্তু, পরিসংখ্যান সবসময় পুরোপুরি সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে না, সবচেয়ে সেরা দল থাকলে, বা দুর্বল দলের সাথে বেশি ম্যাচ পেলেও একজন অধিনায়কের পরিসংখ্যান খুব ভালো দেখাতে পারে।

একজন  কেমন, তার স্ট্যাট হচ্ছে সফলতা তথা জয়ের হার। বিশ্বকাপ ২০২৩ এর বাছাই পর্ব তথা সুপার লিগে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলে নয় ম্যাচ জিতেছে, হেরেছে মাত্র চারটি। টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ফলে, তামিমকে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সফল না বলার কোন উপায় নেই। কিন্তু, পরিসংখ্যান সবসময় পুরোপুরি সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে না, সবচেয়ে সেরা দল থাকলে, বা দুর্বল দলের সাথে বেশি ম্যাচ পেলেও একজন অধিনায়কের পরিসংখ্যান খুব ভালো দেখাতে পারে।

বিরাট কোহলি, রিকি পন্টিং, কেন উইলিয়ামসনের এর পরিসংখ্যান (যথাক্রমে) মহেন্দ্র সিং ধোনি, স্টিভ ওয়াহ বা ক্রো – ফ্লেমিংয়ে চাইতে বেটার হলেও তাদেরকে ধোনি, ওয়াহ বা ক্রো- ফ্লেমিংয়ের চাইতে বেটার ক্যাপ্টেন বলা হবে না। ফলে, কে কেমন ক্যাপ্টেন তার জন্যে দরকার- মাঠের পারফরম্যান্স। বিশেষ করে, একটা ম্যাচে বোলিং/ ফিল্ডিং করার সময়েই ক্যাপ্টেন এর পারফর্মেন্সটা সবচেয়ে ভালো বুঝা যায়। সে জায়গা থেকেই বলতে হবে, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ওডিআই ম্যাচে তামিমের ক্যাপ্টেন্সি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।

আফগানিস্তান যে মাত্র ২১৫ রানে প্যাকেট হলো, এর পেছনে বড় অবদান রয়েছে তামিমের অধিনায়কত্ব। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সেটিং এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং চেঞ্জ – দুটোরই উপস্থিতি ছিল গতকালের ম্যাচে। এটা ঠিক যে, যখন বোলাররা ভালো বল করে, তখন ক্যাপ্টেনও বাহবা পায়, বোলাররা খারাপ করলে ক্যাপ্টেনের ঘাড়েও দোষ এসে পড়ে – সে জায়গা থেকে গতকালের ম্যাচে তামিম প্রায় প্রতিটি বোলিং চেঞ্জেই সফলতা পাওয়ায়- মনে হতে পারে এমন সফলতার পেছনে তার দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন্সির ভূমিকার চাইতে কিছুটা লাক এবং কিছুটা রিয়াদ, তাসকিন, সাকিবদের ভালো বোলিং এর ভূমিকাই মূল, কিন্তু তামিমের ক্যাপ্টেন্সিটা যে দুর্দান্ত ছিল- তা বুঝার জন্যে কয়েকটা নোশন উল্লেখ করা যেতে পারে।

  • আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং

পাওয়ার প্লে’র পরেও তামিম আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং রেখেছে। দ্বিতীয় উইকেটটা এসেছে ১৪ তম ওভারে, স্লিপে ইয়াসির আলী ক্যাচটা ধরেছে (একটাই স্লিপ ছিল, কিন্তু দাঁড়িয়েছিলো সেকেণ্ড ও থার্ড স্লিপের মাঝে)। সিঙ্গেলস – ডাবলস আটকানোর জন্যে ক্লোজে ফিল্ডার রেখেছে, ফলে আফগানিস্তান ব্যাটারদের রানের জন্যে বেশ যুদ্ধ করতে হয়েছে, মানে তারা প্রচুর ডট খেলেছে।

উইকেটে যখন দুই বাঁহাতি, হাশমত অনেকক্ষণ ধরে উইকেটে থেকে সেট, ম্যাচের সবচেয়ে কৃপণ বোলার মিরাজকে কিছু আগে ছক্কাও মেরেছে, নাজিবুল্লাহও মোটামুটি অনেকগুলো বল খেলে ফেলেছে। এমন অবস্থায় সাকিবকেও আনার জন্যে একটা উইকেট পাওয়া খুব জরুরি ছিল। ২৮ তম ওভারে পার্ট টাইমার রিয়াদকে নিয়ে আসলো, এবং রিয়াদ প্রথম ওভারেই ৪ রানে হাশমতের উইকেট তুলে নিলো। রিয়াদের দায়িত্ব ওখানেই শেষ।

পরে রিয়াদকে কন্টিনিউ না করে সাকিবকে নিয়ে এলো! অনেক ক্যাপ্টেনই পার্ট টাইমার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন পরিমিতিবোধ বা সীমা রাখতে পারে না, পার্ট টাইমার একটা ওভার ভালো করলেই লোভে পড়ে যায়! কিন্তু, ভুলে যায় পার্ট টাইমারের একটা ওভার বেশি করানো মানে হচ্ছে- দলের মূল বোলারদের কোটা থেকে সেই ওভারটা কার্টেল হওয়া। গত ম্যাচেও রিয়াদ যদি আরেকটা ওভার করতো, তাহলে আমরা সাকিবের সেই দুর্দান্ত নবম ওভারটা মিস করতাম। তাছাড়া, হাশমত আউট হওয়ার পরে একজন ডানহাতি ব্যাটার উইকেটে এসেছে, অন্যপ্রান্ত থেকে টাইট বল করা মিরাজ তখনও বল করছিলো, ফলে আরেক অফব্রেক রিয়াদকে কন্টিনিউ করার কোন মানেও ছিল না। বরং আরো চাপ তৈরি করতে অভিজ্ঞ অস্ত্র সাকিবকেই নিয়ে এসেছে।

  • তাসকিনের থার্ড স্পেল

৩৮ ওভার শেষের আগেই ডানহাতি স্পিনার মিরাজের কোটা শেষ। তখন তাসকিনের আছে কেবল ২ ওভার বাকি। যেকোন মুখস্থ ক্যাপ্টেনই ডেথ ওভারের জন্যে ডানহাতি – বামহাতি বোলার রাখতে তাসকিনের ঐ দুই ওভার রেখে দিতো। কিন্তু তামিমের ঐ সময়ে তাসকিনকে নিয়ে আসাটা অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। ৩৯ তম ও ৪১ তম ওভারে তাসকিনকে বল দেয়ার অর্থ হচ্ছে- শেষ ৯ ওভার বল করবে তিন বাঁহাতি, সাকিব, শরিফুল ও মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজ ডেথ ওভারে আমাদের সেরা অস্ত্র, গোটা দুনিয়ার মধ্যেই অন্যতম সেরা ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট, ফলে মুস্তাকে রাখবেই। আর, শরিফুল ছিল ৩৮ ওভার পর্যন্ত সেরা পেসার। ৭ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছে, তার বলেই সবচেয়ে কম বাউণ্ডারি মারতে পেরেছে। ফলে, এই দুজনের উপরেই ডেথে ক্যাপ্টেন ভরসা রাখবে। সেটাই তামিম রেখেছে। এবং তাসকিন ৩৯ তম ওভারে এসে ঠিকই একটা ব্রেকথ্রু দিয়েছে, নবীকে তুলে নিয়েছে।

  • সাকিবকে ব্যবহার

গতকালের ম্যাচে উইকেট থেকে স্পিনাররা খুব অল্পই সুবিধা পেয়েছে। আর, সাকিবও একটি ওভার ছাড়া গতকাল তার সেরা ছন্দে ছিল না। ৮ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে- সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিল সে। ফলে, স্বভাবতই পার্ট টাইমার রিয়াদ যে একটা ওভার বল করেছে, সেটা সাকিবের কোটা থেকেই কার্টেল করবে ক্যাপ্টেন। এখন সাকিব তার নবম ওভার, ইনিংসের ৪৫ তম ওভারটা অসাধারণ বল করেছে।

মাত্র ১ রান দিয়ে দুটা উইকেট তুলে নিয়েছে, গুলবাদিন নাইব ও রশিদ খানের উইকেট পেয়েছে। এরকম দারুণ বল করার পরে- আবারো ক্যাপ্টেন লোভে পড়ে যেতে পারতো। মানে, সাকিবের একটা অব্যবহৃত ওভার সাকিবকে দিয়েই করাতে পারতো। তামিম এখানেও দারুণ বিচক্ষণ! ৪৭ তম ওভারে সাকিবকে না এনে শরিফুলের হাতেই বল দিয়েছে। উইকেটে পুরো থিতু হওয়া নাজিবুল্লাহ জাদরান শরিফুলের ৫ টা বল খেলার সুযোগ পেলেও একটা বাউণ্ডারিও মারতে পারেনি, ওভারে রান উঠেছে সাকুল্যে ৭। সেখানে লোভে পড়ে সাকিবকে অমন ডেথ ওভারে আনলে, সাকিবকে আগের ওভারগুলোতে অনায়াসে খেলা নাজিবুল্লাহ জাদরান (এক ৬ ও এক বাউণ্ডারিও মেরেছে সাকিবকে) অনেক রান তুলে ফেলতে পারতো।

এগুলো ছোটখাট ব্যাপার, এবং গত ম্যাচে সবই বাংলাদেশের পক্ষে ক্লিক করেছে, হয়তো ভাগ্য সহায় না হলে- এগুলো ক্লিক নাও করতে পারতো; কিন্তু তাতে তামিমের ক্যাপ্টেন্সির মাহাত্ম্য তাতে এতটুকু কমে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে – চিন্তাটা, পরিকল্পনাটা, এবং এফোর্টটা! মুখস্থ ক্যাপ্টেন্সি বাদ দিয়ে যখন সুনির্দিষ্ট চিন্তা অনুযায়ী, ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝে, ম্যাচের বোলারদের ফর্ম ও অবস্থা বুঝে পরিকল্পনা সাজানো হয়, তখন তখনই আসলে ক্লিক করার সম্ভাবনা বাড়ে। এ জায়গাতেই তামিম রিয়াদ ও মুশির চেয়ে এগিয়ে আছে।

তামিমের হয়তো সাকিবের মত ক্রিকেট মস্তিস্ক নাই, কিন্তু সে অনেক বেশি ফোকাসড ও ডেডিকেটেড, মুশি ও রিয়াদের মত মুখস্থ ক্যাপ্টেন্সি সে করছে না, মুশি ও রিয়াদের মত ডিফেন্সিভও না, মানে এতটুকুতেই ভড়কে যায় না। সে টেস্ট ক্রিকেট ভালোবাসে, ওডিআইয়ের দায়িত্বের ব্যাপারেও খুব সচেতন, ক্যাপ্টেন হিসেবে সে অনেক বেশি ফোকাসড ও ডেডিকেটেডও। ডমেস্টিকের খোঁজখবর রাখে, সতীর্থ খেলোয়াড়দের সাথেও সম্পর্ক বেশ ভালো, ক্যাপ্টেন হিসেবে সতীর্থদের আগলে রাখার চেস্টা করে (যেটা আবার আমাদের সমর্থকদের পছন্দ নয়), জুনিয়রদের মোটিভেট করার চেস্টা করে (মিরাজের সেঞ্চুরি ইনিংসের আগের রাতে ইনজুরিতে টেস্ট দলের বাইরে থাকার পরেও মিরাজকে কল করে উৎসাহিত করেছিলো)!

তামিমের ক্যাপ্টেন্সির সমালোচনায় তিনটি যুক্তি দেখলাম।

  • মুশফিক কেন কিপিং করছে, লিটন কেন নয়?

মুশফিক কেন কিপিং করছে, এই প্রশ্নটা আমারও। কিন্তু এর জন্যে মুশিকে বা তামিমকে দায়ী করাটা খুবই সমস্যাজনক বলে মনে হয়। এর আগে ডমিঙ্গোর প্রশংসার অংশ হিসেবে যখন মুশিকে কিপিং থেকে সরানোর কথা বলেছিলো কেউ কেউ, তখন তার জবাবে বলেছিলাম- সারাজীবনই দেশসেরা কিপার নুরুল হাসান সোহান খেললে- সেই কিপিং করেছে, সেটা ঘরোয়া বা আন্তর্জাতিক যেকোন জায়গাতেই। সোহান বাই ফার ডিফারেন্স আমাদের সেরা কিপার (গত বিপিএল-এও তার ১৮ টা ডিসমিসাল, যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডিসমিসালের সংখ্যা হচ্ছে ৭টা), ফলে ডমিঙ্গো কিছুই করেনি, বরং মুশি ও সোহানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটা নাটক করেছে মাত্র।

তখনই বলেছিলাম, যে ম্যাচে সোহান খেলবে না- সেরকম ম্যাচে যদি ডমিঙ্গো মুশির হাত থেকে কিপিং গ্লাভস খুলে লিটনকে দিতে পারে, যেমনটা টেস্টে করেছিলো স্টিভ রোডস, তাহলে বুঝতাম – ডমিঙ্গোর স্পেশালিটি। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার, মুশি কিপিং না করলে সেটা কোচের কৃতিত্ব, কিন্তু মুশি কিপিং করলে তখন তার দোষ ক্যাপ্টেনের বা মুশির! এমন চিন্তা হচ্ছে বড় ভুল। আগেও বলেছি, আবারো বলছি- মুশিকে কিপিং থেকে সরানোর সিদ্ধান্তটা অবশ্যই আসতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। টিম ম্যানেজমেন্টের পার্ট ক্যাপ্টেন হলেও- তার ভূমিকা এখানে খুব সামান্যই।

কেননা- টিম ম্যানেজমেন্টের মূল মাথা হেড কোচ, এখন যুক্ত হয়েছে টিম ডিরেক্টর। এমন সিদ্ধান্তের সাথে যুক্ত নির্বাচকরা, এমনকি বোর্ডও। লিটনকে সব ফর্মাটে কিপার হিসেবে দেখতে চাইলে- তাকে কিপিং নিয়েও তো ডেডিকেটেড হতে হবে। মুশির কিপিং নিয়ে যেমন প্যাশন- লিটনের তো তা নেই। যেকোন সুযোগেই লিটন কিপিং গ্লাভস খুলে রাখে। এনসিল-এ রংপুরের হয়ে লিটন তিন নাম্বার কিপার। নর্থ জোনের হয়েও কিপিং করে না। এবারের বিপিএল-এও অংকন ৬ ইনিংসে কিপিং করেছে (৭ টা ডিসমিসাল), আর লিটন করেছে বাকি ৬ ইনিংসে (মাত্র ২ ডিসমিসাল)। সেখানে মুশি ১১ ইনিংসেই কিপিং করেছে।

লিটন কিপিং অনুশীলন খুবই কম করে, মুশি জাতীয় দলের কিপিং করুক না করুক, সে কিপিং প্যাড, গ্লাভস পরে অনুশীলনে নেমে যায়! এই আলাপের উদ্দেশ্য এটা না যে, লিটনের বদলে মুশিকেই কিপার হিসেবে আমি দেখতে চাই; বরং এটাই বুঝানো যে- মুশির বদলে লিটনকে যদি আমরা কিপার হিসেবে দেখতে চাই- সেখানে টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকদের ভূমিকাটা প্রধান, লিটনকেও কিপার হিসেবে ফোকাসড করানোর উদ্যোগটা নিতে হবে, ডমেস্টিকেও যাতে সে কিপিং করে- সেটা তাকে জানাতে হবে!

এসব মোটেও ক্যাপ্টেন তামিমের মূল দায়িত্ব নয়! বুঝতে হবে, শুধু তামিম নয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জাদরেল ক্যাপ্টেন মাশরাফি, সবচেয়ে সেরা মস্তিস্কের ক্যাপ্টেন সাকিব সহ মুশফিক (নিজে), রিয়াদ, কিংবা মুমিনুল – কেউই মুশিকে কিপিং এর দায়িত্ব থেকে সরায়নি বা সরানোর কথা চিন্তাও করেনি। টেস্টে মুশিকে সরিয়ে যে লিটনকে কিপিং করিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তটা ক্যাপ্টেন এর ছিল না, ছিল কোচের। এছাড়া, দেশসেরা কিপার সোহান থাকলে অটোমেটিকালি মুশির জায়গায় সোহান কিপিং করেছে, কিন্তু স্কোয়াডে সোহানকে নেয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল নির্বাচকদের, একাদশে সোহানকে নেয়ার সিদ্ধান্তটা টিম ম্যানেজমেন্টের।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুশিকে সরানোর মূল দায়িত্ব তামিমের না হলেও- কেন তামিম মুশির কিপিং এর পক্ষে মিডিয়ায় কথা বলে? কেন ‘আমার দলে মুশি এক নাম্বার কিপার’- বলে? বলে, কারণ এটাই ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব! মিডিয়ার সামনে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তকে ডিফেণ্ড করতে ক্যাপ্টেন একরকম বাধ্য। ক্যাপ্টেনকে সবসময় মিডিয়া ফেস করতে হয়। দলের মুখপাত্র হিসেবে তাকেই সামনে আসতে হয়। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কোচ মাঝে মধ্যে বলে, কিন্তু ক্যাপ্টেন সবসময় কথা বলে। এবং, ক্যাপ্টেন এর কাজ হচ্ছে সেটাকে ডিফেণ্ড করা, দলের সতীর্থ খেলোয়াড়দের সমর্থক তথা সাংবাদিকদের আক্রমণ, সমালোচনা থেকে আগলে রাখা।

টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত যদি হয় মুশি কিপিং করবে, ক্যাপ্টেনকে যখন সেই কিপারের প্রতি বিরূপ সমর্থক বা সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে, ক্যাপ্টেন এর মূল দায়িত্বই হচ্ছে- সেই প্লেয়ারকে সর্বোচ্চ সমর্থন যুগিয়ে তাকে মেন্টালি বুস্টাপ করা। ফলে, তামিম যখন মিডিয়ায় বলে- আমার দলে মুশফিকই সেরা কিপার- সেটা কেবলমাত্র ক্যাপ্টেনের বেসিক দায়িত্ব পালন! এর বেশি কিছু না। সমর্থক হিসেবে আপনি আমি দ্বিমত করতেই পারি, কিন্তু দলের কিপারকে মেন্টালি বুস্ট আপ করার মাঝে কোন ভুল নেই

  • আফিফ কেন সাতে, কেন পাঁচে নয়?

আফিফ ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছে টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ বলি, আর প্রথম শ্রেণি বলি- দুটোতেই আফিফের বলার মত তেমন কোন পারফরম্যান্স নেই। নির্বাচকরা ওডিআইয়ের স্লগার রোলে একজনকে খুঁজে মরছে। সাব্বির, সৌম্য, সৈকত, সোহান, শামিম- এমন অনেক এক্সপেরিমেন্ট শেষে তারা টিটুয়েন্টি থেকে আফিফকে নিয়ে এসেছে। টিটুয়েন্টিতেও আফিফ খেলে ৬ নম্বরে। ফলে, ওয়ানডেতে আফিফকে উপরে খেলানোর চিন্তাটাই ছিল না। পাঁচে আগে খেলতো সাকিব, সাকিব তিনে উঠার পরে স্টিভ রোডস লিটনকে পাঁচে আনতে চেয়েছিলো (দুর্দান্ত হতো সেটা), কিন্তু স্টিভ রোডস যাওয়ার পরে- লিটন আবার ওপেনিং এ ফিরেছে।

এরপরে, পাঁচে চেস্টা করেছে- মোহাম্মাদ মিথুন, রিয়াদ হয়ে সবশেষে সৈকত। সৈকতকে মাত্র ৪ ইনিংস দেখেই ছুড়ে ফেলেছে (যদিও এর মধ্যে একটা ফিফটি ছিল, আরেকটা ইনিংসে সাকিবের জন্যে নিজেকে স্যাক্রিফাইস করে রান আউট হয়েছিল)! সৈকতের বদলে ঘরোয়ার আরেক দারুণ ব্যাটার ইয়াসির রাব্বিকে এবারে পাঁচে খেলানোর জন্যে নিয়েছে। আফিফকে পাঁচে চিন্তা না করতে পারার মূল কারণই হচ্ছে- ডমেস্টিক লিস্ট-এতে আফিফের উল্লেখযোগ্য কোন পারফরম্যান্স নেই। সে হিসেবে আমিও পাঁচে সৈকত, রাব্বিকে বেটার চয়েস বলে মনে করি (বেস্ট চয়েস আমার মতে লিটন)।

তবে, একই সাথে আমি মনে করি, আফিফ মোটেও স্লগার নয়, তার ব্যাটিং কোনভাবেই স্লগারের সাথে যায় না! আফিফ নি:সন্দেহে বর্তমানের ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে (আফিফের আগে সাকিব ছিল সেরা)। কিন্তু, সে হার্ড হিটার না, হুট হাট ছক্কা মারতে পারে না। এমন একজনকে মিডল অর্ডারে, এমনকি টপ অর্ডারেও তাকে দরকার। টিটুয়েন্টিতে আফিফকে মুশি- রিয়াদের উপরে (বা পারলে বদলে) খেলানোর দাবি অনেক আগে থেকেই করে এসেছি। তিনে বা চারে আফিফ পারফেক্ট অপশন।

কিন্তু, ওয়ানডেতে তিন, চার ও পাঁচে আফিফের কথা চিন্তা করিনি, আবার সাতে স্লগার রোলেও আফিফকে চাই না বলে মনে করেছি, দরকারে আফিফকে ড্রপ করাটা ভালো। তবে, ওয়ানডেতে সাতেও আফিফ কয়েকটা ম্যাচে ভালো খেলায়- আমি দাবি তুলেছি তাকে এটলিস্ট রিয়াদের উপরে ছয়ে খেলানো উচিৎ। এখনো আমি মনে করি, রাব্বির পাঁচে এবং আফিফের ছয়ে খেলা দরকার। কিন্তু, রিয়াদকে ছয় থেকে সাতে নামিয়ে আফিফকে ছয়ে প্রমোট করতে না পারার দায় কি তামিমের? হ্যাঁ, এক্ষেত্রে তামিমের কিছু দায় স্বীকার করছি, বিশেষ করে গতকালের এমন পারফর্মেন্স এরপরেও নেক্সট ওয়ানডে দুটোতেও আফিফ সাতে খেলবে বলে ডমিঙ্গো যে জানালো, এমন বাজে সিদ্ধান্তের দায় টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্য হিসেবে তামিমেরও আছে। তবে, এখানেও আমি তামিমের দায় অল্পই দিবো, মূল দায়টা আসলে হেড কোচ, কোচিং স্টাফ, টিম ডিরেক্টর সহ টিম ম্যানেজমেন্টের বলেই মনে করি।

  • তামিম ইমরুল কায়েসকে একাদশে নিতে চায় কেন?

এই অভিযোগটি সবচেয়ে হাস্যকর। জাতীয় দলের বাইরে থাকা একজনকে তামিম চাইলেই কি, আর না চাইলেই কি! কিছু গণমাধ্যম ইমরুল কায়েসকে কেন্দ্র করে হাইপ তোলার চেস্টা করে। তামিমকে গিয়ে তারা যখন কায়েসকে নিয়ে প্রশ্ন করে, তখন তামিম এককালের সতীর্থ ও বন্ধুর প্রতি সম্মান রেখে যেভাবে বলতে হয়, সেভাবেই কথা বলেছে। সমর্থকরা যেভাবে আশা করে, একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড় বা বিশেষ করে একজন ক্যাপ্টেন অপর কোন বর্তমান-সাবেক সতীর্থকে নিয়ে সেভাবে কথা বলতে পারে না, এই বোধটা থাকা উচিৎ।

তাছাড়া জাতীয় দলের জন্যে দরজাটা তো সবার জন্যেই ওপেন, কোন ক্যাপ্টেনই তার বিরুদ্ধে বলতে পারে না। ফলে, ঘরোয়াতে পারফর্ম করলে জাতীয় দলে ঢুকে যেতে পারে- এটা বলার মাঝে কোন সমস্যা নেই, ভুলও নেই। এমন অভিযোগ তখনই মানানসই হতো, যদি তামিম কায়েসকে স্টেপ আপ করে জাতীয় দলের স্কোয়াডে, মূল একাদশে নিয়ে ফেলতো! এর বাইরে অন্য কাকে নিয়ে কি বলছে, সেটা আসলে মেটার করে না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...