‘অযোগ্য’ শ্রীলঙ্কার সামনে অপ্রতিরোধ্য সিরাজ

আগুনের আঁচটা যেন ক’দিন হল কমেই গিয়েছিল। অন্তত এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে রীতিমত হারিয়ে খুঁজেছেন সিরাজ। নেপালের বিপক্ষে তিনটা উইকেট নিলেও ছিলেন খরুচে। এর বাইরে বাকি তিন ম্যাচে তাঁর উইকেট মাত্র একটি।

মোহাম্মদ সিরাজ যেন সত্যিই আগুন পুষেন। যে আগুনটা কখনও আইপিএলে দেখা গিয়েছে, কখনও বা দেখা গেছে গ্যাবায়, পুড়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপেও পুড়বে, সেই আশায় সিরাজকে বিশ্বকাপগামী দলেও রেখেছে ভারত।

তবে, আগুনের আঁচটা যেন ক’দিন হল কমেই গিয়েছিল। অন্তত এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে রীতিমত হারিয়ে খুঁজেছেন সিরাজ। নেপালের বিপক্ষে তিনটা উইকেট নিলেও ছিলেন খরুচে। এর বাইরে বাকি তিন ম্যাচে তাঁর উইকেট মাত্র একটি।

উইকেট শিকারী নামে খ্যাত যিনি, সেই সিরাজের কাছে তো এর চেয়েও অনেক বড় কিছুর প্রত্যাশা করে ভারত। সেই প্রত্যাশা তিনি মেটালেন একদম মোক্ষম সময়। ঠিক ঠিক ফাইনালের দিনে।

আর যেভাবে করেছেন সেটা অভাবনীয়! শ্রীলঙ্কা এদিন ব্যাটিং ব্যর্থতার চূড়ান্ত নিদর্শনই দেখিয়েছে। কলম্বোর ফাইনালে ১২ রানের মধ্যে তাঁরা হারায় প্রথম ছয়টা উইকেট। এত কম রানের মধ্যে ওয়ানডেতে এর আগে ছয় উইকেট হারানোর নজীর আছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে সর্বশেষটিও ১০ বছর আগের ঘটনা।

শ্রীলঙ্কার প্রথম ছয়টি উইকেটের মধ্যে পাঁচটিই নেন সিরাজ। নিজের করা প্রথম ১৫ বলের মধ্যেই পাঁচ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান।

২০০২ সালের পর থেকে এত কম বলে তো দূরের কথা ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেও কোনো ভারতীয়’র পাঁচ উইকেট পাওয়ার নজীর নেই। সিরাজ সেখানে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন। দ্বাদশ ওভারে গিয়ে পান ষষ্ঠ উইকেট।

সিরাজ এখানে খানিকটা কৃতীত্ব লঙ্কান ব্যাটারদেরও দিতে পারেন। একমাত্র দাসুন শানাকার আউটটা বাদ দিলে বাকি কোনো উইকেটই তিনি কোনো আনপ্লেয়েবল ডেলিভারিতে পাননি। উইকেটও ভারতীয় পেসারদের বড় কোনো সুবিধা দেয়নি।

সিরাজের রেকর্ড এখানেই শেষ নয়। তিনি এখন ওয়ানডেতে দ্রুততম সময়ে ৫০ নেওয়ার রেকর্ডে আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ৮৪৭ টি তম ওয়ানডে ডেলিভারিতে গিয়ে ৫০ উইকেট পেয়েছিলেন লঙ্কান রহস্য স্পিনার অজন্তা মেন্ডিজ। আর সিরাজ পৌঁছেছেন ১০০২ তম ডেলিভারিতে।

২১ রান দিয়ে ছয় উইকেট নেওয়া সিরাজই এখন ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক। ছাড়িয়ে গেছেন পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুসকে। ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার ‘রেকর্ড’ গড়ার দুয়ারেই চলে গিয়েছিল। যদিও, শেষ পর্যন্ত দলীয় ভাবে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে লঙ্কান বাহিনী।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে চারটা ডাক। দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছেন মাত্র দু’জন। গোটা ইনিংসে মোটে চারটা বাউন্ডারি পায় স্বাগতিকরা। এর মধ্যে, তিনটিই হাকিয়েছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা কুশল মেন্ডিস। ইনিংস স্থায়ী হয় মাত্র ১৫.৪ ওভারে।

ক্রিকেট ইতিহাস তো বটেই, খেলাধুলার ইতিহাসেই এত একতরফা ফাইনালের দেখা এর আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি না – সেটা বলা মুশকিল! সেই ভয়াবহ লজ্জার ইতিহাসটাই গড়ে দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

মজার ব্যাপার হল, এই ৫০ রানের ইনিংসটা শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বনিম্ন রান নয়। শ্রীলঙ্কা এর আগে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৪৩ রানে অল আউট হয় পার্লে। তবে, ভারতের বিপক্ষে এটাই লঙ্কানদের সর্বনিম্ন রান। আর ঘটনাটা এশিয়া কাপের ফাইনালে ঘটল বলেই, এর রেশ নিশ্চয়ই থাকবে বহুকাল!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...