সাকিবের করা বলটাকে কাট করে কাভার আর পয়েন্ট অঞ্চলের মাঝামাঝি দিয়ে সীমানার দিকে ঠেলে দিলেন দিমুথ করুনারত্নে। খুব সম্ভবত মাঠে থাকা প্রত্যেকটা ক্রিকেটার ধরেই নিয়েছিল যে বলটা সীমানা ছাড়িয়ে যাবা। তবে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা সোহান বলটার পিছনে ছুটলেন। শেষপর্যন্ত বাউন্ডারি লাইনে ঝাপিয়ে পড়ে দলের জন্য ঠিকই একটা রান বাঁচালেন। এই যে একটা রানও ছাড় না দেয়া মানসিকতা, এই যে ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন সেটাই নুরুল হাসান সোহানকে আলাদা করে।
বদলি ফিল্ডার হিসেবে নেমেছিলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হোক কিংবা টেস্ট সোহান জানেন এখানে প্রত্যেকটা রান ম্যাটার করে। লিটনের জায়গায় খানিকক্ষণ উইকেট কিপিংও করলেন। তবে লিটন ফিরে এলে তিনিও আর বসে থাকেননি। প্যাডটা পরে ব্যাট হাতে নিয়ে সাইড লাইন দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন ইনডোরের দিকে ব্যাটিং অনুশীলন করবেন বলে। কেননা সোহান জানেন তাঁর সামনে বড় সুযোগ আসছে।
মিরপুরে সকাল সকাল একটা গ্যালারি ভরে উঠেছিল স্কুলের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে। সাইড লাইন দিয়ে যখন সোহান হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন এই ছেলেমেয়ে গুলো যেন ভুলেই গেলেন মাঠে ম্যাচ চলছে। তাঁরা শুধু একটু কাছ থেকে সোহানকে দেখতে চান, সম্ভব হলে গ্যালারি থেকেই একটু ছুঁয়ে দেখতে চান। সোহানও হতাশ করেননি। একটু হাত নাড়াতেই পুরো গ্যালারিতে প্রতিধ্বনিত হলো, ‘সোহাআআন , সোহাআআন’।
সোহান এই ভালোবাসাটা আদায় করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ তিনি খেলেননি। তবুও উইকেটের পিছনে, কখনো ব্যাট হাতে সোহান একটা ভালোলাগার বৃত্ত তৈরি করে ফেলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে ব্যাটসম্যান সোহানকে বাংলাদেশ চায় সেটা অবশ্য এখনো দেখা যায়নি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাজে পারফর্মেন্সের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। তবে ঢাকা প্রিমিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগে পারফর্ম করে আবারো ফিরে এসেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য তিন ফরম্যাটের যে দল ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে সব ফরম্যাটেই আছে তাঁর নাম। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো আগামী কয়েকবছরের জন্য তিন ফরম্যাটেই সোহানকে নিয়ে পরিকল্পনা করছে টিম ম্যানেজম্যান্ট।
তবে সেজন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে সোহানকে পাশ মার্ক তুলতে হবে। সেজন্যই টেস্টের একাদশে না থাকলেও সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন সোহান। রোজই ইনডোরে গিয়ে ঘন্টাখানেক ব্যাটিং করে আসছেন একাই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মুহূর্তে ইনফর্ম সোহানকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের। এই ফরম্যাটে একজন ফিনিশারের অভাবে অনেক ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ফলে সোহানকে দিয়েই সেই অভাব মেটাতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে তাঁর কিপিংও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। উইকেটের পিছনে তাঁর উপস্থিতি পুরো দলকেই চাঙা করে।
এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন লিটন দাস। ফলে আস্তে আস্তে তাঁকে আরেকটু উপরে ব্যাট করতে পাঠানোর পরিকল্পনাও আছে। যেন বাইশ গজে আরেকটু বেশি সময় কাটাতে পারেন তিনি। আবার পাঁচ দিন কিপিং করার চাপটাও লিটনকে খুব বেশি দিন দিতে চাইবে না বাংলাদেশ দল। সেজন্যই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট দলে সোহানকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ওদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে খুব বেশি হেরফের করার সুযোগ নেই। তবে মাঝেমাঝেই একজন ফিনিশারের অভাব অনুভূত হয় এই ফরম্যাটেও। এখন সাত নাম্বারে খেলা আফিফকেও হয়তো আরেকটু উপরে খেলাতে চাইবে বাংলাদেশ। তবে মুশফিক ও রিয়াদ এই ফরম্যাটে যতদিন খেলছেন ততদিন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন। সেজন্য হয়তো আরো অপেক্ষা করতে হবে।
সবমিলিয়ে সামনের সময়গুলোতে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের নিয়মিত মুখ হতে পারেন সোহান। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান সোহানের একটু প্রমাণ করার অপেক্ষা। সোহান সেটা করতে পারলে তাঁকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে চায় বাংলাদেশ। ফলে পরিকল্পনা ও ভালোবাসা দুটোতেই খুব ভালো করেই আছেন তিনি।
আরেকটু যোগ করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি কিন্তু সোহানের জন্য খুবই পয়া। ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট হাফ সেঞ্চুরিটা তিনি পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজেই। এবারও কি তেমন কিছুরই দেখা মিলবে? উত্তর পাওয়ার জন্য সময়ের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।