আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের ২-১ গোলের জয়কে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আপসেট বলে মনে করছে ‘নেলসেন গ্রেসনোট’ নামক এক ডাটা কোম্পানি। সৌদি আরবের এই জয় পেছনে ফেলেছে ১৯৫০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জয়কে।
বিশ্বকাপের আপসেট গুলোর এই তালিকা করতে গ্রেসনোটের নিজস্ব র্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যেখানে টিমগুলো শক্তি, স্থান এবং ইতিহাস বিবেচনায় নেয়া হয়। গ্রেসনোটের মতে ৩৬ ম্যাচ ধরে অপরাজিত আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫১ নাম্বারে থাকা সৌদি আরবের জয়ের সম্ভাবনা ছিলো ৮.৭%। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ইতালির বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার জয় কিংবা ১৯৯০ বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ক্যামেরুন এর জয়ও গ্রেসনোটের তালিকার শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নিতে পারেনি।
- সৌদি আরব ২-১ আর্জেন্টিনা (৮.৭% সম্ভাবনা) ২০২২
র্যাংকিং এর ৫১ নাম্বারে থাকা সৌদি আরব মাঠে নেমেছিলো নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড ৩৭ ম্যাচে নিতে চলা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। খেলার ১০ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়ে মেসি জয়ের দিকেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সালেহ-আল-শেহরি এবং সালেম আল-দাওসারির গোল সৌদি আরবের ইতিহাসের সেরা জয়টি নিয়ে আসে।
- যুক্তরাষ্ট্র ১-০ ইংল্যান্ড (৯.৫% সম্ভাবনা) ১৯৫০
অংশ নেয়া প্রথম বিশ্বকাপই শিরোপার বড় দাবিবার হিসেবে খেলতে আসা ইংল্যান্ড মাঠে নেমেছিলো সেমি-প্রফেশনাল দল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বজায় রাখলেও জো গ্যাটজেন এর হেড থেকে করো গোলে ১-০ গোলের জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র।
- সুইজারল্যান্ড ১-০ স্পেন (১০.৩% সম্ভাবনা) ২০১০
২০০৮ ইউরো জয়ের পর ফেভারিট হিসেবেই দক্ষিন আফ্রিকা বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলো স্পেন। প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোলে ২২ টি শট নিয়েছিলো তারা যেখানে সুইসরা নিয়েছিলো ৬ টি শট। এমন আধিপত্যের পরেও গ্যালসন ফার্নান্দেজ এর দ্বিতীয়ার্ধের গোলে ১-০ গোলের জয় পায় সুইজারল্যান্ড। এই আপসেটকে পেছনে ফেলে সেই বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে স্প্যানিশরা।
- আলজেরিয়া ২-১ পশ্চিম জার্মানি (১৩.২% সম্ভাবনা) ১৯৮২
আলজেরিয়ার প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটিই আলজেরিয়ার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহুর্তে হয়ে আছে। লাখদার ব্যালেওমির জোড়া গোলে ইউরোপিয়ান পাওয়ার হাউজ পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারায় আলজেরিয়ানরা।
- ঘানা ২-০ চেক প্রজাতন্ত্র (১৩.৯%) ২০০৬
২০০৪ ইউরোর ফাইনালিস্ট চেক প্রজাতন্ত্রকে ২০০৬ বিশ্বকাপে অনেক দূর যাবে বলেই মনে হচ্ছিলো। প্রথম ম্যাচেও তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিলো। এদিকে ঘানা তাদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলো সেবার। আসামোয়া গেয়ান আর স্যুলে মুনতারির গোলে চেকদের ২-০ গোলে হারায় ঘানা। গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে চেকরা।
- উরুগুয়ে ২-১ ব্রাজিল (১৪.২% চান্স) ১৯৫০
ফাইনাল বিহীন একমাত্র বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে শিরোপা নিশ্চিতে স্বাগতিক ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিলো ড্র। প্রায় দুইলক্ষ সমর্থক এর সামনে প্রথমার্ধ পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পেপে স্কিয়াফিনো এবং এলসিডস ঘিগগিয়ার গোলে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জেতে উরুগুয়ে। ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় ধরা হয় এই ম্যাচটিকে।
- দক্ষিন কোরিয়া ২-০ জার্মানি (১৪.৪%) ২০১৮
২০১৪ বিশ্বকাপ শিরোপাধারী জার্মানি ২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ম্যাক্সিকোর বিরুদ্ধে হারলেও গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিন কোরিয়ার বিরুদ্ধে ২-০ গোলের হার ছিলো বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বড় আপসেট। অতিরিক্ত সময়ে করা কিম ইয়ং গুন এবং সন হিউ মিন এর গোলে ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবার গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় জার্মানি।
- ওয়েলস ২-১ হাঙ্গেরি (১৬.২%) ১৯৫৮
১৯৫৮ বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা দল হিসেবেই খেলতে এসেছিলো হাঙ্গেরি। প্রথম দেখায় ওয়েলস এর সাথে ড্র এর পর প্লে-অফ ম্যাচে একই দলের মুখোমুখি হয় তারা। ইভর আলকারখ এবং টেরি মেডুইন এর গোলে হাঙ্গেরিকে ২-১ গোলে হারায় ওয়েলস। সেই বিশ্বকাপের পর আবার বিশ্বকাপে অংশগ্রণ করতে ওয়েলসকে অপেক্ষা করতে হয় ২০২২ এর বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
- নর্দান আয়ারল্যান্ড ১-০ স্পেন (১৬.৫%) ১৯৮২
নর্দান আয়ারল্যান্ড ১-০ স্পেন (১৬.৫%) ১৯৮২ ১৯৮২ বিশ্বকাপ স্বাগতিক স্পেনের গ্রুপের শীর্ষে থেকে গ্রুপপর্ব শেষ করতে ড্রয়ের প্রয়োজন ছিলো। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করলেও গ্যারি আর্মস্ট্রং এর গোলে নর্দান আয়ারল্যান্ড এর ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয় অর্জন করে তারা।
- সেনেগাল ১-০ ফ্রান্স (১৭.৩%) ২০০২
২০০২ বিশ্বকাপ ফ্রান্স খেলতে গিয়েছিলো বিশ্বকাপ এবং ইউরো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। অন্যদিকে সেনেগাল তাদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলো। বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচে পাপা বউবা দিওপ এর গোলে পরাক্রমশালী ফ্রান্স এর বিরুদ্ধে জয় পায় সেনেগাল। সেই বিশ্বকাপে তারা কোয়ার্টার ফাইনাল অবদি যায়।অন্যদিকে গ্রুপের তলানিতে থেকে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।