গত বাইশ বা তেইশ বছর ধরে ২৬ মে আসা মানেই ক্রিকেট প্রিয় বাঙালির স্মৃতি পাড়ি দেয় সুদূর টনটনে। স্কোরবোর্ডকে অনেক সময় সত্যি গাধা বলে মনে হলেও এই দিনের স্কোরবোর্ডটা যেমন অনেক সুখ স্মৃতি দেয়, তোমনি তোলে অনেক প্রশ্নও। ভারতীয় ক্রিকেট সেই শুরুর দিন থেকে এক বিস্ময়। এমন কিছু কাজ বা কীর্তি তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যার উত্তর পাওয়া সত্যি খুব মুশকিল।
যে কোন কারণেই হোক আজকের বাংলার নব্য ক্রিকেটপ্রেমীরা মন থেকে ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলিকে খুব একটা নম্বর দিতে চায় না। কিন্তু যাঁরা এই সৌরভকে শুরুর দিন থেকে দেখেছেন সবাই এক বাক্যে একটা জিনিস মানেন।
তাঁর ক্রিকেট প্রতিভা নিয়ে কারও কোনদিনই কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু যেটা তাঁকে অনেকের থেকে আলাদা করে আজকের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে সেটা তাঁর কলজের জোর। ’৯২ থেকে ’৯৬ এর ফিরে আসার গল্প তো সবাই জানে। কিন্ত তারপরে?
প্রায় প্রতিনিয়ত যে যেভাবে পেরেছেন তাঁকে আঁচড়ে গেছেন (অন্তত একটা সময় পর্যন্ত ভীষন ভাবে), টেনে নামানোর চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু ওই অপরিসীম জেদ আর কলেজের জোর কে সম্বল করে তিনি তাঁর কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
এই ’৯৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন ততক্ষণে তাঁর ডোনাল্ড-পোলককে ঠেঙিয়ে ৯৭, টনটনের ১৮৩ এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো অলরাউন্ড পারফরমেন্স করা হয়ে গেছে; বলা ভাল সৌরভ আর রাহুল মিলে দলটাকে সুপার সিক্সে তুলে দিয়েছেন, এই অবস্থায় হ্যামস্ট্রিং সমস্যায় খেলতে পারলেন না পাকিস্তান ম্যাচ। দলের একাংশের তরফে প্রচার করে দেওয়া হলো ‘শোয়েবাটাইটিস’! আজকের দিনটাও কি এই নোংরা খেলার বাইরে ছিল?
রাহুল রান আউট হয়ে যখন ফিরে যাচ্ছেন তখনও ভারতের ইনিংস শেষ হতে ২৪টা বল বাকি। ক্রিজে সেট সৌরভ যিনি ব্যক্তিগত ১০০ রান পেরোনোর পর সেদিন প্রায় ২০০% স্ট্রাইক রেট এ পরের ৮৩ রান করেছিলেন। তো ভারতীয় ইনিংসের এই বাকি ২৪ বলে মোট ৪৯ রান ওঠে।
একেবারেই খুব খারাপ নয়। কিন্তু এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। ভারতের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের সেদিন এক অদ্ভুত কারণে মনে হয়েছিল, যিনি ৪৫ ওভার ধরে উইকেটে দাঁড়িয়ে এক অতি মানবিক ব্যাটিং করে চলেছেন, তিনি দ্রুত রান করতে পারবেন না। তাই তাঁরা ক্রিকেটের বেসিক শিক্ষা ভুলে গিয়ে নিজেরা বেশি করে স্ট্রাইক নিতে থাকলেন আর বিগ হিটের চেষ্টা চালিয়ে গেলেন।
ফল স্বরূপ ওই ২৪ বলের মধ্যে ১৫ টা বল তাঁরা খেললেন এবং ১৯ রান সংগ্ৰহ করেছিলেন। আর উল্টোদিকের সেই ব্যাটসম্যানটি মাত্র ৯টি বল খেলার সুযোগ পান (যার মধ্যে একটিতে আউট হন) এবং অতি ধীর গতিতে ওই ৯ বলে মাত্র ৩০ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হন!
সেদিনের ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারের (মূলত অজয় জাদেজা ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের) এহেন অদ্ভুত এবং মহান স্ট্র্যাটেজিতে মাঠের বাইরের নদীতে সমাধিস্থ হয় এক বাঙালির সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রথম এবং নিশ্চিত দ্বিশত-রানের সম্ভবনা।