সৌরভ গাঙ্গুলি এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি, ভারতের সেরা দুই অধিনায়ক। কে সেরা সেটা নিয়ে তর্ক করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। ভারতীয় ক্রিকেটে নিকট অতীতে যেসব অধিনায়ক দলকে নেতৃত্ব দিয়ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৌরভ এবং ধোনি। শুধু নিকট অতীতের সেরা অধিনায়কই নন তাঁরা, ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক বিবেচনা করতে গেলে তাঁদের নাম আসবেই। আর সেই থেকেই কে সেরা সেটা নিয়ে তর্ক হতেই পারে।
তাঁদের পরিসংখ্যান নিয়ে তর্ক করতে গেলে সৌরভের থেকে ধোনি ঢের এগিয়ে থাকবে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের আমূল পরিবর্তন করে দেয়া এই দুই অধিনায়ককে আপনি কখনোই পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করতে পারবেন না। আর পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করতে গেলে হয়তো সৌরভ এগিয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু গ্রেগ চ্যাপেলের ওই দুঃসময়ের ইতিহাসের কারণে হয়তো অধিনায়ক হিসেবে এতোটা আগাতে পারেননি তিনি।
সৌরভের অধিনায়কত্বের সময় নেয়া কিছু সিদ্ধান্তের ফলাফল সফল করেছিল ধোনির অধিনায়কত্বের প্রথম অংশ। অপরদিকে, ধোনির অধিনায়কত্বের সিদ্ধান্তে এখন এগিয়ে চলছে ধোনির উত্তরসূরি বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বের সেরা সময়।
সৌরভ গাঙ্গুলির টেস্ট অভিষেক ১৯৯৬ সালে। টেস্টে অভিষেকের তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজস্ব মহিমায়। সৌরভের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট অবাক করে দিয়েছিল ভারতীয় দলকে।
২০০০ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন সৌরভ। সৌরভের নেতৃত্বের আগে ভারতীয় দলের বিদেশ সফর মানে ছিল শিক্ষা সফরের মত কোনো এক বিষয়। বিদেশ সফরে ভারতীয় দল যাবে এবং কিছু ম্যাচ হেরে আবার দেশে ফিরে আসবে। ঘরে বাঘ, বাইরে বিড়াল অবস্থায় ছিল।
কিন্তু, সৌরভ অধিনায়ক হবার পর বিদেশের মাটিতেও চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে শুরু করে ভারতীয় দল। ২০০২,২০০৩ এবং ২০০৪ সালে যথাক্রমে ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্থানকে ঘরে মাঠে হারিয়ে দিয়ে ভারতীয় দল প্রমাণ করতে শুরু করে তাঁরা বিদেশের মাটিতেও জিততে পারে। আর সৌরভের নেতৃত্বেই শুরু হয় ভারতীয় দলের বিদেশের মাটিতে জয়ের সূচনা।
অধিনায়কত্বের সময়টা হয়তো আরও দীর্ঘ হতে পারতো কলকাতার যুবরাজের জন্য। কিন্তু তৎকালীন ভারতীয় দলের কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকায় অধিনায়কত্ব হারাতে হয় তাকে। এরপর আর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে না পারায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান সৌরভ।
সৌরভের অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল আইসিসির কোনো শিরোপা জিততে পারেনি, কিন্তু শিখেছে কিভাবে দেশের বাইরেও চোখে চোখ রেখে লড়াই করা যেতে পারে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি, ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতের যেকোনো অধিনায়কের চেয়ে সবার উপরে থাকবেন ধোনি। আইসিসির সকল শিরোপা জয়ী একমাত্র অধিনায়ক ধোনি। ভারতীয় দলকে জিতিয়েছেন আইসিসির সক্ল শিরোপা। কিন্তু এই শিরোপা জেতার কারিগররা কিন্তু তৈরি হয়েছেন প্রিন্স অফ কলকাতা সৌরভের অধিনায়কত্বে।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার কারিগরদের শুরুর সময়ের অধিনায়ক সৌরভ। সেই ভিত্তির উপর দাড়িয়েই জিতিয়েছেন এই শিরোপা। এর মানে এই নয় যে ধোনির কোনো অবদান নেই। মাঠে এবং মাঠের বাইরে দলকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সিদ্ধান্ত নিতে বেশ পটু ছিলেন ধোনি। এর কারণেই সহজেই জিততে পেরেছেন এই দুই শিরোপা।
২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতানোর কারিগরদের নিজ হাতে তৈরি করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় দল হয়েছিল বিশ্বের সেরা টেস্ট দল। তারাই ৪০ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাটিতে হোয়াট ওয়াশ করেছিল।
এত সাফল্যের মাঝে কে সেরা সেটা নির্ধারণ করা আসলেই বেশ কঠিন। সৌরভের সাফল্যের মূল ভিত্তি ছিল নতুন ক্রিকেটার। যাদেরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গড়ে তুলেছেন সৌরভ। মাঠের আক্রমণাত্মক আচরণের শুরুটা সৌরভের সময়েই। অপরদিকে, ধোনির সময়ে ভারতীয় দল ছিল বেশ অপ্রতিরোধ্য।
দেশ এবং দেশের বাইরে কোনো অংশেই কম ছিল না ভারতীয় দল। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে হয়তো ধোনি-সৌরভের মধ্যে কে সেরা সেটা বলা সম্ভব। কিন্তু তাঁরা ভারতীয় ক্রিকেটে যে অধিনায়কত্বের বীজ বুনে দিয়ে গিয়েছেন তাতে তাদের মধ্যে কে সেরা এটা নির্ণয় করাটা নেহায়েতই বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।