ওয়ানডে অধিনায়কত্বের দৌঁড়, পোস্টার বয় বনাম সিরিয়াল উইনার

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একেকটা সময় মানেই একেকটা নামের আধিপত্য। কপিল দেব থেকে শচীন টেন্ডুলকার, ধোনি থেকে বিরাট কোহলি—প্রতিটি যুগেই ভারত খুঁজে পেয়েছে নিজের পোস্টার বয়, নিজের নেতা।

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একেকটা সময় মানেই একেকটা নামের আধিপত্য। কপিল দেব থেকে শচীন টেন্ডুলকার, মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে বিরাট কোহলি—প্রতিটি যুগেই ভারত খুঁজে পেয়েছে নিজের পোস্টার বয়, নিজের নেতা।

রোহিত শর্মার অধ্যায় প্রায় শেষ হতে চলেছে। সামনেই অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ানডে সিরিজ, গুঞ্জন আছে—এই সিরিজ শেষে হয়তো অবসরের পথে হাঁটবেন হিটম্যান। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ভারতীয় ওয়ানডে দলের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।

আর সেখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দুই নাম—শুভমান গিল আর শ্রেয়াস আইয়ার। গিলকে অনেকেই ইতোমধ্যে ‘নেক্সট বিগ থিঙ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে আইপিএলে সাফল্যের পর সাফল্য এনে দিয়ে আইয়ারও পেশ করেছেন শক্ত দাবি। তাহলে, কাকে বেছে নেবে ভারত?

শুভমান গিলকে নিয়ে আশার কারণ শুধু তাঁর ব্যাটিং নয়। ভারতীয় ক্রিকেট মানেই একধরণের ‘সুপারস্টার কালচার’। যেমন শচীনের পর ধোনি, ধোনির পর বিরাট, আর এখন সেই মঞ্চ তৈরি হচ্ছে গিলের জন্য।

গিল মানে ব্র্যান্ড, গিল মানে গ্ল্যামার। বোর্ডের জন্য তিনি আগামী দশকের ‘ফেস অফ দ্য নেশন’ হতে পারেন—যেভাবে তাঁর আইডল কোহলি একসময় হয়ে উঠেছিলেন।

কিন্তু, গিলকে আলাদা করে রাখছে তাঁর মানসিকতা। ইংল্যান্ড সফরে যখন ভারত বারবার চাপে পড়েছে, তখন গিলের ‘নেভার সে ডাই’ মনোভাব সামনে এসেছে। মাঠে তিনি শুধু রানই করেননি, তরুণদের অনুপ্রাণিতও করেছেন। সেই আক্রমণাত্মক আত্মবিশ্বাসই হয়তো তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে দেবে।

অন্যদিকে শ্রেয়াস আইয়ারের গল্পটা ভিন্ন। তিনি হয়তো গিলের মতো ‘পোস্টার বয়’ নন, কিন্তু নেতৃত্বে তাঁর রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ২০২০ সালে তিনি দিল্লি ক্যাপিটালসকে তুলেছিলেন আইপিএল ফাইনালে। ২০২৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ভাঙেন দীর্ঘ দিনের খরা। কেকেআরকে জেতান শিরোপা।

২০২৫-এ পাঞ্জাব কিংসকে এক দশক পর পৌঁছে দেন ফাইনালে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন।

অর্থাৎ, যেখানে গিল এখনো নেতৃত্বের পথে শিখছেন, সেখানে আইয়ার ইতিমধ্যেই প্রমাণিত ‘সিরিয়াল উইনার’। বহু ফ্র্যাঞ্চাইজি সামলানো, বিভিন্ন ড্রেসিংরুমের অভিজ্ঞতা তাঁকে দিয়েছে বিশেষ এক সুবিধা। ভারতের যদি এখনই কার্যকর সমাধান লাগে, তাহলে শ্রেয়াস আইয়ারই নি:সন্দেহে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

একদিকে আত্মবিশ্বাসী, তরুণ শুভমান গিল—যিনি আগামী দশকের জন্য ভারতীয় ক্রিকেটের ব্র্যান্ড হতে পারেন। অন্যদিকে অভিজ্ঞ, সাফল্যের ঝুলিতে ভরা শ্রেয়াস আইয়ার—যিনি এখনই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাতে পারেন।

তাহলে সিদ্ধান্তটা কেমন হতে পারে? যদি ভারত শুধু ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত একটি স্বল্পমেয়াদি সমাধান চায়, তবে শ্রেয়াস আইয়ার সঠিক নাম। কিন্তু, যদি তারা দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ গড়তে চায়, তবে শুবমান গিল ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

কে হবেন রোহিত-পরবর্তী ভারতের ওয়ানডে অধিনায়ক—বিরাট ব্র্যান্ড ভ্যালুর পোস্টার বয় গিল, নাকি কার্যকর সিরিয়াল উইনার আইয়ার? সময়ই দেবে তার উত্তর।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link