‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- ফুটবলের সাথে এই তকমা যেন জুড়ে আছে, জুড়ে রইবে অন্ততকাল। চারটি বছরের অপেক্ষা। এবার তো হয়েছে আরও দীর্ঘায়িত। কাতারের বিশ্বকাপ হবে। গরমটা তো কমতে হবে। তীব্র গরমে তো আর ফুটবলটা জমে না। তাই অপেক্ষার পালাটা একটু লম্বাই হচ্ছে এবার। তাতে অবশ্য ক্ষতির থেকে লাভের পাল্লাটাই ভারি। খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বিশ্লেষণের সুযোগটা পাওয়া যাবে।
এতে অবশ্য খানিকটা মধুর সমস্যাতেই পড়লেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম। গেল বারের চ্যাম্পিয়ন দল। এবারের তাঁদের দিকে বাড়তি নজরই থাকবে সবার। চ্যাম্পিয়নরা ঠিক চ্যাম্পিয়নদের মত পারফরম করতে না পারলে তো হতাশার মহাসমুদ্রে ডুব দিতেই হবে সমর্থকদের। তাইতো নিজের সেরা একাদশটা নিয়েই নামতে চাইবেন দেশম। তাঁর একাদশটা ঠিক কেমন হতে পারে সেটা নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা।
- গোলরক্ষক
গোলবারের তিন কাঠির নিচে অধিনায়ক হুগো লরিসের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। তাঁকে হয়ত বদল করতে চাইবেন না কোচ। তবে পরিসংখ্যান আর সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের দিক থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন এসি মিলানের গোলরক্ষক মাইক মাইগনান। নিজের পারফরমেন্সের ধারা অব্যহত রাখতে পারলে হয়ত শুরুর একাদশে দস্তানা হাতে দেখা যেতে পারে মাইক মাইগনানকে। অন্তত গ্রুপ পর্বের ম্যাচে। তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে লরিসকেই এগিয়ে রাখবেন দিদিয়ের।
- রক্ষণ
রক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তার সুযোগ নেই। তবে কাদেরকে নিয়ে শুরু করবেন ম্যাচ দেশম সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেখানটায় অটোচয়েজ রাফায়েল ভারান। কোচের পছন্দের ফুটবলারদের একজন। তাছাড়া সাম্প্রতিক ফর্মও তাঁর পক্ষে। অন্যদিকে তাঁর সঙ্গী হবার দৌড়ের তালিকাটা বেশ লম্বা। নতুন করে প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন উইলিয়াম স্যালিবা। আর্সেনালের হয়ে ভাল ছন্দেই রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে জুলস কুন্দের বিষয়টা এখনও দোদুল্যমান। কারণ তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম। সেদিক থেকে এগিয়ে থাকবেন হয়ত প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের প্রেসনেল কিম্পেম্বে। আবার যদি চারজনের ব্যাকলাইন নিয়ে মাঠে নামেন দেশম তাহলে লেফট ব্যাক পজিশনটা নিয়ে আলাদাভাবে নিশ্চয়ই চিন্তা করতে হবে ফ্রান্স বসের। সেদিকেও একাদশে এমনকি দলে সুযোগ পাওয়ার তালিকাটা খানিক লম্বাই।
রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ফার্ল্যান্ড মেন্ডি যেমন আছেন তেমনি আছেন থিও হার্নান্দেজ। অন্যদিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা লুকাস ডিগনিও রয়েছেন লেফট ব্যাক পজিশনটা নিজের করে নেওয়ার অপেক্ষায়। তবে শেষ অবধি কার হবে ঠাই সেটা সময় বলে দেবে। মোটামুটি ফ্রান্সের রক্ষণে এই কয়েকজনের মধ্য থেকেই কাউকে না কাউকে দেখা যাবে। তবে তালিকাটা বড় করলে সেখানে ডায়োট উপামেকানো ও ফোফানাও জায়গা করে নিতে পারেন।
- মধ্যমাঠ
এখানটায় কোচকে বেছে নিতে হবে হয় তারুণ্য নতুবা অভিজ্ঞতা। কেননা ফ্রান্সের মিডফিল্ডে রয়েছে দারুণ গভীরতা। এখানে পরীক্ষিত পারফরমাররা যেমন স্থান পাচ্ছেন ঠিক তেমনি স্থান পাচ্ছেন তরুণ সম্ভাবনাময় সব ফুটবলার। সেদিক বিবেচনায় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে দেশমের সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড় এনগোলো কান্তে। যদিও তাঁর শারীরিক সক্ষমতা আর ইনজুরির কথা মাথায় রেখে বিকল্প খেলোয়াড়ের সন্ধান করতেই হবে। সে সন্ধানের কাজটা সহজ করে দিচ্ছে তরুণ অরিয়েলিয়েন শুয়েমেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর স্ট্রান্সফার নিয়ে সরগরম ছিল ইউরোপীয় ফুটবল পাড়া। আর এখন রীতিমত তিনি নিজের পারফরমেন্স দিয়ে জমিয়ে ক্ষির করছেন বিষয়টা। অন্যদিকে নিজের ফর্ম হারিয়ে খোঁজা পগবার ঠাই হয়েছে জুভেন্টাসে। তবে সেখানে গিয়েও যেন স্বস্তি নেই এই বিশ্বকাপ জয়ী তারকার। তাঁকে যেতে হবে অস্ত্রপচার টেবিলে। দুইমাসের জন্যে তিনি ছিটকে যেতে পারেন ফুটবল মাঠ থেকে।
সেদিক বিবেচনায় তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেন কেবল এডওয়ার্ডো কামাভিঙ্গা। তরুণ এই ফুটবলার ক্রমশ রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠে জায়গা করে নিচ্ছে। যখনই তিনি সময় পেয়েছেন নিজের প্রতিভার ডালপালা মেলে ধরেছেন। তিনি হয়ত কাতার বিশ্বকাপের বিমানে চড়ে বসবেন। তাছাড়া ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ম্যাচ গুলোতে অলিম্পিক মার্শেই ক্লাবের মিডফিল্ডার মাত্তেও গেনডৌজি খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তিনিও থাকতে পারেন মধ্যমাঠে।
- আক্রমণ
আক্রমণে দুইটি স্থান খুব সম্ভবত ফিক্সড। এক কিলিয়ান এম্বাপ্পে আর দুই করিম বেনজেমা। এই দুই ফুটবলারকে বাদ রেখে ফ্রান্সের আক্রমণ সাঁজনোর প্রশ্নই আসে না। তবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় অ্যান্তোনিয়ো গ্রিজম্যানের প্লেয়িং টাইম। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ধারে খেলছেন তিনি। ঠিক খেলছেন বলা যায় না। সময় পার করছেন বেঞ্চে বসে। গ্রিজম্যান দিদিয়ের দেশমের বেশ প্রিয় খেলোয়াড়দের একজন। তবে তাঁকে অন্তত দলে থাকতে হলে পারফরম করতেই হবে।
কেননা তাঁর বদলে অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রিস্টোফার এনকুনকুর মত তরুণ ফুটবলাররা। তাছাড়া ওসমান ডেম্বেলেও ইনজুরির বেড়াজাল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। বার্সেলোনার হয়ে পারফরম করছেন প্রতিনিয়ত। তিনি ফিরছেন স্বরুপে আভাসটা ঠিক তেমন। অন্যদিকে বায়ার্ন মিউনিখে খেলা কিংসলে কোমানও থাকছেন একাদশে জায়গা দখল করবার দৌড়ে।
এরা ছাড়াও অভিজ্ঞ নাবিল ফেকির আর থমাস লেমারও রয়েছে নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার দৌড়ে। তারাও হয়ত খুব করে চাইবেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে মাঠ মাতাতে। তবে দিদেয়ের দেশম নিশ্চয়ই নিজের পরিকল্পনার ছক আঁকতে শুরু করেছেন। নজরও রাখছেন ইউরোপের সব লিগগুলোতে। কেমন একাদশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নরা খেলতে নামছে তাঁর জন্যে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে ২৩ নভেম্বর ২০২২ অবধি।