১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জিতেছিল আন্ডারডগ হিসেবে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। ব্যাট হাতে তার ভূমিকা ছিল ফিনিশারের আর বল হাতে ডেথ বোলারের! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। ব্যাটিং দিয়ে নয়, সেবারের আসরে স্টিভ ওয়াহ নজর কেড়েছিলেন দুর্দান্ত ডেথ বোলিং দিয়ে।
- ঘটনা এক
স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে মাত্র এক রানের রুদ্ধশ্বাস জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে অজিরা। ভারতের টার্গেট ছিল ২৭১। শেষ ওভারে লাগত মাত্র ছয় রান।
বোলিংয়ে এলেন স্টিভ ওয়াহ। প্রথম চার বল থেকে একটা রান আউটসহ আসল চার রান। শেষ দুই বলে প্রয়োজন দুই রান। কিন্তু পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে গেলেন ভারতের শেষ ব্যাটসম্যান মনিন্দর সিং। ক্লোজ ম্যাচে অজিদের জয়ের নায়ক ‘ডেথ বোলিং বিশেষজ্ঞ’ স্টিভ ওয়াহ!
- ঘটনা দুই
ট্রান্স তাসমান ক্লাসিক। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটা নেমে এসেছিল ৩০ ওভারে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম কার্টেল ওভারের ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়াল ২০০। শেষ ওভারে জয়ের সমীকরণ চার উইকেট হাতে রেখে সাত রান। অপরাজিত ৫৮ রান নিয়ে স্ট্রাইকে আছেন মার্টিন ক্রো, ওদিকে বল হাতে প্রস্তুত ‘দ্য আইসম্যান’ স্টিভ ওয়াহ।
প্রথম বলটা ছিল কিছুটা খাটো লেন্থের ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার। কাভারের ওপর দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে মারলেন ক্রো; শটটি হাইট পেল কিন্তু ডিসট্যান্স পেল না। ফলে ধরা পড়ে গেলেন জিওফ মার্শের বিশ্বস্ত হাতে।
পরের বলটা ছিল নিখুঁত ব্লক হোল ইয়র্কার; ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলেন উইকেটরক্ষক ইয়ান স্মিথ (বর্তমানে যিনি ধারাভাষ্যকার)। পরের বলে ১ রান নিয়ে ‘নির্ভরযোগ্য’ মার্টিন স্নেডেনকে স্ট্রাইক দিলেন উইলি ওয়াটসন। তিন বলে ছয়!
চতুর্থ বলটা ছিল স্লোয়ার। ব্যাটে-বলে সংযোগ হলেও ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না স্নেডেন! উল্টো দুই রান নিতে গিয়ে হলেন রান আউট!
শেষ দুই বলে লাগত ছয় রান। কিন্তু ওয়াটসন আর চ্যাটফিল্ড মিলে করতে পারলেন মাত্র দুই! স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচে তিন রানের নাটকীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল অ্যালান বোর্ডারের দল। জয়ের নায়ক আবারও সেই স্টিভ ওয়াহ!
- ঘটনা তিন
ফাইনালে ইংল্যান্ডের টার্গেট ছিল ২৫৪। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ২০ রান। স্ট্রাইকে ছিলেন আগের ওভারেই টুর্নামেন্টের সেরা বোলার ক্রেইগ ম্যাকডারমটকে ২ চার ও ১ ছক্কা হাঁকানো ‘বিগ হিটার’ ফিলিপ ডিফ্রেটাস।
কিন্তু, স্টিভ ওয়াহর ‘আইস কুল’ নার্ভ এবং বুদ্ধিদীপ্ত ভ্যারিয়েশনের কাছে হার মানতে হল তাঁকে। ৪৯তম ওভারে স্টিভ দিলেন মাত্র দুই রান, ডিফ্রেটাসের উইকেটসহ! ম্যাচ তখন অস্ট্রেলিয়ার পকেটে। শেষ ওভারে ১৮ রানের ‘প্রায় অসম্ভব’ সমীকরণটা অনেক চেষ্টা করেও আর মেলাতে পারেনি ইংলিশরা।