রঙিন পারফরম্যান্সে ব্যর্থতার দাগ

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টান টান উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তান। ফাইনালে উঠতে ১১ বলে অজিদের প্রয়োজন ২২ রানের। স্ট্রাইকে ম্যাথু ওয়েড, আরেকপ্রান্তে মার্কাস স্টোয়েনিস। ঠিক ওই মূহুর্তে শাহীন আফ্রিদির করা পরের বলটা মিস টাইমিংয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন ওয়েড।

খানিকটা দৌড়ে এসে সহজ ক্যাচটা তালুবন্দি করতে পারেননি হাসান আলী। ব্যাস, ওই যাত্রায় জীবন পেয়ে যান ওয়েড। এরপরই পর পর তিন ছক্কায় ওয়েডের বাজিমাত। ওয়েডের হিরো বনে যাওয়ার দিনে সেমিফাইনালের ভিলেন বনে যান হাসান আলী।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাসান আলীর ভুলে জয়ের আশা জাগাতে পারেনি পাকিস্তান। সেই হাসান আলী চার বছর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পাকিস্তানকে ফাইনালে তুলেছিলেন।

ভারতের বিপক্ষে আইসিসি টুর্নামেন্টে জয়ের দেখাই মিলছিল না পাকিস্তানের। এরপর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল। অবিশ্বাস্য ভাবে ভারতকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় করে পাকিস্তান। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফরম করে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন পাকিস্তানের হাসান আলী। পুরো আসর জুড়ে অনবদ্য পারফরম করে পাকিস্তানের এই পেসার।

অন্যান্যদের মতই অলিগলির ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠা হাসানের। তবে ভাইয়ের সহযোগিতায় ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে সুবিধা হয় হাসানের। ২০০৯ সালে হাসান আলীর ভাই আতাউর রহমান আলী একটা সিমেন্টের পিচ তৈরি করেন। সেখানেই অনুশীলন করতেন হাসান।

সেখান থেকে ধীরে ধীরে ঘরোয়া ক্রিকেটে উঠে আসা। ক্রিকেটের প্রতি এতটাই ঝোঁক ছিল যে অভিষেকের আগেও মাঠে নেটের পাশেই একটা রুমে থাকতেন তিনি। বেশিরভাগ সময় নেটেই অনুশীলন করে পার করতেন হাসান।

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা। টি-টোয়েন্টি অভিষেকও একই বছর। বলে গতি কম থাকলেও বেশ ভাল ইনস্যুইং করতে পারতেন তিনি। অভিষেকের এক বছরের মাথায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম করে নজর কাড়েন হাসান। ওই বছরই পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন এই পেসার। সেই সাথে ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে উঠে আসেন শীর্ষে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে সফলতার ছোঁয়া পান হাসান। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরষ্কার জেতেন এই পেসার।

২০১৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় হাসান আলীর। রঙিন পোশাকের সফলতার ছাপটা সাদা পোশাকেও আঁকেন হাসান। ২০২১ সালে টেস্ট ক্রিকেট বল হাতে উড়ন্ত ফর্মে ছিলেন হাসান। ওই বছর ৮ টেস্টে পাঁঁচবার ফাইফর শিকার করেন তিনি। ছিলে বছরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সেরাদের সাথে।

তবে বছর খানেক ধরে রঙিন পোশাকে বল হাতে আগের সেই ধারটা নেই হাসানের। বরংচ ভিন্নভাবে আলোচনায় থাকছেন তিনি। উইকেট পাওয়ার পর ভিন্নধর্মী উদযাপন ও উদযাপন পরবর্তীতে আঘাত পেয়ে ট্রলেরও শিকার হয়েছেন হাসান। এরপর ২০২১ বিশ্বকাপের সেই দুঃসহনীয় স্মৃতি। একটা ক্যাচ মিস, হাজার খানেক ট্রল; ফাইনালে উঠতে না পারার বিষাদ ব্যাথা।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি ধারাবাহিক পারফরমার। মোহাম্মদ আসিফ কিংবা মোহাম্মদ আমিরের মত প্রতিভার ঝুলি নিয়ে আগমন হয়নি হাসান আলীর। সীমাবদ্ধতা কখনোই তিনি বুঝতে দেননি। চেষ্টা করেছেন লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে ইনস্যুইং দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের ধরাশায়ী করতে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ক্যাচ মিস কিংবা উইকেটের পর আগ্রাসী উদযাপন নিয়ে আপনি ট্রল করলেই পারেন। অবশ্য পেসারদের মাঝে আগ্রাসন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে, এসব কিছু ছাপিয়ে গেল পাঁচ বছর পাকিস্তানের সবচেয়ে ধারাবাহিক ও অন্যতম সেরা পারফরমার যে তিনি সেটা মানতেও হয়তো দ্বিধা করবেন না। বেশ কিছু পেসারের ভীড়ে নিজের কাজটা ঠিক করে যাচ্ছেন এই পেসার।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে সফলতার পথে হাঁটলেও হঠাৎ করেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন হাসান। অবশ্য বয়সটা এখনও মাত্র ২৮! ক্যারিয়ারে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। তরুণ উঠতি পেসারদের ভীড়ে লম্বা সময় দলে টিকে থাকতে হলে ধারাবাহিকতার বিকল্প রাস্তাও যে নেই – সেটা ভাল করেই জানেন এই তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link