খেলার মাঠে ‘সাডেন ডেথ’ আতঙ্ক

বলের পিছনে ছুটতে ছুটতে হঠাতই মাঠে লুটিয়ে পড়লেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। এরপর বার্সেলোনা স্ট্রাইকার সার্জিও অ্যাগুয়েরোও খেলার মাঝে খানিক অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে জানা গেল ফুটবল মাঠের আর ফেরা হবে না তাঁর। এর মধ্যেই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান আবিদ আলীও ব্যাট করতে করতে খানিক বুকে ব্যাথা অনুভব করছিলেন। আশঙ্কা আছে তিনিও আর কখনো মাঠে না ফেরার। খেলার মাঠে এমন সব উদাহরণ যেনো আমাদের মাঝে খানিকটা ভয়ও ছড়িয়ে দিচ্ছে।

খেলোয়াড়রা সাধারণ মানুষের থেকে অনেক বেশি ফিট হন। ফলে আমাদের একটা ধারণা ছিল তাঁদের এমন করে হঠাত অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা কঠিন ব্যাপার। এরিকসন কিংবা আবিদ আলীদের এমন ঘটনা দেখে আমাদের বুক কেপে উঠেছিল তাই। এতটা ফিট থাকার পরেও কেন এমন পরিণতি?

এরথেকে বের হবার উপায় কী কিংবা কেনই বা হচ্ছে এমনটা। সেসব প্রশ্ন নিয়েই হাজির হয়েছিলাম বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরির কাছে। মিরপুরে নিজের কাজ শেষে ফেরার সময় হাঁটতে হাঁটতে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন। অনেক প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছেন এই চিকিৎসক। তবুও কোথাও একটা আক্ষেপের সুর।

উপরের তিনটি ঘটনাই ঘটেছে ম্যাচ চলাকালীন। ম্যাচ চলতে থাকা সময়ে খেলোয়াড়দের শারীরিক চাপ অনেক বেশি থাকে। খুব দ্রুত হৃদস্পন্দন হতে থাকে। এই দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়াটাই আসলে কাল হয়ে দাঁড়ায়। মূল ব্যাপারটা ঠিক কী এবং কেন হয় সেসবই খুলে বলছিলেন ডাক্তার দেবাশীষ, ‘এই ব্যাপারটাকে আমরা আসলে বলি ‘সাডেন ডেথ’। খেলা চলাকালীন সময়ে খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল এক্সট্রাশন অনেক বেশি থাকে। ফলে খুব দ্রুত হার্টপাম্প হতে থাকে। সেজন্যই মূলত এই ধরণের অ্যাটাকা হয় কারো কারো। তবে এই রেটটা খুবই কম। হয়তো দশ হাজার জনের মধ্যে একজনের এমন হয়।’

এর পিছনে অবশ্য আরেকটি কারণও জানিয়েছেন এই ডাক্তার। তিনি বলেন, ‘অনেকের ব্রেইনের কিছু রক্তনালী একটু উইক হয়। অতিরিক্ত চাপ কখনো কখনো সেই দুর্বল নালী গুলো নিতে পারেন। তখনও এমন হতে পারে।’

কারণটা জানা গেল। তবে ভয়টা তো এখনো আছে। এটা কী আগে থেকে বোঝার কোনই উপায় নেই? কিংবা মাঠে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্যই আমরা কী করতে পারি। আমাদের ক্রিকেটারদের যদি কখনো এমন হয় তাহলে আমরা কী করবো। এসব প্রশ্নই একটানা করে গেলাম বিসিবির এই চিকিৎসককে।

তিনি জবাবে বললেন, ‘এটা কার হবে আগে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই। তবে একটা টেস্ট করিয়ে নিলে ভালো। যেমন ফিফা এখন সব ফুটবলারদের কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং করার নিয়ম করেছে। এতে করে আগে থেকে একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব। তবে অন্য খেলা গুলোতে এখন পর্যন্ত এমন কিছু করা হচ্ছেনা। তবে সব খেলোয়াড়দের টেস্টটা করে ফেলা ভাল।’

ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই সমস্যা নিয়ে আসলে খুব বেশি কিছু করার নেই। শুধুমাত্র আগে থেকে কার্ডিয়াক স্ক্রিনিংটা করে রাখা যায়। এছাড়া কখন কোন খেলোয়াড়ের এমন হবে সেটা বলা খুব মুশকিল। আগে থেকে নাকি বোঝার কোন উপায়ই নেই।

এছাড়া করোনা আসার পর এমন তিনটা ঘটনা ঘটায়, আমাদের অনেকের ধারণা করোনার কোন প্রভাব আছে কিনা। অনেকেই আবার করোনার টিকাকেও এরজন্য দায়ী করেন। সত্যিই এই সাডেন ডেথে করোনার কোন প্রভাব আছে কিনা এমন প্রশ্নও করেছিলাম দেবাশীষ চৌধুরির কাছে। তিনি বললেন, ‘এটা আমাদের ভুল ধারণা। করোনার সাথে এটার কোন রকম সম্পর্কই নেই। এটা পুরোটাই একটা ফিজিক্যাল ব্যাপার। শুধু অতিরিক্ত চাপে হার্টপাম্পটা বেড়ে গেলেই অনেকে সেটা নিতে না পেরে এমন হয়। এরবেশি কিছুই না। অন্য কোন কিছুর সাথের এটার সম্পর্ক নেই।’

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link