সুজানা উইলসন বেটসকে একজন সত্যিকারের ‘স্পোর্টিং কুইন’। সারাবিশ্বে তিনি সুজি বেটস নামে পরিচিত। যেমন দুর্দান্ত ছিলেন বাস্কেটবলে, তেমনি ব্যাট হাতে ঝড় তুলতেন বাইশ গজেও। সুজি বেটস অন্য সবার থেকে আলাদা। কারণ নিউজিল্যান্ডের এই তারকা একইসঙ্গে বাস্কেটবল এবং ক্রিকেট উভয় খেলায়ই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন।
সুজির বড় দুই ভাই টম এবং হেনরি দুইজনই ক্রিকেট খেলতেন। সুজির ছোট বোন অলিভিয়া ওটাগোর হয়ে নেটবল খেলেন। শৈশবে সুজি বেটসের ভাইদের সাথে ডানেডিনে বাড়ির উঠোনে খেলতে খেলতে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়। সেই ব্যাকইয়ার্ড ক্রিকেটার থেকে তিনি আজ বনে গেলেন বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ভালোবেসে সুজি বেটসকে ডাকে ‘সুপার সুজি’ বলে। বাস্কেটবলটাও বেশ মন দিয়েই খেলতেন সুজি। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে নিজ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুজি বেটস।
২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয়। আর তাঁর টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল ১০ই আগস্ট ২০০৭-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। চেয়েছিলেন ক্রিকেট ও বাস্কেটবল দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর জন্য জাতীয় পর্যায়ে দুটোই সমানতালে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়লো। যার ফলে তাঁকে যেকোনো একটা বেঁছে নিতেই হতো।
২০১২ সাল সুজির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কারণ ২০১২ অলিম্পিকে নিউজিল্যান্ড জাতীয় নারী বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক মনোনীত করা হয়েছিল। তখন সুজি বাস্কেটবল বাদ দিয়ে ক্রিকেটকেই বেঁছে নিয়েছিলেন। তাঁরপর থেকে পুরো মনোনিবেশ করলেন ক্রিকেটে। এবং ক্রিকেটবিশ্বকে আলোকিত করেছেন আপন মহিমায়।
মজার ব্যাপার হলো সুজি বেটস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (ছেলে – মেয়ে নির্বিশেষে) সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের জায়গাটা ধরে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। সাম্প্রতিক এশিয়া কাপে রোহিত শর্মা সুজিকে টপকে দিয়ে সেই রেকর্ডটি ভেঙেছেন কেবল। রোহিতের ঝুলিতে এখন ৩৫৪৮ রান আর ওইদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সুজির ঝুলিতে আছে ৩৫৩১ রান।
সুজি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশী বোলিংটাও পারেন বেশ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৪২টি ওয়ানডে এবং ১৩১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টিতে একটি শতরান ও ২২ টি অর্ধশতক রয়েছে তাঁর। ওয়ানডেতে হোয়াইট ফার্নসদের অংশ হয়ে করেছেন ১২ টি সেঞ্চুরি এবং ২৮ টি অর্ধসেঞ্চুরি।
২০১৩ সালে একদিনের আন্তর্জাতিকে বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন সুজি বেটস। ২০১৫ সালেও আইসিসি বর্ষসেরা নারী ওডিআই ও টি২০আইয়ের সেরা খেলোয়াড়ের তকমাটা নিজের নামের পাশে লেখেন সুপার সুজি। করেছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় নারী দলের অধিনায়কত্বও।
সুজি একবার বলেছিলেন, ‘আমি যদি এক বা দুটি মেয়েকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলতে অনুপ্রাণিত করতে পারি, তা আমার জন্য দারুণ মূল্যবান। আমি সম্ভবত একজন রোল মডেল হতে চাই তাঁদের জন্য।’
সুজি যে কেবল নিউজিল্যান্ড নয় গোটা বিশ্বক্রিকেটেই নারীদের জন্যই একজন রোল মডেল হতে পেরেছেন, তা হয়তো তিনি নিজেও জানেন না। ৩৫ বছর বয়সী সুজি এখনো নিউজিল্যান্ডের হয়ে বাইশ গজে বোলারদের তুলোধুনো করে যাচ্ছেন, মাঠে ঝড় তুলে যাচ্ছেন। সুপার সুজি আরও অনেকদিন খেলে যাক। ক্রিকেটকে, বিশেষ করে নারী ক্রিকেটকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলুক।