শুভ্রতায় সদা উজ্জ্বল তাইজুল

সমূহ সম্ভাবনা ছিল, দিনের প্রথম ঘন্টায় খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার। তবে তৃতীয় দিনের প্রথম দুই সেশনে দাপটা দেখিয়েছে আইরিশ ব্যাটাররা। প্রথমত হ্যারি টেক্টরের ফিফটি, এরপর লরকান টাকারের শতক শেষ বেলায় অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অর্ধশতক। তৃতীয় দিনটা পুরোপুরি নিজেদের দখলেই রেখেছিল আয়ারল্যান্ডের বোলাররা।

তবে এতসবকিছুর ভীরেও টাইগারদের হয়ে লড়াইটা চালিয়ে গেছেন তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে তাইজুল বাগিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তাঁর কল্যাণেই দ্রুত সাজঘরে ফিরেছিল আইরিশদের গোটা ব্যাটিং ইউনিট। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশকে ১৫৫ রানের লিড নিতে সহয়তা করেছিল। আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও তেমন কিছুরই আভাস দিচ্ছিলেন তাইজুল।

দ্বিতীয় দিনের শেষ ঘন্টায় টপাটপ চার উইকেট নেই আইরিশদের। শুরুটা সাকিবের হাত ধরে। তবে সমানতালে ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন তাইজুল ইসলামও। তিনিও নিজের পকেটে পুরেছিলেন দুইখানা উইকেট। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল পিচ করিয়ে তা ভেতরের দিকে বাক খাওয়ানোর কাজটুকু করেন আঙুলের কারসাজিতে। তাতেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে জেমস ম্যাককলম আউট।

এরপর আইরিশ অধিনায়ককে খানিকটা চমকে দিয়ে বোল্ড আউট করেন তিনি। ধারণা করা হয়েছিল তৃতীয় দিনের রৌদ্যজ্জ্বল সকালে তাইজুল আরও বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠবেন। হয়ত নিজকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশনে নামবেন তাইজুল। তবে সেটা হতে দেয়নি টেক্টর, টাকাররা। তবে অদম্য তাইজুলকে দমিয়ে রাখা দায়।

তিনি তৃতীয় দিনে নিজের ঝুলি সমৃদ্ধ করেন আরও দুইটি উইকেট নিয়ে। এরমধ্যে ভয়ংকর হয়ে ওঠা হ্যারি টেক্টরকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বা-হাতি এই স্পিনার। ভাঙেন টেক্টর আর টাকারের জুটি। যেই জুটিটা বাংলাদেশের জন্যে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছিল ক্রমশ। ৫৬ রানে টেক্টর বিদায় না নিলে হয়ত লিড আরও খানিকটা বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারত আইরিশরা। তবে তাইজুল যেন সেটা হতে দিতে নারাজ। যদিও কাজের কাজ হয়নি তেমন। নিজেদের লিডটা ক্রমশ বাড়িয়েছে আইরিশরা।

তবে তাইজুলের সামনে সুযোগ রয়েছে নিজের পরিসংখ্যান আরও একটু সমৃদ্ধ করবার। চতুর্থ দিনের সকাল বেলায় পুরনো বলটা আবার হয়ত সাকিব আর তাইজুল তুলে নেবেন। প্রথম ঘন্টায় নিশ্চয়ই গুটিয়ে দিতে চাইবে আইরিশদের ইনিংস। সে কাজটা করতে আর কেবল দু’টি উইকেট প্রয়োজন হবে টাইগারদের। সেই দু’টো উইকেটের একটি নিজের ঝুলিতে যুক্ত করতে তাইজুল নিশ্চয়ই দ্বিধা করবেন না।

তাইজুল ইসলাম, বাংলাদেশের পক্ষে ২০০ উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকায় শেষ সংযোজন। যার অধিকাংশই এসেছে টেস্টে ক্রিকেটে। এখানটায় যেন তাঁর সব স্বাচ্ছান্দ্য। তিনি যেন নিজের একাগ্রতার বহিঃপ্রকাশ করতে পারেন সাদা পোশাক গায়ে। এক নাগাড়ে একটি নির্দিষ্ট লাইনে বল করে যাওয়ার মত ধৈর্য্য সবার থাকে না। তাইজুল সেটা নিজের মধ্যে ধারণ করেন। ঠিক সে কারণেই কি-না সাদা বলের ক্রিকেটে খুব বেশি বিবেচিত হননা তিনি।

যদিও সেখানেও তাঁর সক্ষমতা ছাপ তিনি রেখেছেন। এখন অবধি ১১ বার ফাইফারের দেখা পেয়েছেন তাইজুল টেস্ট ক্রিকেট। ওয়ানডেতেও রয়েছে একটি ফাইফার। ওয়ানডে ক্রিকেটে অবশ্য সুযোগ মেলে না তাঁর। যার পেছনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায় নানান যুক্তি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। সবাই যখন ব্যর্থ হয় তখনই তিনি সঞ্জীবনী সুধা নিয়ে হাজির হন। তুলে নেন প্রতিপক্ষের উইকেট। ঠিক যেমনটা টেক্টরের বেলায় করেছেন।

শেষ অবধি দ্বিতীয় দফা এক ম্যাচে দশ উইকেট নিতে পারবেন কি-না তাইজুল সেটা সময় বলে দেবে। তবে ঘরের মাঠে এই বা-হাতির বিকল্প খুঁজে পাওয়া দায়। সে বিষয়টি বারংবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাইজুল ইসলাম। বোলিং ইউনিটের বাকিদের ব্যর্থতার দিনেও স্বমহীমায় আলোকিত থাকছেন তাইজুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link