নিজের প্রথম টেস্ট শতকের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিলেন কেশব মহারাজ। দারুণ এক ছন্দে ছিলেন। তিনিও হয়ত প্রত্যাশা করছিলেন পেয়েই যাবেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। কিন্তু তিনি হয়ত ভাবেননি, তাঁকে আটকে দেওয়ার জন্যে কেউ একজন ছক এঁকে ফেলেছে। প্রোটিয়া ইনিংসের ১২৩.৩ তম বল। খানিকটা উপরের দিকের বল, আত্মবিশ্বাসী মহারাজ স্লগ সুইপ করতে চাইলেন। বিধিবাম! বলের গতি ঠিক আন্দাজ করতে পারেননি তিনি।
যা হবার তাই হল, বল গিয়ে আঘাত করল স্ট্যাম্পে। মহারাজের অপূর্ণতায় স্বপ্ন পূরণ বাংলাদেশি বা-হাতি স্পিন বোলার তাইজুল ইসলামের। প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়ার স্বাদ পেলেন তাইজুল, তাও আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পেসবান্ধব কন্ডিশনে। তবে সেখানেই থেমে যাননি তাইজুল। তাঁকে আরও একটি উইকেট তুলে নিতে সহয়তা করেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস।
সিমন হার্মারকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকার লেজ গুটিয়ে নিতে সাহায্য করেন তাইজুল। অথচ এই তাইজুল কিনা দেশের বাইরে বাংলাদেশ দলের একাদশে উপেক্ষিত। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবানে হওয়া প্রথম টেস্টটাই হতে পারে আদর্শ। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনারের ঘূর্ণিতে যেখানে কাবু গোটা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ, সেখানে প্যাভিলনের বারান্দার এক কোণায় বসে মহারাজ, হার্মারদের তাণ্ডব দেখেছেন তাইজুল ইসলাম।
কিন্তু কেন এই অবহেলা? এর উত্তর খুঁজে পাওয়া একটু দুষ্কর। একটা উত্তর হয়ত কোন কিছু না ভেবেই বলে দেওয়া যায় যে দেশের বাইরে তাইজুল খুব বেশি কার্য্যকর নয়। এটা মোটামুটি ভুল। তাইজুল নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটাই আসলে পাননি কখনো। এই যে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের দিনের একাদশে ঠাই হয়নি তাইজুলের। নিউজিল্যান্ডের সাথে সে সিরিজে আর মাঠে নামাই হয়নি তাঁর। তাইজুলের ৩৫ ম্যাচে টেস্ট ক্যারিয়ারে তাইজুল মাত্র একবার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল তাও ২০১৯ সালে।
ওয়েলিংটনের সে টেস্ট ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। তবুও এক ইনিংস বল করা তাইজুল নিয়েছিলেন দুই উইকেট। একটু স্পিন সহায়ক উইকেটে তাইজুল খুব কার্যকরী একজন বোলার তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তাঁর নামের পাশের নয় বার ফাইফার নেওয়ার পরিসংখ্যান সকল সন্দেহর অবসান ঘটায়। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেল্লেতে হওয়া টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তাইজুল। সে ম্যাচে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট।
নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচটা তাইজুল খেলেছিলেন দেশের বাইরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে খেলা সে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দশ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সবাইকে খানিক চমকে দিয়ে প্রথম ইনিংসে ঠিকই পাঁচ উইকেট নিজের পকেটে পুরেছিলেন তাইজুল। পরের ম্যাচেও তিনি নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
তবে অভাগা তাইজুলকে টিম ম্যানেজমেন্ট সুযোগই দিতে যেন নারাজ। প্রায় আটটি বছর তিনি পার করে ফেলেছনে টেস্ট ক্রিকেটে। কিন্তু মাত্র ১৩টি টেস্ট খেলেছেন দেশের বাইরে। এই থেকেই বুঝা যায় তিনি দেশের বাইরে কতটা উপেক্ষিত। তবে এই জায়গা বাংলাদেশের আরও একটি দূর্বলতা মুখ্য কারণ। ব্যাটিং দূর্বলতার ভয়েই আসলে বাংলাদেশ একজন অতিরিক্ত ব্যাটার কিংবা অলরাউন্ডার নিয়ে খেলতে নামার চেষ্টা করে। সেদিক বিবেচনায় অবহেলার স্বীকার তাইজুল ইসলাম।
অথচ ১৪৪ উইকেট পাওয়া তাইজুল নিজের উইকেটের সংখ্যাটা আরও একটু বাড়িয়ে নিতেই পারতেন। তাছাড়া বৈরি পরিস্থিতিতে কি করে উইকেট আদায় করতে হয় তারও একটা দীক্ষা নিয়ে নিতে পারতেন। তা ছড়িয়েও দিতে পারতেন পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে। সে যাই হোক। এখনও ক্যারিয়ারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে জাননি তাইজুল। নিশ্চয়ই আরও বেশ কিছু সুযোগ আসবে। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট সুযোগ দেবেন তাইজুল ইসলামকে। সবই সম্ভাবনা, সবকিছুর জন্যে সময়ের অপেক্ষা।