ভবিষ্যৎ কী তবে লম্বাদের!

গত বছর আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান ঈশান কিষাণকে রেখে তাঁদের দলে নিল সৌরভ তিওয়ারিকে। ঈশান কিষাণের চেয়ে প্রায় এক ফুট লম্বা এই ব্যাটসম্যান। ধরনা করা হয় তিওয়ারির এই উচ্চতাই তাঁকে দল পেতে সাহয্য করেছিল। কেননা নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় ছয় মারতে পারেন এই ব্যাটসম্যান। তাই প্রশ্ন ওঠে উচ্চতাও কী আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান বিচারের নিয়ামক হয়ে উঠলো?

একটু পেছনের দিকে তাকানো যাক। ক্রিকেট ইতিহাসের সফল ব্যাটসম্যানদের তালিকা করলে ডন ব্র্যাডম্যান কিংবা শচীন টেন্ডুলকার এই নাম গুলো আসবেই। কিন্তু তাঁদের জন্য তো উচ্চতা কখনো বাঁধা হয়নি। ব্র্যাডম্যান যখন ক্রিকেট খেলেছেন তখন তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। এই উচ্চতা নিয়েই তো তিনি টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান হয়েছেন।

কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের উচ্চতাও তো খুব বেশি ছিল না। অথচ প্রায় দুই যুগ ক্রিকেট দুনিয়াকে শাসন করেছেন ব্যাট হাতে। টেস্ট ক্রিকেটে এই তুলনামূলক খাটো ব্যাটসম্যানদের সাফল্য পাবার ইতিহাসই বেশি। এমনকি এখনো যারা টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করছেন তারাও খুব বেশি লম্বা নন। বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, স্টিভেন স্মিথ কিংবা বাবর আজম সবার উচ্চতাই তো ছয় ফুটের কম। ফ্যাভ ফোরের একমাত্র জো রুটই উচ্চতার দিক থেকে ছয় ফুট অতিক্রম করেছেন।

ম্যাথু হেইডেন, ছয় ফুট উচ্চতাধারী মাত্র তিন ব্যাটসম্যানের একজন যার টেস্টে ৫০ গড়ে পাঁচ হাজারের ওপর রান আছে।

টেস্টে যে লম্বা ব্যাটসম্যানরা কখনোই সাফল্য পাননি সেটাও আবার ঠিক না। ছয় ফুটের বেশি উচ্চতা এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে ৫০ গড়ে ৫ হাজারের বেশি রান করেছেন জ্যাক ক্যালিস, গ্রেগ চ্যাপেল কিংবা ম্যাথু হেইডেনরা। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চিত্রটা ভিন্ন। এখনো পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং টেকনিকের গুরুত্ব দেয়া হয়।

তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ফরম্যাটে পাওয়ার হিটিংটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে পাওয়ার হিটিং করতে পারেন এমন ব্যাটসম্যানদের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। যদিও ঋষাভ পান্ত, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কিংবা ডেভিড ওয়ার্নারের মত ব্যাটসম্যানরা প্রমাণ করেছেন খাটো হয়েও টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিং করা যায়। তবে এটা ঠিক যে লম্বা ব্যাটসম্যানরাই এই ফরম্যাটটায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটিংটা অনেকটা বেসবলের মত হয়ে যাচ্ছে। বেসবলের মত হিট করতে চান ব্যাটসম্যানরা। বেসবলের অনেক টেকনিকও ক্রিকেটে ব্যবহার করছেন অনেক ব্যাটসম্যান। যেমন বেনি হাওয়েলের মত ব্যাটসম্যানরা বেস বলের টেকনিক ব্যবহার করেই এই ফরম্যাটে সাফল্য পাচ্ছেন। আর বেস বলে উচ্চতা কিন্তু একটা  বড় ব্যাপার।

গ্রাফিক্স: ইএসপিএন ক্রিকইনফো

উচ্চতার গুরুত্বটা বোঝার জন্য আসলে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি এই দুইটা ফরম্যাটের মধ্যে খানিকটা তুলনা করতে হবে। টেস্টে সাধারণত বোলাররা আক্রমণ করেন আর ব্যাটসম্যানরা ডিফেন্ড করেন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সেটা একেবারে উল্টে যায়। এখানে আক্রমণ করেন ব্যাটসম্যানরা।

টেস্টে যদি একজন ছয় ফুট উচ্চতার ব্যাটসম্যানকে একটু নিচু বল দেয়া হয় তাহলে তাঁর জন্য ডিফেন্ড করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। ফলে টেস্টে উচ্চতা দুর্বলতায় পরিণত হচ্ছে। আবার এই উচ্চতাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনেক ব্যাটসম্যান নিজের শক্তিতে পরিণত করছেন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উচ্চতার গুরুত্ব কতটা সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দিকে তাকানো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের বাজারদরই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া দল হিসেবে দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছে তাঁরা। ক্যারিবীয়দের পাওয়ার হিটিং করতে পারার ক্ষমতার একটা বড় কারণ তাঁদের এই উচ্চতা।

টিম ডেভিড, উচ্চতা তাঁর ছয় ফিট পাঁচ ইঞ্চি

এই ফরম্যাটে ছয় মারতে পারাটা সবচেয়ে বড় দক্ষতা। আর সেই জায়গাটাতেই এগিয়ে যাচ্ছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। কাইরেন পোলার্ডের মত ব্যাটসম্যানদের জন্য সীমানার ওপাড়ে বল ছুঁড়ে ফেলাটা অনেক বেশি সহজ হয়। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার তালিকা যদি দেখি তাহলে প্রথম তিনজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

ক্রিস গেইল তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি ছয় মেরেছেন। আর এই ফরম্যাটের কিংবদন্তি যে গেইল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেলও ছিলেন এই তালিকায়। তিন জনেরই উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি।

যত দিন যাচ্ছে ক্রিকেট তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। এখন তো হান্ড্রেড বল ক্রিকেটও হচ্ছে। ফলে এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাউন্ডারি মারতে পারে এমন ব্যাটসম্যানই প্রয়োজন। সেজন্যই দরকার লম্বা ব্যাটসম্যানদের। এখন প্রশ্ন হতে পারে, ভবিষ্যৎ কী তাহলে লম্বাদের!

উচ্চতার কারণেই গেল আইপিএলে ঈশান কিষাণ থাকার পরও আরব আমিরাতের মাটিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স প্রাধান্য দেয় সৌরভ তিওয়ারিকে, যাতে করে আবুধাবির বড় বাউন্ডারিগুলোর নাগাল পাওয়া যায়।

– ক্রিকেট মান্থলি অবলম্বনে

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link