২০১১ সাল। সময়টা বাংলাদেশ দলের জন্য একদম ভাল নয়। সদ্যই দেশের মাটিতে বাজে একটা বিশ্বকাপ কাটিয়ে সাকিব আল হাসানের দল গেছে জিম্বাবুয়ে সফরে।
হারারে টেস্টের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেন একদমই অচেনা এক পেসার। ব্রায়ান ভিটোরি, সেই ম্যাচেই অভিষেক। চার উইকেটের মধ্যে ছিল তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেটও।
অথচ, সেদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বোমাই ফাঁটালেন তামিম ইকবাল। বলে বসলেন, ভিটোরি ‘অর্ডিনারি বোলার’। প্রচণ্ড আলোচনার ঝড় উঠলো, সমালোচার তীর বিঁধলো।
জবাবটা দেওয়ার সুযোগ ছিল তামিমের, ওয়ানডে সিরিজের। সুযোগ ছিল ভিটোরির জন্যও। লড়াইটায় জিতলেন ভিটোরি। প্রথম ওয়ানডেতে ভিটোরির বলে আউট তামিম। সেটা আবার ভিটোরির ওয়ানডে অভিষেক।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও একই দৃশ্য। বিস্তর চাপের মুখে থাকা তামিমকে ফেরালেন সেই বাঁ-হাতি পেসার ভিটোরি। পরপর দুই ম্যাচেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। দুই ম্যাচেই পাঁচটি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন ভিটোরি। বাংলাদেশ টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও হারে।
সেই সময় থেকে তামিম ইকবালের ব্যাট এরপর অনেক পরিণত হয়েছে। তবে, আনকোড়া বোলারদের সামনে দূর্বলতা ফাঁস করে দেওয়ার অভ্যাসটা তামিমের যায়নি। এবার যেমন তামিমের দুর্বলতা ফাঁস করে দিচ্ছেন ফজল হক ফারুকী, বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে যিনি মাত্র একটা ওয়ানডে খেলেছেন।
অভিষেক হওয়ার ১৫ বছর এক মাস হতে চললো, লাল সবুজ জার্সিটার গায়ে ‘Tamim 28’ লেখা দেখা হয়েছে ২২২ ওয়ানডে-তে। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকই শুধু না, ব্যাটিংয়ের অধিকাংশ রেকর্ডের সাথেই জড়িয়ে আছে একজন তামিমের নাম।
তথাকথিত পঞ্চপাণ্ডবদের একজন, অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড়, ব্যাটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ, অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ, দলের অধিনায়ক। সব মিলিয়ে ব্যাপক প্রত্যাশা তামিমের উপর। প্রত্যাশার পারদ আরো একটু উপরে উঠে যায় যখন খেলাটা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। চট্টলার ছেলে তামিমের ঘরের মাঠ। কিন্তু প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির বিশাল পার্থক্য। তামিম বারবার করে চলেছেন একই ভুল, পনেরো বছর খেলার পরও এভাবে ভুলের পুনরাবৃত্তি করাটা শোভা পায় না তামিমের।
আফগানিস্তান সিরিজে অফ ফর্মে তামিম, কিন্তু ফর্মের চেয়ে আউটের ধরন বেশিই সমালোচিত হবে। তামিম তিন ম্যাচেই আউট হয়েছেন ফজল হক ফারুকির শিকার হয়ে। দুজনই বিপিএলে খেলেছেন মিনিস্টার ঢাকার হয়ে, অন্য সকলের চেয়ে তামিমের কাছে বেশী চেনা ফজল।
কিন্তু সেই চেনা ফজলের ইনসুইংয়েই বারবার পরাস্ত তামিম। প্রথম দুই ম্যাচে এলবিডব্লিউ, শেষ ম্যাচে হয়েছেন ক্লিন বোল্ড। হেড পজিশন তো ঠিক ছিলই না, ফুটওয়ার্কে বিশাল সমস্যা। ব্যাট প্যাডের পার্থক্য দেখে মনে হয় না দেশসেরা ব্যাটসম্যান এই তামিম। তামিম নিজেও জানেন তো এটা!
প্রথম ম্যাচে লিটন দাসও পরাস্ত হয়েছিলেন ফজলের দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে। পরের ম্যাচ থেকেই যখনই ফজল বোলিংয়ে এসেছেন, লিটন খেলেছেন দুই ধাপ এগিয়ে। ফজলের শক্তির জায়গা সুইং থামিয়ে দিয়ে লিটন খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তামিম নিজেও দেখেছেন, শেখেছেন কী? ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নিয়ে আসা জেমি সিডন্সের সাথে কাজ করেছেন আলাদাভাবে,তবু মিলেনি সমাধান। আদৌ মিলবে? আর কবে মিলবে?
চেনা কন্ডিশনে এমন ভঙ্গুর তামিমকে কল্পনা করে নিশ্চয়ই শঙ্কা জেগেছে ভক্তদের মনে। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, কোভিডকালের আগে, সেই ২০২০ সালের মার্চে। টেস্টে সেই অপেক্ষাটা আবার ঠিক তিন বছরের। ২১ বছর বয়সী তামিম না হয় ভিটোরির দু:স্বপ্ন মুছে ফিরতে পেরেছিলেন, ৩২ বছর বয়সী তামিম কী পারবেন ফারুকীর দু:স্বপ্ন ভুলতে!