তামিম, ডাউন দ্য ট্র্যাক

তামিম ও ডাউন দ্য ট্র্যাক – বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই দু’টো শব্দ যেন একে অন্যের পরিপূরক। ২০০৭ বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের সেই ইনিংসটা তো লেখা হয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। সেদিন ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন তামিম, তাঁর রূদ্রমূর্তির আগুনে পুড়েছিল জহির খান কিংবা মুনাফ প্যাটেল।

ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডেতে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পান তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মত ভারতকে হারানোর স্মৃতিঘেরা সেই ম্যাচ। সেই ম্যাচ জিতেই প্রথমবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার স্বপ্ন আঁকতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

সেই তামিম ইকবাল থাকতে পারতেন এবারও। কিন্তু, ভাগ্যের দোষে কিংবা ইনজুরির দু:স্বপ্নে বলি হয়েছে তাঁর বিশ্বকাপ স্বপ্ন। তামিম না থাকলেও তামিম ঠিকই আছেন, জুনিয়র তামিম। তামিমের জায়গায় এসেছেন আরেক তামিম – তানজিদ হাসান তামিম। যার ওপর টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসার কোনো শেষ নেই।

সেই তামিম জ্বলে উঠলেন অবশেষে। অষ্টম ওয়ানডে ইনিংসে এসে পেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক হাফ সেঞ্চুরি। ৪৩ বলে করেন ৫১ রান। ওয়ানডে ওপেনারের জন্য পরিপূর্ণ এক ইনিংস। প্রথম দিকে অফ সাইডের বাইরের বলগুলোতে ভুগেছেন, তবে সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।

সেটা করতে গিয়ে ডাউন দ্য উইকেটে শার্দুল ঠাকুর কিংবা মোহাম্মদ সিরাজের বিপক্ষে বাউন্ডারি তুলেছেন। ফিরিয়ে এনেছেন তামিম ইকবালের ২০০৭ সালের সেই ইনিংসের স্মৃতি। ইনসাইড লাইনে গিয়ে জাসপ্রিত বুমরাহকে ছক্কা হাকানো তো যেকোনো ব্যাটারের জন্যই স্বপ্ন। হ্যাঁ, পুনেতে ভারতের বিপক্ষে ঠিক এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল তানজিদ তামিমের ব্যাট।

তামিম ইকবালের মত ঠিক ৫১ রানই করলেন। ইনিংসে তাঁর পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কা। মানে ৫১-এর মধ্যে ৩৮ রানই তিনি পেয়েছেন বাউন্ডারি থেকে। সিঙ্গেল বের করার প্রবণতা আরেকটু বাড়লে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক সম্পদই হয়ে উঠতে পারেন তিনি।

অথচ, তানজিদের বিশ্বকাপ দলে থাকারই কথা না। আসলে বিশ্বকাপ কেন, তাঁর আসলে এত দ্রুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকই হওয়ার কথা না। অভিষেকটা হয়েছে স্রেফ কপালগুণে, সিনিয়র তামিমের না থাকার সুবাদে।

প্রথম দিকে নিজের দলে থাকাটাকে যৌক্তিক বলে প্রমাণ করলে না পারলেও ‘ছোট’ তামিম জ্বলে উঠলেন একদম মোক্ষম সময়ে, ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে। চারপাশে যখন বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সমালোচনা তখন সিনিয়র পার্টনার লিটন দাসকে সাথে নিয়ে ওপেনিংয়ে যোগ করলেন ৯৩ রান। সমালোচনার জবাব দেওয়ার সাথে সাথে নিজেকে প্রমাণও করলেন।

২০২০ সালে ভারতকে হারিয়েই যিনি জিতেছিলেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা, তিনি তো নিজেকে প্রমাণের জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকেই বেছে নেবেন। শুধু ভারত নয়, তামিমের এই ব্যাট শাসন করুক যে কোনো যেকোনো বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে – বিশ্বকাপে নিশ্চয়ই এই প্রার্থণাই করবে গোটা বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link