ক্রিকেটের আদি দুই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান, ব্যক্তিগত যত রেকর্ড আছে সব নিজের করে নেয়া হয়ে গেছে ততদিনে কিন্তু শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ার তখনো আক্ষেপে ভরা। পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেও যে তখনো বিশ্বকাপ ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হয়নি ক্রিকেট ঈশ্বরের। ২০০৩ সালে খুব কাছে গিয়েও হাত ছোঁয়া দুরত্ব থেকে ফিরতে হয়েছে।
আট বছর পর ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। এবার সুযোগটা আর হাতছাড়া করা চলে না। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছানোর পর ভারতের সামনে তখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সতীর্থদের তাতিয়ে দিতে চাইলেন শচীন।
মাহেন্দ্র সিং ধোনি তখন অধিনায়ক হলেও মাঠের বাইরের অধিনায়কের দায়িত্বটা তখন শচীন তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। সতীর্থদের তাতিয়ে দিতে দিলেন এক বক্তব্য। সেই বক্তব্যে ভারতের খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। উজ্জীবিত হয়েছিলেন শচীন নিজেও।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেই সেমিফাইনাল ম্যাচ ৮৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন শচীন। সেই ম্যাচের আগে সতীর্দের কাছে দেয়া সেই বক্তব্যের কথা এখনো মনে রেখেছেন এই লিটল মাস্টার। নিজের ৫০ তম জন্মদিনে শচীন নিজেই স্মরণ করলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের সেই স্মৃতি।
মোহালিতে ভারত-পাকিস্তান সেই সেমিফাইনাল ম্যাচে ছিল যুদ্ধংদেহী আবহ। ব্যাট- বলের লড়াই ছাপিয়ে সেই লড়াই ছিল মর্যাদার। মোহালি সেই ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
টেন্ডুলকার জানান, সেই সেমিফাইনালর আগে নিরাপত্তা জনিত কারণে দুপুরের খাবার সময়মত পায়নি ভারত দল। যার কারণে পুরো ভারত দল তখন বেশ বিরক্ত। পুরো দলই তখন “লাঞ্চ কোথায়?” বলে বারবার বিরক্তি প্রকাশ করছে। কিছুক্ষন পরেই সেমিফাইনালের লড়াইয়ে নামতে হবে। তাই খাবার না পেয়ে বেশ বাজে পরিস্থিতিতেই তখন ভারত দল।
এরপর দুপুরের খাবার না খেয়েই অনুশীলনে নামে ভারত। অনুশীলনেও অনেক খেলোয়াড় বারবার দুপুরের খাবারের কথাই বলছিলেন। শচীন তখন ভাবলেন, এটাই সুযোগ খেলোয়াড়দের চাঙা করার। পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নামার আগে খেলোয়াড়দের তাতিয়ে দেবার।
তখন পুরো দলকে একত্র করে শচীন বলেন, ‘‘তোমরা যদি ক্ষুধার্ত থাকো, পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দাও, কত রান তোমরা করতে পারো, কত উইকেট নিতে পারো। সবার আগ্রহ এখানেই। কেউ জানতে চায় না, তোমরা সকাল কিংবা দুপুরের খাবার খেয়েছ কি না। এটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল। যাও নিজেকে উজাড় করে দাও।’
শচীনের এই কথা গুলো দারুণ কাজ করে ভারতের খেলোয়াড়দের জন্য। পাকিস্তানকে ২৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। শচীন হন ম্যাচ সেরা। এরপর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেশের ২৮ বছরের বিশ্বকাপ আক্ষেপ ঘুচিয়ে পুরো দেশকে আনন্দে মাতান শচীনরা। আর শচীনও নিজের দুই দশকের বেশি সময়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একমাত্র আক্ষেপ ঘুচিয়ে পান ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তটি।