বিবর্তনের সুবাতাস টেস্টে

‘টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য হচ্ছে পরিস্থিতি অনুসারে মানিয়ে নেওয়া।’ – পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজম ঠিক এমনটাই মনে করেন। সাদা পোশাকে ক্রিকেট হচ্ছে  ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট। দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দেওয়ার মতই যেন কঠিন কাজ। ধৈর্য্য এবং পরিস্থিতি অনুসারে মানিয়ে নেওয়ার কাজটাই যেন শিখিয়ে দিয়ে যায় টেস্ট ক্রিকেট।

তবে হুট করেই পরিস্থিতি অনুসারে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। একটা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। এই বিবর্তনের পেছনে ভারতীয় ঋষাভ পান্ত যেমন যুক্ত তেমনি যুক্ত গোটা ইংল্যান্ড দল। একটা গতানুগতিক চিন্তাধারা ক্রিকেট মহলের সবার মাঝেই রয়েছে। টেস্ট মানেই সংযম।

তবে না ইংল্যান্ডের নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং তাঁর অধিনায়ক বেন স্টোকস এই ধারা থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছেন। টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ ইনিংসটা বেশ ভোগায়। চতুর্থ ইনিংসে একটা মানসিক অস্বস্তিকর বিষয় ঘটে ব্যাটারদের। হয় রান তাড়া কর, না হয় পপিং ক্রিজটা আঁকড়ে ধরে পরে থাক। আর টার্গেট যদি হয় ১০০ এর বেশি তবে বাড়তি আলাপ বাদ, আগে ম্যাচ বাঁচাও।

এই তো ছিল টেস্ট ক্রিকেটের আদিম ধ্যান-ধারণা। তবে না, ইংল্যান্ড এখন আর টার্গেট দেখে ভয় পায় না। তাঁরা বরং চতুর্থ ইনিংসের শেষ দিনের শেষ বল অবধি খেলে যেতে চায় জয়ের জন্য। অসাধারণ এক পরিবর্তন। বিবর্তনের শুরু! এই তো ক’দিন আগেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম দিনে ২৯৯ রানের টার্গেট তাড়া করে জিতে নেয়। ইংলিশ ব্যাটারদের মস্তিষ্কে নেই কোন ভয়ডর।

চতুর্থ ইনিংস, টেস্টের পঞ্চম দিন, পিচের কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ বোলারদের ফর্ম এসবই যেন তুচ্ছ। মাথার ভেতরে তাঁদের শুধু জয় ঘোরে। তবে জয়ের জন্যে বাড়তি ঝুঁকি নিচ্ছে না ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। বরং ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনেই ব্যাটিং করে যাচ্ছে। তবে মেজাজটা খানিক বদলেছে। বিবর্তনে এখন যুক্ত হয়েছে ওয়ানডে মেজাজ। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। অথবা আরেকটু ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রচেষ্টা।

বাকি থাকা তিনটে ইনিংসে টেস্ট মেজাজ বজায় রেখে, চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য গিয়ার বদলে ব্যাটিং করাটা বড্ড বেশি ইতিবাচক। এতে করে টেস্টের সৌন্দর্য যেন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে দর্শকদের আগ্রহও বাড়ছে সমানতালে।

টেস্ট খেলাটা বেশ মন্থর এমন ভাবের পরিবর্তন হচ্ছে।  টেস্টও ষোল আনা উপভোগ্য তেমনটাই যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। সেদিক থেকে বাদ নেই উপমহাদেশের ক্রিকেটাররাও।

এই যেমন ঋষভ পান্তের কথাই ধরুণ। বিপদের মুখে যখন অধিকাংশ ব্যাটারদেরই চিন্তা থাকে ধরে খেলার। ঠিক তখন ঋষাভের পরিকল্পনা থাকে ভিন্ন। তিনি বরং মেরে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আক্রমণের জবাবে পালটা আক্রমণ। প্রতিপক্ষ বোলারদের কষ্টার্জিত মনোবলের দেয়ালে ভারি হাতুড়ির আঘাতই যেন করেন ঋষাভ পান্ত। সে বিষয়টাও নিশ্চয়ই বিনোদিত করে দর্শকদের।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এমন বিস্তীর্ণ জনপ্রিয়তার মূল কারণই তো হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই। রানের বন্যার সাথে বোলারদের উইকেট নেওয়ার তাড়না। এসব কিছু মিলিয়েই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট  বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছে বেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে।

তবে টেস্ট ক্রিকেট তো মর্যাদার খেলা। এই খেলাটার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কমতে থাকা বিষয়টা তো আর মেনে নিতে পারে না ক্রিকেটের জনক দেশ। তাইতো এমন বিবর্তনের সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের উপর দিয়ে।

এমন বিবর্তন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোকে নিজেদের উন্নয়নে আরও বেশি উৎসাহিত করবে নিশ্চয়ই। দর্শক সমর্থকরাই তো ক্রিকেটের অন্যতম চালিকা শক্তি। বিনোদনের খোরাক মেটানোর নতুন এই পন্থাকে সাধুবাদ না জানানোর কোন উপায় নেই।

এই বিবর্তনের সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক দ্রুতই। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিটা দিন আগ্রহ নিয়ে দেখতে বসুক দর্শক। খেলোয়াড়দের ক্রিকেটীয় দক্ষতার মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাক পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। টেস্ট ক্রিকেট নিজের স্বমহিমায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেই বেঁচে থাকুক চিরকাল। সাধারণ দর্শক অন্তত সেটাই প্রত্যাশা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link