২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে এসেছিল ভারত। সেই সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ভিভিএস লক্ষ্মণের দেয়া ক্যাচ উইকেটের পেছনে লুফে নিতে ব্যর্থ হন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান সেই মুহুর্তেই উপলব্ধি করেন যে নিজের সময় ফুরিয়ে এসেছে; দলের বোঝা না হয়ে তাই আকস্মিক বিদায় বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।
এক যুগের বেশি সময় পর অ্যাডাম গিলক্রিস্টের স্মৃতি মনে করার কারণ আরেক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়কের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। শেষ ১০ ওয়ানডেতে মাত্র একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস; তাই তো নিজের পূর্বসূরির পথ ধরে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন ফিঞ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি হবে তাঁর শেষ ওয়ানডে।
নিজের জনপ্রিয়তা আর অর্জন বিবেচনায় গড়পড়তা ফর্ম নিয়েও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট চাইলে আরো কিছু সময় খেলতে পারতেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। একইভাবে দল ভাল করছে কিংবা ব্যাড প্যাচের অজুহাত দেখিয়ে অ্যারন ফিঞ্চ ইচ্ছে করলে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপও খেলতে পারতেন। এতে ফর্মে ফেরার যেমন সুযোগ থাকতো তেমনি ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিসংখ্যানটাও আরেকটু ভালো হতো।
কিন্তু বড় মাপের খেলোয়াড়দের ওই এক বৈশিষ্ট্য – তারা জানেন কোথায় থামতে হবে। নিজ দেশের ক্রিকেটের ভালো এবং মন্দ তারা বোঝেন। তারা মানেন ক্ষমতা থাকলেই অপব্যবহার করা উচিত নয়। এসব জানেন আর মানেন বলেই তারা ক্রিকেটপ্রেমীরদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকেন যুগের পর যুগ।
চলতি বছর এক দিনের ক্রিকেটে অ্যারন ফিঞ্চের পারফরম্যান্স মোটেই ভাল ছিল না। সর্বশেষ ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ১৬৯ রান করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে আবার শেষ সাত ইনিংসে মাত্র ২৬ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই ডান হাতি ওপেনার। এছাড়া শেষ ১২টি ইনিংসের মধ্যে পাঁচ বার রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন তিনি।
অফ ফর্মের কারণে তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অ্যারন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়া দলের বর্তমান অধিনায়ক তিনি, কিন্তু দলে টিকে থাকার জন্য অধিনায়কত্বের ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি এই ক্রিকেটার। অনেকটা সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনি। কয়েক মাস আগেই অফ ফর্মের কারণে জাতীয় দলের জার্সি তুলে রেখেছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
এখন পর্যন্ত ১৪৫টি ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নেমেছেন অ্যারন ফিঞ্চ। ৩৯.১৪ গড়ে ৫৪০১ রান করেছেন; নামের পাশে আছে ১৭টি সেঞ্চুরি এবং ৩০টি হাফ সেঞ্চুরি। প্রায় ৮৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা অ্যারন ফিঞ্চ নিঃসন্দেহে সময়ের সেরা বিধ্বংসী ওপেনারদের মাঝে একজন।
ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে অ্যারন ফিঞ্চের জুটি অস্ট্রেলিয়ার গত কয়েক বছরের সাফল্যের অন্যতম বড় কারণ। ৮০ ইনিংসে এই জুটি ৩৭৮৮ রান করেছেন। গড় প্রায় ৪৮ ছুঁই ছুঁই; এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ জুটি গড়েছেন ১৪ বার এবং শতরানের জুটি রয়েছে আরো ১২টি। বলাই যায়, ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী জুটির সমাপ্তি ঘটেছে।
অবশ্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাবেন অ্যারন ফিঞ্চ। গত আসরে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি, এবার ঘরের মাঠে সেই শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন অজি অধিনায়ক। তাঁর বিদায়ী বার্তাতেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আরো মনোযোগী হয়ে ওঠার ইচ্ছে ফুঁটে উঠেছে।
ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অপেক্ষা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। গতবারের মত এই আসরও অ্যারন ফিঞ্চ রাঙ্গিয়ে রাখতে পারবেন কি না সেটি নিশ্চিত নয়; তবে পারফরম্যান্সের বিচারে নয় বরং ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসরের সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন তিনি। ব্যক্তি স্বার্থকে সরিয়ে রেখে দলীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থাপনের দৃষ্টান্ত থেকে চাইলে শিক্ষাও নিতে পারেন অনেকে।