বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনো ক্রিকেটীয় সংস্থা হিসেবে আদর্শ জায়গা নয় কখনোই। নানা রকম অনিয়ম হয়, অপেশাদার আচরণের খবর আসে। তবে, সদ্যই তারা যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলো সেটার জন্য সংস্থাটির ধন্যবাদ প্রাপ্য।
এমন অনেক নজীর আমরা অতীতে দেখেছি যে, বিসিবি কেবল বাইরের বোর্ডগুলোর সাথে স্রেফ সম্পর্ক রক্ষার তাগিদে ক্রিকেটারদের ওপর অনেক সিদ্ধান্তই চাপিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ পাকিস্তানের মাটিতে সফরটাও তেমনই এক সমঝোতা ছিল। সেবার ক্রিকেটারদের বিরূপ পরিস্থিতিতে খেলতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তবে, এবার বোর্ড সেই পথে হাঁটছে না। যেকোনো ইস্যুতেই যে মানুষটা সবচেয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন (নিন্দুকেরা বলেন, তিনি বেশি কথা বলেন) সেই সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবার দেশের ক্রিকেটের স্বার্থটাই দেখছেন। সভাপতি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, অনুশীলন ও অনুশীলন ম্যাচের যথেষ্ঠ সুবিধা না পেলে দল শ্রীলঙ্কা সফর করবে না।
দেশটির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) সাথে বিসিবির গোলমালটা বাঁধে প্রথম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ নিয়ে। ১৪ দিন না ৭ দিন সেই ব্যাপারে তারা খোলাসা করে কিছু বলছিল না। সেই সিদ্ধান্ত এখন ঝুলে আছে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হাতে।
এই করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ফেরাতে পেরেছে ইংল্যান্ড। তারা ইতিমধ্যে চারটি দলকে সে দেশে সফরের সুবিধা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বিশাল লটবহর নিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ডে মাঠের ভেতরেই হোটেলে থেকেছে। দুটো দলের সমান বহর নিয়ে গিয়ে নিজেরা ম্যাচও খেলেছে। ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে বাড়তি খেলোয়াড় দলে রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। এখন ইংল্যান্ড সফরে থাকা অস্ট্রেলিয়া দলও পাচ্ছে একই সুবিধা।
কিন্তু এসএলসি এসব কোনো সুবিধা দেওয়ার ধারও ধারছে না। সংস্থাটি বাংলাদেশকে কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় অনুশীলন সুবিধা দিতে পারবে না, অনুশীলন ম্যাচ খেলার মতো বাহিনী নিতে দেবে না, এমনকি নেট বোলারও সরবরাহ করতে পারবে না।
এমনিতেই দেশে মাঠে ক্রিকেট নেই অনেকদিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল সেই ছয় মার্চ। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ চালু থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবস্থায় টানা ১৪ দিন স্রেফ হোটেলে বসে থেকে হুট করে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে যাওয়াটা খুবই আত্মঘাতী একটা সিদ্ধান্ত হতে পারতো।
বিসিবি সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়নি। শ্রীলঙ্কা সফরটা নিশ্চিত হয়ে থাকলেও এখন এসএলসির অপেশাদার আচরণে সেই ফেরাটা অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে, ইতিবাচক ব্যাপার হল বিসিবি নিজেদের দৃঢ় অবস্থানটা সবার সামনে নিয়ে আসতে পেরেছে। বলে দিয়েছে, শর্ত না বদলালে শ্রীলঙ্কা সফর সম্ভব নয়।