সাকিব আল হাসান কি আদৌ আর বাংলােদেশের হয়ে খেলতে নামবেন? পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলে দেওয়া যায় – তিনি আর কখনওই খেলবেন না বাংলাদেশের হয়ে। অন্তত, এটুকু বলে দেওয়া যায় – কানপুরের টেস্ট শেষেই সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে যাচ্ছে।
যদিও, সাকিব দেশে ফিরে মিরপুরে টেস্ট খেলে বিদায় জানাতে চান ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটকে। সেজন্য তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছ থেকে পুরো নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে নিরাপদে দেশ থেকে বেরও হতে যেতে চেয়েছেন।
বিসিবি তাঁর জন্য নিরাপত্তার বলয় দিতে প্রস্তুত। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ সেটা জানিয়েছেনও। কিন্তু, পুরোপুরি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা তাঁদের নেই। সেটা খোদ সরকারও দিতে পারে না। কারণ, আইনী বিষয়টা পুরোপুরিই সংবিধান বলে আদালতের দায়িত্ব।
ফলে, সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেলে, কিংবা তাঁকে দেশ না ছাড়তে বাধ্য বাধকতা দেওয়া হলে আসলে সেখানে বিসিবি বা সরকারের কিছুই করার নেই। গণ্ডগোলটা এখানেই। সাকিব নিজেও এই বিষয়টা এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন। যতদূর জানা গেছে, এই বিষযে বোর্ডের সাথে আলোচনাও হয়েছে একাধিকবার।
বোর্ড সাকিবকে নিরাপদে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার অবস্থা নেই। এই ইস্যুতে, সাকিব নিজে আর দেশে ফিরে নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চান না। টি-টোয়েন্টিতে তিনি শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছন বলেই জানিয়েছেন। এবার টেস্টেও তাঁর ক্যারিয়ারে চাইলে ফুলস্টপ দিয়ে ফেলা যায়।
এবার বাকি থাকল ওয়ানডে ফরম্যাট। ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের কোনো ওয়ানডে ম্যাচ নেই। সেটা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, তাঁদেরই মাঠে। এখন দেশের মাটিতে সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে অস্বীকৃতি জানালে, বোর্ডও বিষয়টাকে সহজ ভাবে নিবে না।
বোর্ড সভাপতি কিংবা বোর্ডের সর্বমহল সাকিবকে দেশের মাটি থেকেই টেস্টকে বিদায় নিতে দেখতে চান। বোর্ডের জন্যও সাকিবকে জমকালো বিদায় দিতে পারলে সেটা দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্যও একরকম ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং। সেই ব্র্যান্ডিংয়ের পায়ে কুড়াল মারলে সাকিব দেশের ক্রিকেটের সাথেই এক অর্থে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবেন।
এটাই একমাত্র কারণ নয়, সাকিব বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। বোর্ড তাঁকে যেভাবে সেখানে খেলতে চায়, সেভাবেই-সেখানেই তাঁর খেলতে রাজি থাকা উচিৎ। ফলে, একটা ফরম্যাটে সাকিব বোর্ডের বিরুদ্ধে গেলে, চুক্তিভঙ্গের দায়ে আরেক ফরম্যাট থেকে সাকিবকে বোর্ড ছুড়ে ফেলার এখতিয়ার রাখে।
ফলে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো দূরের কথা – ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাঁর স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াটাই কঠিন। সেটা হলে তো সব রকম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাকিবকে রীতিমত বাধ্যতামূলক অবসরেই বাধ্য করা হবে। সবার অগোচরে নিরবেই একটা অধ্যায়ের শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এমন একটা বর্ণাঢ্য আর অর্জনে পরিপূর্ণ ক্যারিয়ারের শেষটায় এমন পরিণতি আর যাই হোক – সাকিব কোনো ভাবেই চাননি! ৭০ টেস্ট, ২৪৭ টি ওয়ানডে আর ১২৯ টি টি-টোয়েন্টিতেই থেমে যাবেন তিনি।
পেছনে পরে থাকবে তাঁর প্রায় ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক রান আর ৭০০’র ওপর উইকেট। আর থাকবে বাংলাদেশকে একটি ট্রফি এনে দিতে না পারার অনন্ত আক্ষেপ কিংবা সময়মত জনমনের হৃদয়ের ধ্বনির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন রাখতে না পারার কলঙ্ক।