সময় আর বয়স, জীবনের দুই অনিবার্য সত্য। যে ব্যাট একসময় বজ্রের মতো গর্জন তুলত, সেটিই সময়ের সাথে ধীরে ধীরে নীরব হয়ে আসে। বিরাট কোহলির ২০২৪ সাল যেন সেই বাস্তবতারই এক নির্মম চিত্র। গত একটা দশক যে ব্যাটিং দেখে প্রতিপক্ষের মনে শঙ্কায় কাঁপন ধরত, এখন সেই ব্যাটে জমে থাকা ধুলো যেন তার ম্লান ফর্মের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে ১০ ম্যাচে ১৮ গড়ে করেছেন মাত্র ১৮০ রান। ওয়ানডেতে অবস্থাটা আরও করুণ। তিন ম্যাচে ১৯.৩৩ গড়ে রান মোটে ৫৮, সর্বোচ্চ ২৪।
টেস্ট ক্রিকেটেও সেই পুরানো জাদুটা অনুপস্থিত। টেস্ট ক্রিকেট, যেটা কোহলির পছন্দের মঞ্চ সেখানেও ১৬ ইনিংসে ৩৭৩ রান, গড় ২৬.৬৪। যদিও একটি শতক আছে, কিন্তু সেটিও যেন মরচে ধরা তলোয়ারের শেষ একটা ঝলক।
কোহলির ব্যাটিংটা যেন একসময়ের সিংহরাজ, যে আজ নিজেই হারিয়ে ফেলেছে শিকারের দৃষ্টি। প্রতিবার অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বলে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ আউট। আউট হবার এই অভিনব পদ্ধতিকে যেন রীতিমতো শিল্পই বানিয়ে ফেলছেন তিনি। যিনি একসময় ছিলেন ‘কভার ড্রাইভের রাজা’, আজ তার স্ট্যান্সই যেন বড্ড দুর্বল। যে ব্যাট হাতে একসময় লেখা হতো ইতিহাস, তা আজ যেন ভুলে গেছে রান তোলার কৌশলটাই। সমালোচকরা বলছেন, ‘কোহলির অধ্যায়টা কি তবে শেষ! তিনি কি এখন দলের জন্য বোঝা?’
এই ব্যর্থতার ধারা তো আজকের নয়। ২০২১ সাল থেকেই ছিলেন শতকের খরায়। আর এখন রান করাটাই যেন তার জন্য পাহাড়ে ওঠার মতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝেমধ্যে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে কিছু রান করেছেন বটে। কিন্তু সেই পুরনো ‘কিং কোহলি’র প্রতিফলন তাতে নেই।
কিন্তু কোহলি মানেই তো প্রত্যাবর্তনের গল্প। বহুবার তিনি ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিরে এসেছেন ডান ঝাপটিয়ে। তবে কি আবারও হবে সেই প্রত্যাবর্তন? নাকি এবার সত্যিই শেষ?
সময়ের নিয়মে বাঘও বুড়িয়ে যায়, কিন্তু যখন সে গর্জায়, তখন জঙ্গল কাঁপে। রাজা কি আবার রাজত্ব ফিরে পাবেন, নাকি সময়ের নিয়মে ম্লান হয়ে যাবে তার গল্প? উত্তরটা তোলা থাকলো আপাতত সময়ের খাতায়। জানার অপেক্ষায় পুরো ক্রিকেট দুনিয়া।