ওয়ানডেতে এক হাজার রান করেছেন, ১০০ উইকেট পেয়েছেন – এই তালিকাটা বিশাল। তবে সেখানে আইসিসির সহযোগী দেশগুলো থেকে প্রতিনিধি আছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন থমাস ওদোয়ো। আসলে তিনিই সহযোগী দেশ থেকে আসা প্রথম ক্রিকেটার যিনি ওয়ানডেতে ১৫০০ রান ও ১০০ টি উইকেট নিয়েছেন।
পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁর সামর্থ্যকে বিবেচনা করা যাবে না। আসলে তাঁর সামর্থ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিবেচনায় খুব অস্বাভাবিক কিছু ছিলও না। তবে, সেই সীমিত দিয়ে তিনি লম্বা সময় সার্ভিস দিয়ে গেছেন কেনিয়া দলকে।
সেই সময়টাও আজকের দিনের বিবেচনায় বিশাল সময় – ১৮ বছর। কেনিয়ার হয়ে খেলেছেন – তাই স্বাভাবিক ভাবেই অজস্র সুযোগ পাননি। এই সময়ে তাই মাত্র ১৩৬ টি ওয়ানডে আর ১১ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তাতে রান করেছেন আড়াই হাজারের ওপরে। উইকেট নিয়েছেন ১৫০’র ওপরে। হয়তো নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলে তাঁর পরিসংখ্যান আরো ফুলে ফেঁপে উঠত।
কেনিয়ার যে গুটি কয়েক পরিবার ক্রিকেটের আলো যুগ যুগ ধরে জ্বালিয়ে রেখেছে তেমনই একটা পরিবারের মানুষ ওদোয়ো। ভাই কেন মিগাইও ক্রিকেটার। ওদোয়োর ভাতিজা নেলসন ওদিয়াম্বো খেলেছেন জাতীয় দলেও।
তিনি মূলত মিডিয়াম পেসার। ক্যারিয়ারে পাঁচ বার ইনিংসে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৬০। বোঝা যাচ্ছে মেপে বোলিং করা বলতে যেটা বোঝায় সেটা খুব ভালই জানতেন তিনি। ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট পাওয়া প্রথম কেনিয়ান তিনি।
তবে, ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি মন্দ ছিলেন না। আসলে কেনিয়ার বিবেচনায় বেশ ভালই ছিলেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে কার্যকর সব ইনিংস খেলেছেন। ২০০৬ সালে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইরোবিতে খেলেন ৮৬ রানের ইনিংস। এর পরের বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একই মাঠে নয় নম্বরে নেমে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ক্যারিয়ারে একটা সেঞ্চুরিও আছে আটটি হাফ সেঞ্চুরির বিপরীতে। ২০০৭ সালে প্রিয় ভেন্যু নাইরোবির জিম খানা মাঠে ১১১ রানে অপরাজিত ছিলেন কানাডার বিপক্ষে। সেদিনও নেমেছিলেন সাত নম্বরে। ১১৩ রানের ইনিংসে ছিল ১১ টি চার। এমন পাওয়ারফুল ব্যাটিংয়ের জন্য কখনো কখনো তাঁকে ব্ল্যাক বোথাম নামেও ডাকা হত। তবে, ইংল্যান্ডের জন্য ইয়ান বোথাম যা ছিলেন ওদোয়ো কেনিয়ার জন্য তার চেয়েও বেশি ছিলেন।
কেনিয়া ক্রিকেটের উত্থান কিংবা পতন – দুটোই তিনি দেখেছেন। ১৯৯৬ সালে কেনিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। সেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় কেনিয়া দল। ২০০৩ সালে দলটা যখন সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে তখনও তিনি দলের অন্যতম সদস্য।
লম্বা সময় নতুন বলে তাঁর সঙ্গী ছিলেন মার্টিন সুজি। সেই সুজির ভাই টনির সুজির সাথে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে যোগ করেছিলেন ১১৯ রান। সেটা তখনকার সময় বিশ্ব রেকর্ড ছিল।
আফ্রো-এশিয়া কাপ একটা সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। সেই সময় তিনি আফ্রিকা একাদশে খেলেছেন। শুধু খেলাই নয় ব্যাঙ্গালুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট শন পোলকের সাথে সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১০৩ রান যোগও করেন। আইসিসি যখন ২০০৭ সালে প্রথমবারের মত সহযোগী দেশের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচন করল, তখন প্রথম আসরে সেরা হন এই ওদোয়ো।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে কোচিংয়ে মন দেন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ – এই দুই বছর তিনি ছিলেন কেনিয়া জাতীয় দলের কোচ। তবে, কোচ হিসেবে তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের মত কেনিয়ার দুর্দশা মুছতে পারেননি।
ওদোয়ো কেনিয়ার স্বর্ণযুগের কান্ডারিদের একজন। তবে, তাঁর সতীর্থ স্টিভ টিকোলো, আসিফ করিম কিংবা মরিস ওদুম্বেদের মত তিনি আলোচিত হন না আজকাল। যদিও, সামর্থ্যে বা অর্জনে কারো চেয়েই খুব পিছিয়ে নেই তিনি।