বুকে তাঁর সিংহ-সাহস

তামিমকে লেজেন্ড বললাম আবেগকে দূর সরিয়ে রেখেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমার কাছে তামিম স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার এক হাতে ব্যাটিং করার সেই ছবিটার জন্যই। আদিওস আমিগো!

২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে দিয়ে তার মারা বাউন্ডারিটার কথা মনে পড়তেই পারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখনো তার এক মাসও পূর্ণ হয়েছে কি হয়নি। ক্যারিয়ারেরই মাত্র পঞ্চম ম্যাচ ছিল। ৫৩ বলে ৫১ করা তামিম বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ওই ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম অঘটনের জন্ম দিতে। জানিয়ে দিয়েছিলেন, সদ্য কৈশোর পেরোনো বুকে তাঁর সিংহ-সাহস।

মনে পড়ছে লর্ডসে তার উড়ন্ত উদ্‌যাপনের কথা। লিখে দাও আমার নাম লর্ডসের অনার্স বোর্ডে – ছবিটা চোখে ভাসছে। তুমুল সমালোচনার মুখে এশিয়া কাপে টানা চার ফিফটি করে আঙুল গুনে দেখা উদ্‌যাপনটাও মনে পড়ছে।

সব ছাপিয়ে পড়ছে এশিয়া কাপেই ভাঙা আঙুল নিয়ে এক হাতে ব্যাট করতে নেমে যাওয়ার ছবিটা। সমালোচনা তার ক্যারিয়ারে ছায়াসঙ্গী হয়েই ছিল। একসময় না একসময় থামতেই হতো। তামিম ১৭ বছরের যাত্রার ইতি টেনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে। সেই যাত্রাটা বেড়ে আরও বছর দুয়েক এগোলেও এতে ম্যাচ যুক্ত হল মোটে দুইটা।

প্রথম দফায় দেওয়া, বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে কথাই বলতে পারছিলেন না। তার মতো দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মানুষটাও কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বারবার। খেলাটার সাথে তার কত আবেগ জড়িয়ে আছে তা বোঝাই যাচ্ছিল।

বললেন, শৈশবেই হারানো প্রয়াত বাবাকে গর্বিত করার জন্য খেলেছেন। বললেন, জানি না, বাবাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি। ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল অলক্ষ্যে কোথাও দাঁড়িয়ে তার বাবা তামিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন, ইউ মেড আস প্রাউড মাই সান।

দ্বিতীয় দফায় এসে বললেন, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আরেকটু খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পেশাদারিত্ব তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি।

তিন ধরনের ক্রিকেটেই সেঞ্চুরি করা বিরল ক্রিকেটারদের একজন তামিম একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রানও করেছেন। যদিও যেকোনো এক ফরম্যাটে ১০ হাজার রান করার স্বপ্নটা অপূর্ণই থেকে গেল।

জীবন এ রকমই। কিছু স্বপ্ন পূরণ হবে, কিছু রয়ে যাবে অধরা। জীবন এ রকমই। কখনো আপনি সফল হবেন, কখনো ব্যর্থ। পারফরমারদের বেলায় এ তো আরও সত্যি। টেন্ডুলকার, কোহলিদেরও ক্যারিয়ারে বাজে সময় গেছে।

তাকে ঘিরে সমালোচনা কখনো ব্যক্তিগত নির্লজ্জ আক্রমণে পরিণত হত। তামিম বলতেই পারেন হোয়াই অলওয়েজ মি! আজ তামিমও বললেন, খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। কিন্তু সেটা যেন ক্রিকেটের মধ্যেই থাকে। তামিমের ক্ষেত্রে তা সত্যিই হয়নি।

মনে হয়েছে, তামিমের অবসর নেওয়া ঠিকই আছে। মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে পারলে ছবিটা সার্থক হতো। সবচেয়ে ভালো হতো, যদি মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারতেন। এ নিয়ে আফসোস করাও বিলাসিতা। আমাদের কোন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের বিদায় মাঠ থেকে হয়েছে বলতে পারেন? খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ রফিক ছাড়া কারও নাম মনে আসছে না।

তামিমকে লেজেন্ড বললাম আবেগকে দূর সরিয়ে রেখেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমার কাছে তামিম স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার এক হাতে ব্যাটিং করার সেই ছবিটার জন্যই। আদিওস আমিগো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link