ভাঙা হাতের নীরব লড়াই

ড্রেসিংরুম থেকে ভাঙা হাত নিয়ে ওভালের সবুজ গালিচায় নেমে আসলেন একজন। পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানালো তাঁকে। তিনি যেন দলের প্রয়োজনে এক যুদ্ধযাত্রা করলেন। যে যুদ্ধটা শুধুই দেশের জন্য আর সেনাপতির ভূমিকায় রূপকথার আহত বীর — নামটা ক্রিস ওকস।

ড্রেসিংরুম থেকে ভাঙা হাত নিয়ে ওভালের সবুজ গালিচায় নেমে আসলেন একজন। পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানালো তাঁকে। তিনি যেন দলের প্রয়োজনে এক যুদ্ধযাত্রা করলেন। যে যুদ্ধটা শুধুই দেশের জন্য আর সেনাপতির ভূমিকায় রূপকথার আহত বীর — নামটা ক্রিস ওকস।

ফিল্ডিংয়ের সময় বাউন্ডারি বাঁচাতে গিয়ে কাঁধে চোট পড়েছিলেন ওকস। পরীক্ষার পর জানা যায় শোল্ডার ডিসলোকেট হয়ে গেছে তাঁর, সুতরাং খেলা হবে না এই টেস্ট। তবে সময়ের প্রয়োজনে তো সবকিছুই হয়। ওভালে তখন ইংল্যান্ড-ভারতের একটা রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের শেষ মুহূর্ত। জিততে হলে ইংলিশদের চাই ১৭ রান। ততক্ষণে অবশ্য নয় উইকেট হারিয়েছে তাঁরা। সে সময় অপেক্ষাটা শুধুই ওকসের জন্য। আর প্রশ্নটা — তিনি ফিরবেন কি?

অপেক্ষার অবসান ঘটালেন ওকস। কাঁধের চোট উপেক্ষা করে তিনি ফিরলেন রণক্ষেত্রে। এক হাতে আর্ম স্লিং, অন্য হাতে ব্যাট — যেন আহত সৈনিকের সামনে ভেসে উঠছে দেশপ্রেম। সেই দেশপ্রেম অসম্ভবকে সম্ভব করে, জীবনের পরোয়া করে না। স্ট্রাইক হ্যান্ড ভাঙা থাকায় কোনোভাবেই ব্যাট করাটা শোভনীয় ছিল না। তবে সে পরীক্ষায় অবশ্য পড়তে হয়নি তাঁকে।

দুই ওভার ক্রিজে থাকলেও কোনো বল ফেস করতে হয়নি। তবে ওকসের সাহসিকতার গল্পে ভারতের ক্রিকেট স্পিরিটটাও প্রশংসার দাবিদার। চোট আক্রান্ত ওকসের যেন বল ফেস না করতে হয় সেজন্য সব ফিল্ডাররা দূরে সরে গেল।

শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ওকসকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকার রাস্তা করে দিল শুভমান গিলরা। এটাই হয়তো ক্রিকেটের সৌন্দর্য। একজন দলের প্রয়োজনে জীবনের তোয়াক্কা না করে মাঠে নামছেন, আবার শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে প্রতিপক্ষ হয়েও জয়ের হিসাব ভুলে তাঁর কাজটা সহজ করে দিচ্ছে।

দিনশেষে ফলাফল যাই হোক — এসব গল্পই তো ক্রিকেটের মর্যাদা বাড়িয়ে তোলে। তবে ক্রিস ওকস যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দলের জন্য, তা হয়তো ক্রিকেট মনে রাখবে, মনে রাখবে আহত সেনাপতির দেশের জন্য শেষ চেষ্টার কথা, নিশ্চিত বিপদের মুখে দেশের জন্য নিজেকে সঁপে দেওয়ার কথা।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link