ক্রিকেট যদি হয় এক সুবিশাল আকাশ তবে পাকিস্তান ক্রিকেট সে আকাশকে আলোকিত করেছে বহুবার। শত শত তারকা খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে কালে কালে। তবে পাকিস্তান যদি খেয়াল রাখত ঠিক কতগুলো তারা খসে গেছে আলো ছড়াবার আগে, তবে সে সংখ্যাটা নিশ্চয়ই ছুঁয়ে দেখত আঁধার আকাশ। তেমনই এক খসে যাওয়া তারকা ইয়াসির আরাফাত।
পাকিস্তান ক্রিকেট বরাবরই পেসার সমৃদ্ধ এক দেশ। সে সমৃদ্ধ গোলায় আগমন ঘটেছিল ইয়াসির আরাফাতের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় তিনি খুঁজে নেন জাতীয় দলের রাস্তাটা। তবে তিনি সেখানটায় নিজেকে কখনো মেলে ধরতে পারেননি। ১৯৮২ সালের ১২ মার্চ তিনি জন্মেছিলেন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। তিনিও হয়ত হতে পারতেন শোয়েব আখতারের মত বিধ্বংসী।
তবে সেটা আর হয়ে উঠতে পারেননি। ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর অভিষেক হয় পাকিস্তান জাতীয় দলে। তবে সেটা রঙিন পোশাকে। তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি মাঠে নেমেছিলেন। তাঁর হাতে বলও তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর তিনি পাকিস্তানের আর বাকি পেসারদের মতই বিমোহিত করতে পারেননি। কেবল একটি উইকেট নিয়েই সন্তুষ্টির একটা নি:শ্বাস ফেলতে হয়েছিল তাঁকে।
এরপর তিনি খানিকটা নির্বাসনেই চলে গিয়েছিলেন। বছর খানেক বাদে আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলে সুযোগ মেলে। সেখানেও একটিমাত্র উইকেটই জোটে তাঁর কপালে। নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতেই পারছিলেন না জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। অথচ তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার। এমনকি পাঁচ বলের ব্যবধানে ছয় উইকেট পেয়েছিলেন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে।
কিন্তু কোন এক অজানা কারণে তিনি জাতীয় দলে বড্ড বেশি ফিঁকে। আবার বছর চারেক নির্বাসন। ২০০৫ সালে তিনি ফেরেন ওয়ানডে দলে। এরপর ২০০৭ সালের দিকে যখন রীতিমত ইনজুরির ভয়াল থাবায় দিশেহারা পাকিস্তান দল, তখন তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় লাল বল। অভিষেকটা হয়েছিল তাঁর ভারতের বিপক্ষে। অভিষেকে বাজিমাত। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি তুলে নেন সাত উইকেট।
তবে তিনি সেখানেও টিকতে পারলেন না। ওয়াকার ইউনুসের মত সাইড-অন বোলিং অ্যাকশনে বল করতে পারতেন। সুইংও উৎপাদন করতে পারতেন তিনি। বেশ সরব চর্চায় ছিলেন। তবুও কোন এক অজানা কারণে পাকিস্তানের হয়ে তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণটাই আর কখনো করতে পারেননি।
হতাশার মহাসমুদ্রে ডুব তো তাঁরই দেওয়ার কথা ছিল। তবে না তিনি হতাশাকে সময় না দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের প্রসারের সাথে সাথে বহু খেলোয়াড় বনে যান ফ্রিল্যান্সার ক্রিকেটার।
ইয়াসিন আরাফাত নিজেকেও তেমনই একজন ক্রিকেটারে পরিণত করেন। এর আগে অবশ্য তিনি লম্বা সময় ধরে খেলেছেন কাউন্টি ক্রিকেট। বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের সাথে খেলে নিজেকে সদা প্রস্তুতই রেখেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে ভাল কিছু করবেন বলে। কিন্তু তা আর করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। সে নিয়ে আক্ষেপ হয় নিশ্চয়ই। তবে আক্ষেপটা খানিকটা ঘুচে যায় ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরে।
মাত্র ১১টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি সেই সাথে কেবলমাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি পাকিস্তানের জার্সি গায়ে। তবে তাঁর বিভিন্ন টুর্নামেন্ট মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ২২৬ ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে এই যে উইকেট নিয়ে এত আলোচনার মাঝে নিজের ব্যাটার সত্ত্বার প্রমাণটাও ঠিকমত রাখতে পারেননি ইয়াসির আরাফাত। তবে মূলত একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই তিনি ক্রিকেটটাকে আপন করে নিয়েছিলেন।
সব তারকা যে জ্বলজ্বল করে না এর আরও একটি উদাহরণ হয়ে রইলেন ইয়াসির আরাফাত। সম্ভাবনার মশাল জ্বালিয়েও অঙ্কুরেই নিভে যায় সকল আলোর উৎস।