শাসক হতে চান না, ১৫ জনকে সাথে নিয়ে চলতে চান। রাজা হতে চান না, হতে চান চাকর। মানুষটা সাদা বলের নব্য অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। ওই ১৫ জন মানুষকে একসাথে পাকিস্তান দল বলা যায়।
কিন্তু, ১৫ জনের এই দলটা এক সাথে থাকছে কোথায়! দলের মধ্যে হাজারো বিভাজন, যেটা পাকিস্তানের গণমাধ্যমে একটু চোখ বুলালেই স্পষ্ট হয়ে যায়। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে সাদা বলের জন্য। সেটাও হাতে আর কোনো ‘বিকল্প’ নেই বললে।
বাবর আজম কিংবা শাহীন শাহ আফ্রিদি – এর আগে দু’জনই অধিনায়কত্ব নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ছেলেখেলা করে গেছেন। বাবরকে সরিয়ে শাহীনকে বসানো হয়েছিল, এক সিরিজ পর বাবরকে ফেরানো হল। তিনি দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গেলেন।
দলের জন্য চরম লজ্জা নিয়ে ফিরে আসলেন। বিশ্বকাপে কানাডার মত দলের বিপক্ষেও সংগ্রাম করে জিততে হয়েছে পাকিস্তানকে। বাবর আবার ছেড়ে দেন অধিনায়কত্বের কণ্টকশয্যা। এবার আর কোনো উপায়ান্তর না দেখেই অধিনায়ক রিজওয়ান।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) রিজওয়ানে ভবিষ্যতের নেতা দেখতে পেয়েছে, তাঁর ওপর অগাধ আস্থা আছে, কোনো ভিশন আছে এই সিদ্ধান্তের পেছনে – এমন কোনো ব্যাপার এখানে নেই। স্রেফ একজনকে দিতে হবে বলেই দেওয়া। সেখানে রিজওয়ানও পড়ে গেছেন এক অকূল পাথারে।
রিজওয়ানও জানেন, এই দলের জন্য আপাতত সাফল্যের চেয়েও এক হয়ে খেলাটা জরুরী। সেজন্যই তিনি রাজা-চাকরের থিওরি নিয়ে হাজির হয়েছেন। আদতে, রিজওয়ান যে মানের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব তাতে তিনি নিজেও এমন এক পরিস্থিতির পাকিস্তান দল ‘ডিজার্ভ’ করেন না।
এই পরিস্থিতিতে দলকে তাতিয়ে দেওয়ার মত একজন নেতা দরকার। অনেকটা ইমরান খান ঘরানার। তেমন ফিগার পাকিস্তানে আর অবশিষ্ট নেই এখন। সরফরাজ আহমেদের যুগ হয়েছে বাসি।
পাকিস্তানের অবস্থা মন্দ ছিল না এতটাও। ২০২৩-এর এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত তাঁরা সাদা বলে বিশ্বের অন্যতম সেরা ছিল। বোলিং আক্রমণ বিশেষ করে পেস আক্রমণ ছিল বিশ্বের অবিসংবাদিত সেরা। কিন্তু, এশিয়া কাপের মঞ্চে এক ভারতের বিপক্ষে হার তাঁদের ছিটকে ফেলে। নিয়ে যায় খাদের কিনারায়।
পতনের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান টানা দু’টো আইসিসি ইভেন্টের মঞ্চে মুখ থুবড়ে পড়ে। অন্দরমহলের গণ্ডগোল সামনে চলে আসে। দলে বিভাজন এতটাই প্রগাঢ় যে, বিদেশি নামি দামি কোচদের কাছেও এর কোনো সমাধান নেই।
তাঁদের মনও পাকিস্তানে এসে মুহূর্তের মধ্যেই অশান্ত হয়ে ওঠে। গেল এপ্রিলে দুই বছরের জন্য পাকিস্তানের সাদা বলের কোচ হয়ে আসা গ্যারি কার্স্টেনরা কাজ ছেড়ে চলে যান মেয়াদ ছয় মাস যেতে না যেতেই। এতটাই যাচ্ছেতাই আর ঘোলাটে পাকিস্তানের পরিস্থিতি। সাথে অধিনায়কত্বের মিউজিক্যাল চেয়ার তো আছেই।
মিউজিক্যাল চেয়ারে এবার রিজওয়ান। রিজওয়ান টিকে গেলে ঠিক আছে, না টিকলে মিউজিক্যাল চেয়ারের এই মিউজিক করুণ বিউগলের সুরে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না!