বছর দুয়েক আগে বলেছিলাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলে সে সময়ে যতজন ফাস্ট বোলার ছিলেন, তাদের মধ্যে শরিফুল ইসলামের বোলিং অ্যাকশন সবথেকে সুন্দর। খুবই ইজি, স্মুথ বোলিং একশন, আর্ম মুভমেন্টের কোন যায়গায় পজ (pause) দিতে হয় না, রিভার্স মুভমেন্টের (তাসকিন, বুমরাহ, ব্রেট লি কিংবা অধিকাংশ ফাস্ট বোলারকেই এটা করতে হয়) দরকার পরে না এবং আর্মের সম্পূর্ণ মুভমেন্ট শরীরের বেশ কাছাকাছি হয়।
ফলে রিস্ট পজিশন যথেষ্ট স্ট্রং হওয়ার কথা। এই ধরনের বোলারদের কন্ট্রোল এবং সুইং অন্যান্য বোলারদের থেকে ভালো হবে। এক্সপ্রেস গতির বোলার তারা হবেন না কিন্তু ডিসেন্ট একটা গতি বজায় রাখতে পারবেন। এবং এই গতি বজায় রাখতে কিংবা কিছুটা বাড়াতে, তাদের এক্সট্রা এফোর্ট দিতে হয় না।
এবং সত্য বলতে, আমি শরিফুলের উন্নতি নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত ছিলাম। সুইংয়ের জন্য রিস্ট পজিশনের সাথে রিলিজ, অ্যাঙ্গেল অনেক কিছু জড়িত এবং সেটা হুট করেই হয়ে যায় না। কিন্তু এই একশনে বলের উপরে কন্ট্রোল তো মোটামুটি ফিক্স হয়েই আসে। শরিফুলের কন্ট্রোল নিয়েই মূলত আমার বিরক্তি। কারণ হতে পারে, তার রিস্ট/রিস্ট পজিশন স্ট্যাবল নয়।
এই বছরের ম্যাচগুলো দেখে কন্ট্রোল নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠি। এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেখা মিললো সুইংয়ের। বোঝা গেলো কন্ট্রোল এবং সুইং নিয়ে তিনি বেশ কাজ করেছেন/করছেন। ম্যাচের রেজাল্টের বাইরে গিয়েও বেশ কয়েকটি কারণে এই সুইং আদায় করতে পারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, গতকালকের ম্যাচে দুই দলের অন্য কোন বোলাররা সুইং আদায় করতে পারেন নি। সিম, সুইংয়ের জন্য বিখ্যাত তাসকিন কিংবা ফারুকীও এই উইকেট থেকে সুইং আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ শরীফুলের রিস্ট পজিশন এবং রিলিজ যথেষ্ট স্ট্যাবল হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, তিনি সবথেকে কঠিন কিন্তু ইফেক্টিভ ইনসুইংকে আয়ত্ত করেছেন। সাধারণত বোলারদের সুইং করানোর জন্য রিস্ট, বলের সিম বাকিয়ে সুইংয়ের জন্য এংগেল তৈরি করতে হয়। বোঝার জন্য স্টার্কের বোলিং ফলো করতে পারেন, তিনি কিভাবে অ্যাঙ্গেল তৈরি করেন।
শরীফুল সেটি করেন নি, তিনি মধ্যমার সাহায্যে বল রিলিজের শেষ মূহুর্তে বলকে ফ্লিক করে এংগেল করেছেন, তার রিস্ট সোজাই ছিলো। ফলে, বল বাতাসে একটা কার্ভ তৈরি করে। ডানহাতি ব্যাটারদের জন্য বল বাতাসে বের হতে হতে শেষ মূহুর্তে কার্ভ করে ভিতরে আসে। ফলে, ব্যাটারদের প্রাথমিক ইন্টেশন থাকে এই বল অফ সাইড থেকে খেলার। এবং সে অনুযায়ী তারা ফুট মুভমেন্ট করেন।
কেউ বলের লাইনে যাওয়ার জন্য ফ্রন্ট ফুট এক্রোস দ্যা লাইন নিয়ে যান, কেউ রুম ক্রিয়েট করার জন্য ব্যাট এবং শরীরের মধ্যে ফাকা জায়গা তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত যখন বল শরীরের ভিতরে চলে আসে, বল মোকাবেলা করার জন্য ব্যাটারদের নিজের শরীর কিংবা ওই গ্যাপ শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। লাহোরে গুরবাজ একারণেই বারবার বিপদে পড়ছিলেন। কিংবা শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম স্পেল এ কারণেই এত ভয়ঙ্কর। আঙুলের মাধ্যমে সুইং কন্ট্রোল করা বোলার কোন সময়েই খুব বেশি সংখ্যক ছিলেন না।
তৃতীয়ত, গতকাল শরীফুল তৃতীয় স্পেলে এসে পুরোনো বলে দুইদিকেই সুইং আদায় করেছেন। আমি নিশ্চিত নই, এই সুইং রিভার্স ছিলো না কি প্রথাগত। সম্প্রচারকরাও এই অংশে খুব মনোযোগী ছিলেন না। যদি কোন বোলার, ৩৮-৪০ ওভারের সময় এসে ২০ ওভার পুরনো বলে সুইং করাতে পারেন, অধিকাংশ দিনেই তিনি প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারবেন। মিডল অর্ডার, লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটাররা সাধারণত সুইং খেলে অভ্যস্ত নয়, তাদের প্রিপারেশনেও এই অংশের খুব বেশি ভূমিকা থাকে না।
শরীফুল যদি তার নন বোলিং আর্মকে আরেকটু হাই রেখে ব্যবহার করেন, আউটসুইং এর ক্ষেত্রেও বেশ ভালো কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন। তাসকিনও এটি নিয়ে কাজ করছে ইনসুইংকে কার্যকর করার জন্য। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ফাস্ট বোলিংয়ে আমাদের সুদিন দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে।