ব্যথিত চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন জয়ের মহাকাব্য

তিনি বাইশ গজে ঝড়, মাঠের বাইরে তিনি অনুপ্রেরণা। তিনি গল্পের নায়ক নয়, তিনি নিজেই একজন গল্পকার। যে গল্প জায়গা করে নেয় হৃদয়ে।

এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে ট্রফি। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে বিশ্বজয়ের শিরোপা। কি অভাবনীয় এক দৃশ্য! ডি ভিলিয়ার্সের পায়ে তখনও প্যাড। ব্যাটিং শেষ করেই যে তিনি নেমে গেছেন ট্রফির উদযাপনে।

শরীর ও ভেতরের আগুন—দুটোর টানাপোড়েন নিয়েই মাঠে নামলেন তিনি। ব্যথায় কুঁজো হয়ে হাঁটছিলেন, যেন দেহ আর নিতে পারছিল না বোঝা। তবুও ব্যাটটা হাতে তুলে নিলেন ঠিকই। প্রতিপক্ষ যখন ভাবছিল, আজ এবি ডি ভিলিয়ার্সকে থামানো সহজ – তখনই শুরু হল সেই চিরচেনা ঝড়।

ফাইনাল ম্যাচ। চাপে গুঁড়িয়ে যাওয়ার নয়, বরং চাপকে পুঁজি করে উড়ে যাওয়ার মঞ্চ। সে মঞ্চে ৬০ বলে ১২০ রান, আর তার ভেতর মাত্র ৪৭ বলে সেঞ্চুরি—এ যেন কেবল ইনিংস নয়, কবিতা। প্রতি শটে ছিল ব্যথার আর্তনাদ, আর প্রত্যাঘাতে—অদম্য মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।

ডি ভিলিয়ার্স এক পায়ে খেলে গেলেন পুরো ম্যাচ। বোঝাই যাচ্ছিল তিনি খোড়াচ্ছিলেন। সিঙ্গেল-ডাবল নিচ্ছেন, ডাইভ দিয়ে উইকেট বাঁচাচ্ছেন,  নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন—যেন ব্যাথার নামই নেই তার অভিধানে। জয় নিশ্চিতই ছিল, চাইলেই উঠে যেতে পারতেন ডি ভিলিয়ার্স, যাননি – কারণ খেলাটাকে তিনি ভালবাসেন – প্রোটিয়া জার্সিতে একটা শিরোপা জয় তাঁর বহুদিনের অধরা স্বপ্ন।

টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি করলেন। এই বয়সে, এই শরীর নিয়ে, সেই চিরচেনা আগুন দিয়ে মাখিয়ে খেললেন। প্রতিপক্ষের হৃদয়স্পন্দন কাঁপিয়ে দিয়ে জিতলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেকরা এখন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসের চ্যাম্পিয়ন দল।

ফিজিও তো বলেই দিয়েছিল—‘ফাইনাল খেলা অসম্ভব।’ ব্যাক ইস্যু, হ্যামস্ট্রিং, থাই সমস্যা—সব ছিল। তবু মাঠে নামলেন এবিডি। খেললেন। জিতলেন। শিরোপা হাতে নিয়ে উদযাপন করলেন। আর ম্যাচ শেষে—সেদিনও সময় বের করে নিলেন পরিবারের জন্য।

কারণ মাঠের যোদ্ধা হলেও, মনের গভীরে তিনি একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন পুরোদস্তর ফ্যামিলিম্যান। তিনি বাইশ গজে ঝড়, মাঠের বাইরে তিনি অনুপ্রেরণা। তিনি গল্পের নায়ক নয়, তিনি নিজেই একজন গল্পকার। যে গল্প জায়গা করে নেয় হৃদয়ে।

Share via
Copy link