তানজিম হাসান সাকিব যেন জ্বলন্ত অগ্নি গোলক। তাতে যতই আঘাত করা হোক না কেন, সেই আঘাত সয়ে নেবে। নিজেকে করে তুলবে দৃঢ়। নেবে দারুণ এক আকৃতি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে তেমন একটা কিছুর মঞ্চায়নই করলেন তরুণ এই পেসার।
প্রথম ওভারে তিনি বল করতে এলেন, তার সামনে তখন কুইন্টন ডি কক। দ্বিতীয় বলটায় ছক্কা, তৃতীয় বলে চার। দুই বলেই ১০ রান দিয়ে ফেললেন সাকিব। নিউ ইয়োর্কের উইকেট যেন পুরো ব্যাটিং উইকেটে পরিণত হয়ে গেছে। খালি চোখে দেখে অন্তত তেমনটাই ভাবতে শুরু করেছিল অনেকে। ডি কক অবলীলায় ব্যাট চালাচ্ছিলেন বলেই সেই ধারণার জন্ম নিয়েছে।
তবে সাকিব হাল ছাড়লেন না। তিনি কখনোই খুব দ্রুত হার মেনে নেননা। নিজের সময়টার জন্যে অপেক্ষা করলেন। প্রথম ওভারেই এসে গেল সেই সময়। শেষ বলটায় উইকেট তুলে নিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তবে কুইন্টন ডি কক নন, লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন রিজা হেন্ড্রিকস। তিনি যেন বলের লাইন আর গতি ধরতেই পারলেন না।
দ্বিতীয় ওভারটা কোনমতে টিকে গেলেন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় ওভারে তানজিম সাকিব আবার এলেন বোলিংয়ে। ওই যে প্রথম ওভারের আঘাত পুষে রেখেছিলেন নিজের মধ্যে। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই গতির তারতম্য ঘটালেন। এবারে লাইন ও লেন্থও হল ভাল। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে একটি বলকে ব্যাটেরে ভেতরের দিকে ঢোকালেন।
ব্যাস! ছত্রখান হয়ে গেল ডি ককের উইকেট। উল্লাসে ভাসলেন তানজিম হাসান সাকিব। শেষ হাসিটা তিনিই হাসলেন। দারুণভাবেই ফিরে এলেন। সেই ওভারে কোন রানই নিতে দিলেন না ডানহাতি এই পেসার। তবে ভুলক্রমে একটি বল হয়েছিল ওয়াইড। স্ট্রিস্টান স্টাবস দেখেশুনে তানজিমের ওভার পেরিয়ে গেলেন।
দারুণ ছন্দে রয়েছেন তানজিম সাকিব। তাইতো অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাকে আবারও নিয়ে এলেন বোলিং প্রান্তে। এক ছটাক নিরাশ করেননি টাইগার পেসার। নিজের তৃতীয় ওভারের শুরুতেই সেই স্টাবসকে ফেরালেন তানজিম। এবার কাভার অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আল হাসান ক্যাচ লুফে নিলেন।
শুরুর ওভারে ১১ রান হজম করা তানজিম সাকিব এরপর নিজের ২ ওভারে দিয়েছেন ২টি রান। প্রতিটি ওভারেই একটি করে উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং দূর্গকে একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দেন। দারুণ লাইন-লেন্থের বোলিং, আগ্রাসী মনোভাব, আর হাল না ছাড়ার মানসিকতার পুরষ্কারই পেলেন সাকিব।
তার সেই ওপেনিং স্পেলে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করে টাইগাররা। ওমন অসাধারণ বোলিং প্রদর্শন তো আর সচারচর দেখা মেলে না। পাওয়ার প্লে-তে তাকে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানরা। তাইতো ৬ ওভার শেষে প্রোটিয়াদের রান ছিল ২৫ রান ৪ উইকেটের বিনিময়ে।