শ্রীলঙ্কার গলের মাটিকে বলা হয় স্পিনারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। এমন উইকেটে পেসারদের ভাল করার সম্ভাবনা কমই বটে। অন্তত অতীত ইতিহাস সেই সাক্ষই দেয়। লাল বলের ক্রিকেটে এই মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেটে শিকারীর ৫ জনের মধ্যে নেই কোনো পেসার।
কিন্তু লঙ্কা সফরে গিয়ে গলের মাটিতে রীতিমত পেস প্রতাপ ছড়িয়েছেন নাসিম শাহ-শাহীন শাহ আফ্রিদি জুটি। স্পিন সহায়ক উইকেটেও প্রথম ইনিংস শ্রীলঙ্কার স্বীকৃত ব্যাটারদের গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এ দুই পেসার।
গত বছরের জুলাইয়ে ইনজুরিতে পড়ার পর এই প্রথম বারের মতো লাল বলের ক্রিকেটে খেলতে নেমেছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। প্রত্যাবর্তনটা তাই রাঙিয়ে রাখলেন নিজস্ব স্টাইলেই। নিশান মাদুশকাকে ফিরিয়ে ছুঁয়ে ফেললেন শততম টেস্ট উইকেটের মাইল ফলক। এরপর আরো দুই টপ অর্ডার ব্যাটার করুণারত্নে আর কুশাল মেন্ডিস — দু’জনকেই ফিরিয়েছেন।
শাহীন আফ্রিদির এমন বোলিংয়ের লঙ্কানদের মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরিয়েছিলেন আরেক পেসার নাসিম শাহ। চান্দিমালকে দিয়ে শুরু। এরপর তাঁর বোলিংয়ে তোপে পরাভূত হয়ে মাথা নিচু করে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়েছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর প্রভাত জয়াসুরিয়াকে।
শাহীন কিংবা নাসিম, কেউই এ ইনিংসে ফাইফার পাননি। দুজনের ঝুলিতেই গিয়েছে ৩ টি করে উইকেট। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ধস শুরু হয়েছিল এই দুই বোলারের কল্যাণেই। প্রথম দিনশেষে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের কণ্ঠেও ঝরেছে প্রশংসার সুর। স্পিন সহায়ক উইকেট সত্ত্বেও নাসিম-শাহীনকে নাকি খেলতেই বেশি সমস্যা হয়েছে লঙ্কান ব্যাটারদের।
নাসিম শাহ-শাহীন শাহ, এই দুই ‘শাহ’কে অবশ্য একসাথে টেস্টে খুব বেশি দেখাও যায়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ ইনিংসে এই দুই পেসার এক সঙ্গে খেলেছেন। তবে গল টেস্টে এই জুটি যা দেখালেন তাতে পাকিস্তান আরেক ওয়াকার-ওয়াসিম জুটির কথা কল্পনাই করতে পারে।
এমনিতে পাকিস্তানকে তো পেসারদের একরকম খনিই বলা যায়। কতশত পেসারের উত্থান যে এই এক দেশ থেকেই হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তার মধ্যে কিংবদন্তীতুল্য পর্যায়েও গিয়েছে বেশ ক’জন। সেই স্রোত ধারায় এখন পাকিস্তানের পেস বোলিং ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে কাজ করছেন শাহীন, নাসিম শাহরা।
না। শাহীন-নাসিম জুটি টেস্ট ক্রিকেটে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়নি। টেস্ট ক্রিকেট এই জুটি দেখেছে মাত্র ১৯ বার। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে, এই নগণ্য সংখ্যাটা যখন অগ্রগণ্য সংখ্যায় পৌঁছাবে, তখন তাদের পরিসংখ্যানটা ঠিক কতটা সমৃদ্ধ হয়।
নাসিম শাহ, শাহীন শাহ— দুজনই এখন পাকিস্তানের অটোমেটিক চয়েস। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন দুজনই। তাই, ইনজুরি যদি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় তাহলে শাহীন-নাসিম জুটি যে পরবর্তীতে টেস্ট আঙিনায় বিশ্বজয় করতে পারে, সে কথা বলাই যায়।