লোকেশ রাহুল ও সাপলুডু খেলা

প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা সময় আসে যখন মনে হয় গোটা পৃথিবীটাই বুঝি আমার বিপক্ষে আছে। ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলও সম্ভবত এমনটাই ভাবছেন। বোর্ডার – গাভাস্কার ট্রফির শেষ দুই টেস্টের স্কোয়াডে রাহুল জায়গা পাবার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সিরিজেও নিজের রানখরা থেকে বেরোতে পারেননি রাহুল। দিল্লীতে দ্বিতীয় ইনিংসেও ১১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নাথান লিঁও’র বলে আউট হয়ে যান তৃতীয় বলেই। সর্বশেষ নয় ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস মাত্র ২৩ রানের। সবমিলিয়ে শেষ দুই টেস্টের আগে ভীষণ চাপে আছেন এই ব্যাটার। 

এই দুঃসময়েও অবশ্য ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সমর্থন পাচ্ছেন রাহুল। সংবাদ সম্মেলনে রোহিত জানিয়েছেন এখনো তাঁকেই ওপেনার হিসেবে ভাবছে দল। এছাড়া তিনি স্মরণ করিয়ে দেন লর্ডস এবং সেঞ্চুরিয়নে রাহুলের সেঞ্চুরির কথা।

রোহিত বলেন, ‘আমরা জানি তাঁর রান না করা নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট সবসময় একজন ক্রিকেটারের সামর্থ্য এবং প্রতিভাকে গুরুত্ব দেয়। কেবল রাহুল নয়, অতীতে আরো অনেক ক্রিকেটারের বেলাতেও একই নীতিতে এগিয়েছি আমরা। আমরা জানি যদি কারো প্রতিভা থাকে, তবে সে রান পাবেই।’

রোহিত আরো বলেন, ‘আপনি যদি ভারতের বাইরে দারুণ কিছু সেঞ্চুরির কথা বলেন, তাহলে রাহুলের নাম আসবেই। লর্ডসের কথাই ধরুন না, টস হেরে ব্যাটিং পাবার পর ইংল্যান্ডের অমন কন্ডিশনে সে সেঞ্চুরি করেছিল। তারপর সেঞ্চুরিয়নেও সে তাঁর প্রতিভার জানান দিয়েছে। দুটো ম্যাচেই ভারতের জয়ে তাঁর বড় অবদান ছিল। আমরা জানি মাঠের বাইরে অনেক কথা হচ্ছে। তবে তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের।’

তবে টিম ম্যানেজমেন্ট এমনটা জানালেও, বিসিসিআইয়ের স্কোয়াড ঘোষণা কিন্তু ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেষ দুই টেস্টের জন্য কোনো সহঅধিনায়কের নাম জানায়নি নির্বাচক কমিটি, এতদিন যে দায়িত্বটা পালন করেছেন রাহুল। এছাড়া রোহিতের ইনজুরির সুবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন এই ওপেনার। 

সহ অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া তাই রাহুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের জন্য অশনি সংকেত। অবশ্য এছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না নির্বাচকদের হাতে। দল ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটাররা পর্যন্ত রাহুলকে দলে রাখা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। 

রোহিত হয়তো নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দিনগুলোর কথা স্মরণ করে রাহুলের প্রতি সহমর্মিতা বোধ করছেন। ২০০৭ সালে যখন রোহিত যখন জাতীয় দলে আসেন, তখন শুরুতেই জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি। পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে কেটে গেছে ছয় বছর।

সাদা বলে অভিষেকের ছয় বছর বাদে ২০১৩ সালে টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। শুরুর দুই টেস্টে রান পাননি, মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে হয়েছে, বাদ পড়েছেন বারবার – সবমিলিয়ে রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ার কেটেছে ভীষণ উত্থান – পতনের মাঝে। ২০১৯ সালের পর থেকেই মূলত তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হন রোহিত। মাঝের এই সময়টাতে রোহিতকে প্রচুর সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। 

কারো প্রতি এটা হয়তো অবিচারও হতে পারে। তবে কিছু ক্রিকেটার আছেন যাদের কিনা টেকনিক ভালো, উইকেটের চারপাশে শট খেলতে জানেন, বাউন্সি এবং স্লো দুই ধরনের পিচেই সমান সাবলীল অথচ আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় মানিয়ে নিতে বেশ সময় নিয়ে ফেলেন। নির্বাচকরাও এটা জানেন, সে কারণেই তাঁরা দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং বাজিয়ে দেখতে চান।

কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে রাহুল যেন উল্টো পথ হাঁটছেন। ৪৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে রাহুলের গড় ৩৩.৪৪। অথচ ২০১৮ সালের পর থেকে রান করছেন মোটে ২৫.৮২ গড়ে, এই সময়ে ৪৮ ইনিংসে ৫০ ছাড়াতে পেরেছেন মোটে ছয়বার। 

ইন্দোরে হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে রাহুলের বদলে শুভমান গিলকে খেলাতে পারে। সাদা বলের ক্রিকেটে শুভমান ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন। কিন্তু অঘটন না ঘটলে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট রাহুলকেই খেলাবে। যেমনটা তাঁরা করেছিল রোহিত শর্মার সাথে, একই পথে তাঁরা এগোচ্ছে রাহুলের জন্যেও। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link