শেষ বলে তখন জয়ের জন্য দরকার চার রান। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনিও কি তখন কুল ছিলেন?
বোঝা গেল না। তিনি চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসেছিলেন। ভেতরটায় নিশ্চয়ই ঝড় চলছিল। মাহিকে এই অবস্থায় আগে কখনও কি দেখা গেছে! স্মৃতিতে তেমন কোনো স্মৃতি ভাসে না।
ম্যাচটা শেষ হল। শেষ করলেন রবীন্দ্র জাদেজা। এক দৌঁড়ে চলে আসলেন মাহির কাছে। যেন প্রায় কোলেই উঠে পড়লেন। অধিনায়ক মাহি তখন হাসছেন।
এই হাসিটা খুব চেনা, খুবই আপন। এ যেন ভূবনমোহিনী সেই সব ক্লাসিক নাটকের পুনর্মঞ্চায়ন। কী দারুণ একটা মুহূর্ত, কী অপরূপ এক দৃশ্য।
মাহির ক্যারিয়ারটা শেষ হল, কিংবা হল না। তিনি নিজেই বলে রেখেছেন শরীরটা সাথে থাকলে খেলতে চান আগামী বছরও। তবুও এটাকেই যদি শেষ ধরা হয় – তাহলে এর চেয়ে রঙিন হওয়ার কোনো উপায় ছিল না এই বিদায়ের।
অধিনায়ক মাহির হাতে আরেকটি শিরোপা। অধিনায়কত্বের মুকুটে শেষ আরেকটা পালক। এমন অর্জন তো তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু, তারপরও আবেগটা ছুঁয়ে গেল। ‘পাল দো পাল কা শায়ের’-দেরও কখনও কখনও আবেগ ছুঁয়ে যেতে পারে।
২০০৪ সালে চট্টগ্রামে এই ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে শূন্য রানে রান আউট হন। তারপর মাঝখানে কেটে গেল পাক্কা ১৯ টা বছর। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য ১৯ টি বছর।
যাত্রাটা থামল ২০১৩ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। এবারও প্রথম বলেই শূন্য রান। মোহিত শর্মার বলে ক্যাচ তুলে দিলেন ডেভিড মিলারের হাতে।
এই চিত্রনাট্যটা কার লেখা। প্রথম আর শেষের কি অদ্ভুত মিল। গোল্ডেন ডাকে শুরু, গোল্ডেন ডাকে শেষ। একটা বৃত্তের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে একটা সোনালি চক্র পূরণ হল।
মাঝের সময়টা আক্ষরিক অর্থেই সোনায় মোড়ানো। অর্জন, অধিনায়কত্ব আর ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করা – এই সব কিছুকেই রীতিমত শিল্পে পরিণত করে তবেই যাচ্ছেন মাহি।
শূন্যে শুরু, শূন্যে শেষ – আর মাঝখানে রেখে যাওয়া অনন্য সব কীর্তি। দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপ, আইপিএল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, দেশকে টেস্টে এক নম্বর করা – কি নেই সেই কীর্তির বৃত্তে।
ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি আউট সাইডার। বোর্ড না পারতে তাঁর হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছিল। তিনি গোটা ক্যারিয়ারে কখনওই এতটা ‘সুগার-কোটেড’ ছিলেন না যে কারও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন।
তবে, এটা ঠিক তিনি ভারতীয় প্রবল প্ররাক্রমশালী হয়ে ওঠা ভারতীয় ক্রিকেট দর্শকদের পোস্টার বয়। ভারতের যে প্রান্তেই চেন্নাই সুপার কিংস খেলুক না কেন, প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন – গ্যালারি হলুদে উত্তাল হবেই।
কারণ, ওই দলটাতে মাহি খেলেন, ওই দলটার হয়েই টস করতে নামেন, ওই দলটার সুখ-দু:খের সাথী তিনি। এক জন্মে সবাই সব কিছু পান না, কিন্তু মাহিকে নিয়তি সব কিছুই দিয়ে গেল হাত ভরে।