রিয়াল মাদ্রিদ এর ইতিহাসে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর অবদান মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে। আপনি কি রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যু এর কথা ভাবছেন? হ্যাঁ, রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে এই মাঠের অবদানও কম নয়। তবে আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম নয়; বলা হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দে ইয়েস্তে এর কথা।
তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর লস ব্ল্যাঙ্কোসদের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। তার এই সময়ে দলটি ছোটবড় মিলিয়ে ৭০টি ট্রফি জিতেছে। তবে শুধু ট্রফির সংখ্যা দিয়ে তার অবদান বোঝা যায় না। বরং স্প্যানিশ ক্লাবটির আজকের রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে উঠার গল্পের একক নায়ক ডন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।
সান্তিয়াগো ১৮৯৫ সালে আলবাসেটে-তে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ছোটবেলাতেই তাঁর পরিবার রাজধানী রিয়াল মাদ্রিদে চলে যায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল দেয়ার সুযোগ পান। মজার ব্যাপার, বার্নাব্যু একসময় গোলরক্ষক হিসেবে খেলতে চাইতেন। তবে তার ভাই মার্সেলো বার্নাব্যুয়ের জেদের কারণে ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলা শুরু করেন।
যাহোক সতেরো বছর বয়সে তিনি প্রথম মূল দলে জায়গা করে নেন। একসময় তিনি রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক হয়েছিলেন। অবশেষে ১৫ বছর পর ১৯২৭ সালে তিনি তার বুট ঝুলিয়ে রাখেন। অবসর নেয়ার পরেও বার্নাব্যুকে প্রায়ই রিয়াল মাদ্রিদ এর ম্যাচে দর্শক এর ভূমিকায় পাওয়া যেত এমনকি ১৯২৮ সালে তিনি ক্লাব এর কোচ হিসেবেও ছিলেন।
১৯৪০ সালের দিকে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা ছিল একেবারে ভঙ্গুর। আর এসময় ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। দায়িত্ব নেয়ার পরে বার্নাব্যু এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেন যা ধীরে ধীরে ক্লাবের অবস্থা বদলে দেয়।
তার সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল এক লক্ষ দর্শক ধারণক্ষমতার নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা। অথচ রিয়াল মাদ্রিদের তৎকালীন স্টেডিয়ামে গড়ে মাত্র ১৬ হাজার দর্শক খেলা দেখতে আসতো। কিন্তু পরবর্তীতে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ খরচের অনেক বড় অংশই এসেছিল ক্লাবের সমর্থকদের কাছ থেকেই। এসময় তিনি রিয়াল মাদ্রিদের ফ্যান ক্লাবগুলোকে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছিলেন। স্টেডিয়াম পুনঃনিরমান পাশাপাশি তিনি উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধার ব্যবস্থা করেছিলেন।
সান্তিয়াগো রিয়াল মাদ্রিদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছিলেন। এবং একজন আলাদা ব্যক্তি ক্লাবের প্রতিটি বিভাগের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার সভাপতিত্বেই প্রথম পেশাদার কোচিং দল গঠন করেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
এছাড়া বার্নাব্যুয়ের আমলেই ক্লাবের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। এমন সাফল্যের কারণে তখন ক্লাবে বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর কাজ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় পাকো হেন্তো, আলফ্রেড ডি স্টেফানো, পুসকাস এর মত খেলোয়াড়রা রিয়ালে খেলার সুযোগ পান।
ইউরোপিয়ান কাপ এর শুরুর পেছনেও অবদান ছিল বার্নাব্যুয়ের। তারই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তখন টানা ৫ টি ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেয়, যেই রেকর্ড ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি ।
১৯৫২ সালে সান্তিয়াগো’র প্রচেষ্টায় রিয়াল মাদ্রিদের ক্লাব অ্যান্থেম ‘আলা মাদ্রিদ’ এর সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ফুটবলের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদের বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল ও ভলিবল দলের দিকে মনোযোগ দেন সান্তিয়াগো।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যু রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে এতটাই প্রতিনিধিত্ব করেছেন যে ক্লাব থেকে তাকে আলাদা করা অসম্ভব বটে। তিনি তার সমস্ত জীবন প্রিয় দলের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। একজন খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, পরিচালক এবং সভাপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য তার সমস্ত কিছু দিয়েছিলেন। তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে সত্যিকারের একটি দুর্দান্ত ক্লাবে পরিণত করেছেন।
অল হোয়াইটদের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এনে দেয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রনী ভুমিকা ছিল সান্তিয়াগো’র। তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনার কারণেই রিয়াল মাদ্রিদ আজ বিশ্বের সেরা ক্লাব। তার এমন অবদানের কথা ভুলেনি ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ। তারই সম্মানে অল হোয়াইটদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর নামে। এখনো বিশ্বের ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্টরা তার পথ অনুসরণ করে; আজও রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা তার মতাদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে।