সৌম্য সরকারের একটা লফটেড স্টেট ড্রাইভ। মিড অফের উপর দিয়ে তা বাউন্ডারিতে পৌঁছে গেল। এরপরের বলেই ঠিকঠাক টাইমিং। শ্রুতিমধুর ধ্বনি। দারুণ কাভার ড্রাইভ লিটন দাসের ব্যাট থেকে। দুই বলের ব্যবধানে খেলা দু’টি ভিন্ন ব্যাটারের শট। তবে দু’টো শটই চোখের শান্তি। মস্তিষ্কে খানিক ডোপামিন নিঃসরণের জন্য তা যথেষ্ট।
লিটন দাস কিংবা সৌম্য সরকার, এই দুইজনের ব্যাটিং প্রচণ্ড উপভোগ্য। ফর্মে থাকা এই দুই ব্যাটার দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং প্রদর্শনের অন্যতম পথিকৃৎ। তা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে না, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে না। এক বাক্যে সবাই হয়ত মেনেই নেবে বিষয়টি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে লিটন, সৌম্য দুইজনই চেষ্টা করেছেন নিজেদের সৌন্দর্যমণ্ডিত ব্যাটিং উপহার দেওয়ার। দুইজনের ব্যাটে ভর করেই সিরিজে সমতায় ফেরার ছক আঁকতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যদিও এই দুই ব্যাটার খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি।
মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। এক ওভার বাদে স্কোয়ার লেগে আটক লিটন দাস। দুইজনের জুটি ভেঙেছিল দলীয় ৬৮ রানে। সেটা অন্তত জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল। সৌম্যর ব্যাট থেকে এদিন এসেছে ২২ বলে ২৬। অন্যদিকে, লিটন করেছেন ২৪ বলে ৩৫।
দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং তাদের কাছ থেকে মেলে ঠিকই। তবে তাদের দারুণ শৈলীর ব্যাটিং বারংবার যেন আক্ষেপ জাগায়। দর্শকদের হতাশায় নোনা জলে ডোবায়। তারা নিজেরাও যেন তাদের প্রতিভার প্রতি পারেন না সঠিক ব্যবহার করতে। তারা নিজেরাও নিজেদের টেক্সটবুক শটগুলোর মূল্যায়ন করেননা যথাযথ। এখানেই যে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়।
তাদের খেলা শটগুলো যতটা না আনন্দের জোগান দেয়, ঠিক ততটাই বিষাদের জন্ম দেয় তাদের আউট হওয়ার ধরণ। সৌম্যর মিসটাইম হওয়া পুল শট কিংবা লিটনের পুরো শট না খেলেও আউট হওয়া চোখে এক দলা বালি ছুড়ে দেয়। তাতে করে মলিন হয়ে যায় তাদের যা কিছু ভাল।
তাছাড়া বলকে ক্লিনহিট করতে পারা বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে তারা দুইজনই থাকবেন উপরের সারিতে। তবুও সৌম্য এক ধীরগতির ইনিংসই যেন খেলে গেলেন। ১১টি বলে কোন রান নিতে পারেননি সৌম্য। ১১৮ এর একটু বেশি স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসটি যেন কোনভাবেই তার প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে না।
ডাগআউটে বসে আছেন দুইজন ওপেনার। যেকোন মুহূর্তে তারা সৌম্যকে হটিয়ে দিয়ে একাদশে জায়গা পেয়ে যেতে পারেন। সেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে যেন সৌম্য ভুলে যান তার যা কিছু ভাল। সে কারণেই মাঝারি মানের এক ব্যাটার রয়ে গেছেন সৌম্য।
একই কথা খাটে লিটন দাসের ক্ষেত্রেও। এদিন ১৫০ স্ট্রাইকরেটের একটা ইনিংস অবশ্য খেলেছেন তিনি। তবে এমন মাঝারি মানের ইনিংস কালেভদ্রে লিটন খেলেন। ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব তার। এমন ২৫-৩০ রান যতটা না উচ্ছ্বাস ছড়ায় তার থেকেও বেশি আক্ষেপ বাড়ায়।
তবুও প্রতিটা ম্যাচেই দর্শকরা নতুন উদ্দ্যম নিয়ে বসে পড়েন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে, টিভি সেটের সামনে। তারা প্রত্যাশা করেন সৌম্য-লিটনদের শটগুলো মুগ্ধতা ছড়াবে। চোখের স্বস্তি জোগাবে। তা হয়, তবে স্থায়ী হয় না বেশিক্ষণ। দর্শকদের সঙ্গী হয় তখন একরাশ ধূসরতা। এই যে চলছে নিয়ম মেনে।