আগের ইনিংসে চার। এই ইনিংসেও চার। লাল রঙা সেই গোলক হাতে তাইজুলকে রুখবে, এই সাধ্য কার! সাদা জার্সিটা গায়ে জড়িয়ে নিলেন যেন ভিন্ন এক চরিত্র তাইজুল। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের স্পিনের ঘূর্ণিপাকে খাবি খাওয়াতে তিনি বড্ড পটু।
তাইতো নিউজিল্যান্ডের তুখোড় ব্যাটিং লাইনআপ ধুকেছে তাইজুলের বিপক্ষে। এক ইনিংসে নয়। দুই ইনিংসেই সমান দাপট দেখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। সিলেট স্টেডিয়ামের চা-বাগানের কোলে থাকা জনপদের রাস্তার মতই যেন বাঁক নেয় তাইজুলের এক একটি বল।
আগের ইনিংসে তিনি উইকেট শিকারের যাত্রা শুরু করেন টম লাথামের উইকেট নিজের করে নিয়ে। এরপর ড্যারিল মিশেল, ইশ সোধি ছাড়াও শতক করা কেন উলিয়ামসনকে ফিরিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল তার শিকারের যাত্রা শুরু করেছেন ‘বড় মাছ’ শিকার করে।
এদফা তার প্রথম শিকার আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কেন উলিয়ামসন। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তিনি স্বল্পতেই ফেরান উলিয়ামসনকে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন প্যাভিলনের পথ ধরেন কিউইদের সেরা ব্যাটার। ১৯ রানের মাথায় নেই নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট। জয়ের লক্ষ্যমাত্রা যে ৩৩২ রান।
এর আগে টপ লাথামকে তো শূন্যরানেই ফিরিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। সেই শুরুর ধাক্কায় সিলেট টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে মাথা তুলে দাড়াবার সুযোগই পায়নি ব্ল্যাকক্যাপসরা। যার সিংহভাগ কৃতীত্ব তাইজুল ইসলামের প্রাপ্য। তিনি যে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার একাই দিয়েছেন ধসিয়ে।
কেন উইলিয়ামসনের পর দ্বিতিয় ইনিংসে তাইজুলের শিকারে পরিণত হন ডেভন কনওয়ে, টম ব্ল্যান্ডেল ও কাইল জেমিসনকে। তাইজুলের বলের ধার ভালভাবে ফুটে ওঠে ব্ল্যান্ডেলের উইকেটে। বেশ তীক্ষ্ম ঘূর্ণি সেই সাথে লাফিয়ে ওঠা বলটায় হতভম্ব হয়ে যান ব্ল্যান্ডেল।
কোন ফাঁকে ব্যাটের আলতো খোঁচা লেগে গেছে, তা যেন বুঝতেই পারেননি নিউজিল্যান্ডের এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। খানিক সময় নিলেও যে তাকে মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। সেটাই হয়ত তাইজুলের আজকের দিনের শেষ উইকেট হতে পারত। তবে তিনি খুব একটা অল্পতে সন্তুষ্ট হন না। তাইতো চতুর্থ উইকেটের জন্যে তিনি জেমিসনকে নিজের শিকারে পরিণত করেছেন।
তাতে করে চতুর্থ দিনের শেষে তাইজুলের নামের পাশে আরও একবার যুক্ত হয়েছে চার উইকেট। পঞ্চম দিনের সকাল বেলা তার কাছে সুযোগ থাকবে ফাইফার তুলে নেওয়ার। প্রথম ইনিংসেও সেই সুযোগ এসেছিল তার সামনে। তবে তিনি সেটা কাজে লাগাতে হয়েছিলেন ব্যর্থ।
এবার অন্তত ব্যর্থ হতে চাইবেন না। ইতিহাসের ঠিক দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ঘরের মাঠের আরও এক পরাশক্তিকে ধারাশায়ী করবার সুবর্ণ সুযোগ। পাশাপাশি নিজের নামটি অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাইজুলের সামনে। মাত্র ৪০ রান খরচ করেছেন তিনি নিজের করা ২০ ওভারে। নিশ্চয়ই পঞ্চম দিনে কোন রান খরচ করতে চাইবেন না। তুলে নিতে চাইবেন সাদা পোশাকে তার ১২তম ফাইফার।