পুনরাবিষ্কার, বিরাট কোহলি ২.০

পরপর ছয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয় নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর, বিশেষ করে বিরাটের, ভক্তরা স্বাভাবিক কারনেই উচ্ছসিত। কারণ, টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনেকটা ফুটবলের টাইব্রেকারের মত – নিজের দিনে যে কেউ জিততে পারে।

সেজন্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম প্রতিযোগিতায় কোন দল পয়েন্ট টেবিলে কোন ক্রমে রয়েছে তার সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচে কে জিতবে তার কোনো সম্পর্ক প্রায়ই থাকছে না। যেমন কোন ব্যাটসম্যান কোন দিন ক্লিক করবে সেটাও কিছুটা র‍্যান্ডম। সেই পরিস্থিতি থেকে পরপর ছয়টি ম্যাচে জয়, শেষেরটি প্রয়োজনীয় মার্জিনে জয়, সত্যিই কৃতিত্বের।

ব্যাটসম্যানের কথা যখন উঠল তখন একজনের নাম কিছুতেই উপেক্ষা করার উপায় নেই। তবে শুরুর দিকে বিরাট ধারাবাহিক থাকলেও তার স্কোরিং রেট সঙ্গত কারনেই সমালোচিত হচ্ছিল। ইন ফ্যাক্ট, যদিও আমি কিছুদিন আগে লিখেছিলাম যে চ্যাম্পিয়নরা যে কোনো দিন ফিরে আসবেন, মনে মনে কিন্তু আমার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল।

কিন্তু বিরাট যে পেরেছেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যে স্পিনারদের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে সিঙ্গল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছিলেন, এখন তিনি তাদের মিড উইকেটের ওপর দিয়ে দর্শকদের মধ্যে ইচ্ছেমত ছুঁড়ে ফেলছেন। পাওয়ার প্লেতে প্রয়োজনীয় বাউন্ডারি মেরে দলকে মোমেন্টাম দিচ্ছেন।

চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে দেখলাম ফাস্ট বোলারকে এমন দুটো পুল মারলেন যা রোহিত শর্মাকেও গর্বিত করবে (অবশ্য রোহিত সাধারণত নিজের শট এতটা স্কয়ার অফ দ্য উইকেট খেলেন না)। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের কথাটা হোল তিনি এই মুহূর্তে শুধু প্রতিযোগিতার হাইয়েস্ট স্কোরারই নন, সবচেয়ে বেশি ছক্কাও তার ব্যাট থেকেই এসেছে (অবশ্য তিনি সম্ভবত এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বলও খেলেছেনে)।

এবং এই সবকিছুই তিনি করেছেন প্রথাগত শট খেলে। হেড, ক্লাসেন, সূর্যদের পেরিয়ে যে তিনি প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান – এই কথাটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, বিশেষ করে আইপিএল-কে মান্যতা দিয়েছে। এমন কিছু দর্শকদের টিভির সামনে বসতে বাধ্য করেছে যারা হয়ত সাধারণত এই ধরনের খেলা এড়িয়ে চলতে চান। তারা ব্যাঙ্গালোর নয়, বিরাট যে প্রতিযোগিতায় টিকে রইলেন সেটা সেলিব্রেট করছেন।

একসময় ভিভ টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচ – দুটোতেই নিজের দাপট দেখিয়েছেন। একই কথা বলা যায় সচিনের ক্ষেত্রেও। কিন্তু তিনটে ফরম্যাটে? এই ক্রাইটেরিয়ায় বিরাটের কাছাকাছি আর কেউ আছেন নাকি? (আধুনিক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সম্ভবত বাবর আজম রয়েছেন। কিন্তু বেশ কিছুটা পেছনে।)

বিশ্বের সব দেশের ক্রিকেটাররা এখন জেনে গেছেন যে বিরাটের সঙ্গে মাঠের মধ্যে সংঘর্ষ মানেই হচ্ছে তার সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করা। তাই হয়ত তারা আজকাল বিরাটকে বেশি ঘাঁটান না। এবং হয়ত সেইজন্যই বিরাট এখন মাঠের বাইরের মানুষদের টার্গেট করছেন নিজেকে তাতানোর জন্যে।

বিশ্বকাপ আসছে। সানি, হার্শা, আকাশ, গম্ভীর – আপনারা তৈরি তো? ভারতের মঙ্গলের কথা ভেবেই না হয় বিরাটের সমালোচনা আরম্ভ করুন এবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link