এমন অবস্থা থেকে অনেক ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ, জিতেছে সামান্যই। আর এবার আর জিতবে কি করে, ব্যাটিংয়ে তো বুড়ো এক যোদ্ধা। বয়সের ভারে যার নাকি আজ আর ব্যাটই চলে না।
অথচ, সাজঘরে ফিরে গেছেন আট ব্যাটার। কোনো স্বীকৃত ব্যাটার নেই ক্রিজে। ওই সময় তো বুড়ো সেই যোদ্ধাকেই ধরতে হবে হাল, দিতে হবে ভরসা – ওড়াতে হবে বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা।
আর সেই বিজয় আসল একটা ছক্কায়। যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম জয় থেকে ১১ রান দূরে দাঁড়িয়ে। বল বাকি মাত্র ১২টা। টি-টোয়েন্টির বিবেচনায় এটা বড় কোনো লক্ষ্য নয়, কিন্তু দলটা যে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় কত ম্যাচ যে তাঁরা হেরেছে, সেই আক্ষেপ তো সব বাংলাদেশিই কম বেশি জানেন।
তবে, এবার আর সেই আক্ষেপ রাখলেন না বুড়ো যোদ্ধা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৯ তম ওভারের প্রথম বলে আসল ছক্কা। দাসুন শানাকার প্রথম বলটা ছিল ফুলটস। এটা সেই ফুলটস যেটা থেকে ২০১৬ সালে চিন্বাস্বামীতে ছক্বা হাঁকাতে ব্যর্থ হন রিয়াদ।
না, এবার আর শানাকাকে হার্দিক পান্ডিয়ার বুনো উল্লাস করতে দেননি। ডালাসে ফিরে আসতে পারেনি ব্যাঙ্গালুরুর সেই কালো রাত। বরং, সেই ছক্কা সহ ওই একই ওভার থেকে আরও পাঁচটা রান আদায় করে নিয়ে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন বিজয়ের বন্দরে। আর বন্দরে ভেড়ানো সেই নাবিক জবাব দিয়েছেন অসংখ্য সমালোচনার। হাজারো বিদ্রূপ, যা তার সঙ্গী হয়েছিল গত কয়েকটা বছর, সে সব উড়ে গেছে এক নিমিষে।
আট বছরের পুরনো আক্ষেপ এবার কিছুটা হলেও কমল, এক ওভারের ছোট্ট একটা স্পেল – সাথে ১৩ বলে ১৬ রানের ক্যামিও – ম্যাচ সেরার পুরস্কার যদিও জিতেছেন রিশাদ হোসেন, তবে বাংলাদেশকে ম্যাচটা জিতিয়েছেন খোদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নীরব নায়ক এবার সরব হয়েছেন।
বাংলাদেশ ভেসেছে বিজয়ের উল্লাস, মুখ লুকিয়েছে লঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউডের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। রিয়াদের ব্যাটে ঘুচে গেছে সকল শঙ্কা, মুছে গেছে সব জঞ্জাল। তাতে, বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। ঠিক যেভাবে, নিদাহাস ট্রফির সেই ছক্কায় উড়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার স্বপ্ন।
এই রিয়াদই তো বাংলাদেশের সেরা ফিনিশার, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত সেরা ম্যাচ উইনার। তিনিই তো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সারথি। মাঝের একটা বিশ্বকাপে ফর্মজনিত ইস্যুতে বিশ্বকাপ দলে জায়গায়ই হয়নি রিয়াদের। এবার নিশ্চয়ই আর কোনো আক্ষেপ রাখতে রাজি হবেন না বুড়ো এই যোদ্ধা, যিনি মুখের কথায় নন – জবাব দিতে জানেন মাঠে, ব্যাট হাতে।