জয় দ্য ওপেনার

মুমিনুল হক যখন চট্টগ্রামে বসে কথাটা বললেন, সকলে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলো। টেস্ট অধিনায়ক বলেছিলেন, মাহমুদুল হাসান জয়কে তারা ওপেনার হিসেবে বিবেচনা করছেন।

কোনো ধরণের স্বীকৃত ক্রিকেটেই জয়ের ইনিংস শুরু করার অভিজ্ঞতা ছিলো না। এই অনভিজ্ঞতা নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামলেন; ব্যর্থ হলেন। আরও নাক সিটকানো শুরু হলো। কিন্তু জয় তার ‘ওপেনার’ স্বত্তাকে জমিয়ে রেখেছিলেন।

নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৬ করলেন। এরপর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ম্যাচ জেতানো ৭৮ রানের ইনিংস খেললেন। খেলাটা এখানেই শেষ নয়। জয় সব ফরম্যাটেই নিজেকে যেনো ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠান পন করেছেন। দেশে ফিরে একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর বিপিএল খেলতে নামলেন সেই ওপেনার হিসেবেই। সেখানেও প্রথম ম্যাচেই ৩৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেললেন।

তাহলে ওপেনার জয় প্রতিষ্ঠা পেয়েই গেলেন? ওপেনার না হলেও রানমেশিন জয় অবশ্য নতুন কিছু নয়।

চাঁদপুর থেকে ঢাকার ক্রিকেটে পৌছানো ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব বেশি না।

তারপরও চাঁদপুরে থেকেই ক্রিকেটের নেশায় পড়ে গিয়েছিলেন জয়। সারাদিন বাসার বকাঝকা উপেক্ষা করে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন এ পাড়ায়, ও পাড়ায়। শেষমেশ এক আঙ্কেলের পরামর্শে জয়ের বাবা তাকে বিকেএসপিতে দিয়ে দিলেন-ক্রিকেটই যখন খেলবে ভালোভাবেই খেলুক।

কাজটা যে অসাধারণ হয়েছিলো, সে প্রমাণ জয় দিয়েছেন। বিকেএসপি থেকেই একের পর এক বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই নামটা ছড়িয়ে পড়ে তার। যুব স্তরে তৌহিদ হৃদয়ের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত রান স্কোরার ছিলেন জয়। বিশ্বকাপে সেই ছায়া থেকেও বের হয়ে আসেন।

বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ জয়ের পথে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন জয়। এর মধ্যে মহাগুরুত্বপূর্ন এক সেঞ্চুরিও ছিলো। বিশ্বকাপ জিতে ফেরার পর যেখানেই খেলতে নেমেছেন, রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে ২৮৫ রান নিয়ে দু দলের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরার; ২টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি। এর আগে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও রান পেলেন।

এবার এলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি। প্রথম পর্ব শেষের আগের দিনও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। মিজানুর রহমান শেষ দিনে সেঞ্চুরি করে জয়কে টপকে গেছেন। তারপরও ৫২.৪২ গড়ে ১১ ম্যাচে ৩৬৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন জয়।

এরপর জাতীয় লিগে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ৮৩ রানের ইনিংস খেলে ডাক পেলেন টেস্ট দলে।

জয় এই ধারাবাহিকতাটাকেই সম্পদ বানাতে চান। ঢাকা লিগের পর তিনি বলছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করি, প্রতি ম্যাচে যাতে রান করতে পারি। আমার লক্ষ্যই কনসিসটেন্ট হওয়া। সে জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো আগের ম্যাচের কথা ভুলে যাওয়া। আগের ম্যাচে ভালো বা খারাপ যাই করি, সেটা মাথায় থাকলে পরের ম্যাচে রান করা কঠিন হয়। আমি ম্যাচ একটা শেষ হলেই সেটার স্কোর ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।’

এই চেষ্টা নিশ্চয়ই জয়কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। অন্তত বাংলাদেশ ব্র্যান্ড নিউ এক ওপেনার পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link