সমস্যা সমাধানের প্রথম কাজই সমস্যাকে চিহ্নিত করা; সমস্যাকে সমস্যা বলে মানতে পারার সাহস থাকলেই কেবল সমাধান খোঁজা যায়। কিন্তু সমস্যা মেনে নেয়ার, ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করার সাহস টুকু বোধহয় নেই লিটন দাসের; বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের কাছে তাই নিজের ২৫/২৬ গড় খুব একটা খারাপ মনে হয় না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটসম্যান পাওয়াটাই বিশাল কিছু। সেখানে বিশ্বসেরাদের সাথে পাল্লা দিবে এমন কেউ তো লাল-সবুজের ক্রিকেটে বিরল ধূমকেতু। লিটন দাস ধূমকেতু হয়েই এসেছিলেন; ক্যারিয়ারের নড়বড়ে শুরু কাটিয়ে ধীরে ধীরে রানমেশিন হয়ে উঠেছিলেন; হয়ে উঠেছিলেন দেশের ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে ভরসার নামও।
তিন ফরম্যাটে দারুণ খেলা লিটন দাস অবশ্য হোচট খেয়েছেন আবারো; বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে পুনরায় ম্লান হয়ে গিয়েছেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। লম্বা সময় ধরেই তাঁর ব্যাটে নেই কোন ওডিআই সেঞ্চুরি, বড় ইনিংসের দেখা মিলেছে কালেভদ্রে। অথচ লিটন কি না বাকি দুই সংস্করণের পারফরম্যান্স দিয়ে ঢাকতে চান ওয়ানডে ব্যর্থতা।
টপ অর্ডারর কাছে সবসময়ই দলের প্রত্যাশা থাকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়া। কিন্তু দলটা বাংলাদেশ বলেই হয়তো, সেই প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির হিসেব মেলে না। প্রায় সব ম্যাচেই মিডল অর্ডারের উপর চাপ সৃষ্টি করে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান টপ থ্রি।
অফ ফর্মে থাকা তামিম ইকবাল, লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারে লিটন দাসের উপরই প্রত্যাশা বেশি। তিনি যে শুধু বড় রান করতে পারেন বা দ্রুত রান করেন তা নয়, নিজের দিনে প্রতিপক্ষ বোলাররদের রীতিমতো কাঁপিয়েও দিতে পারেন এই ডানহাতি।
কিন্তু চলতি বছর ১১ ম্যাচ খেলা লিটন দাস রান করেছেন মাত্র ২৪৮৷ গড় ২৪.৮০ আর সেঞ্চুরি নেই একটিও। ২০২২ সালেই তো ৫২.৪৫ গড়ে ৫৭৭ রান করেছিলেন তিনি; পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট লিটনের এই অফ ফর্ম। কিন্তু তিনি নিজেই মানতে চাননি সেটা।
পারফরম্যান্সের জন্য ট্রল হওয়া তামিম ইকবালের চলতি বছরের ব্যাটিং গড়ও লিটনের চেয়ে ভাল। ২৬.৫৬ গড়ে ২৩৯ রান করেছেন তিনি। হ্যাঁ স্ট্রাইক রেট দিক থেকে তামিমের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে লিটন, কিন্তু একজন ওপেনারের কাজ তো শুধু ১০ বলে ১০ রান করা নয়, বরং দলের বড় সংগ্রহের মঞ্চ তৈরি করা। সে কাজটুকুও করতে পারছেন না লিটন।
ট্রল, সমালোচনা সবই একটা সময় শুনতে হয়েছিল লিটন দাসকে। এরপর নিজেকে বদলে ফিরেছেন স্বপ্নীলভাবে। সেই সাথে স্বপ্ন দেখিয়েছেন লাল-সবুজের ক্রিকেটপ্রেমীদের; কিন্তু বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপের কয়েক মাস আগে এই ডানহাতির ওয়ানডে ফর্ম সেই স্বপ্নকে যেন ব্যঙ্গ করছে।
বড় দলগুলোর বিপক্ষে এমনিতেই ধারাবাহিক নন লিটন দাস। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ২০, ২.৩৩, ২২, ৭.১৭। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও কিছু করতে পারেননি লিটন, বলার মত কেবল ভারতের বিপক্ষে ভাল করেছেন তিনি।
তবু বিশ্বকাপে লিটন দাসের ব্যাটে ছড়ে দারুণ কিছু করার আশা করছে বাংলাদেশ। সেজন্য রানে ফিরতে হবে তাঁকে, আর আগে অবশ্য স্বীকার করতে হবে নিজের দুর্বলতা। অফ ফর্ম মানতে না চাইলে সেটা নিয়ে কাজই বা করবেন কিভাবে?