পিএসএলে কেন এত রান হচ্ছে!

ঠিক বোঝার উপায় নেই, কোন ভিডিও গেম চলছে নাকি সত্যিকার অর্থেই পেশাদার ক্রিকেট। মুড়িমুড়কির মত রান হচ্ছে পাকিস্তানের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টূর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগে। ২৫০ রান যেন মামুলি কোন ঘটনা। অবশ্য ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখন সেটা বেশ স্বল্প পুঁজি। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিবেচনায় এখন অবধি সে রান একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন মতবাদের বিস্তার যেন ঘটাতে চাইছে এবারের পিএসএল।

প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ২০০ ছাড়াচ্ছে রানের গণ্ডি। আর প্রতিপক্ষ সেসব ম্যাচ অনায়াসেই জিতে নিচ্ছে। প্রতিদ্বন্দীতা হচ্ছে বেশ। তবে সেসব কেবলই পাওয়ার হিটিংয়ের। খেলোয়াড়দের সত্যিকার সামর্থ্যের পরীক্ষা ঠিক নেওয়া যাচ্ছে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এত মারকাটারি ব্যাটিং আর রীতিমত এভারেস্ট উচ্চতার রান সংগ্রহের পেছনের কারণ কি! খালি চোখে সোজা-সাপ্টা একটা  কথাই বলে দেওয়া যায়। এত রান হওয়ার পেছনের একটাই কারণ- ফ্ল্যাট পিচ।

পাকিস্তান ক্রিকেট বরাবরই সমৃদ্ধ পেসার দিয়ে। পেসারদের পুন্যভূমি হিসেবেই খ্যাত দেশটি। তাই বলে যে ব্যাটারদের কমতি দেখেছে বিষয়টি তেমন নয়। তবুও কোন এক অজানা কারণে ব্যাটারদের স্বর্গভূমি হয়ে উঠছে পাকিস্তানের পিচগুলো। কেবলই ব্যাটারদের দু’হাত উজার করে দেওয়ার পরিকল্পনা। এখানে যেন বোলারদের করবার মত তেমন কিছুই নেই। শুধু ব্যাটারের ভুলের অপেক্ষা করা ছাড়া। তবে এমন সব ব্যাটিং সহায়ক পিচে ব্যাটারদের ভুল করবার প্রবণতাও কম।

আর যতক্ষণে তাঁরা ভুল করছেন, ততক্ষণে রান ছুঁয়ে ফেলছে গগন। ২৪৩ রানের টার্গেট দিয়েও হারতে হয়েছে পেশওয়ার জালমিকে। সে রান পাঁচ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে যায় মুলতান সুলতান্স। একাই রাইলি রুশোই যেন সব তছনছ করে দেন। অবশ্য রুশোর এমন মারকুটে ব্যাটিংয়ের রেকর্ডের পাল্লাটা ভারি। অন্যদিকে কাইরন পোলার্ডের মত টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড়ও হাত খুলে ব্যাট করেছিলেন। পেশওয়ারের বোলারদের যেন কিছু করবার মত উপায় ছিল না।

ঠিক একই পরিস্থিতির সম্মুখীন অবশ্য মুলতান দলকেও হতে হয়েছিল। কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ২৬২ রান করেও হারের দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে হয়েছিল মুলতান সুলতান্সকে। মাত্র নয় রানের এক শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় দল। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ব্যাটারদের এমন আগ্রাসন যেন ধ্রুব এক ঘটনায় পরিণত হয়েছে পাকিস্তান সুপার লিগে। হ্যাঁ, একটা বিষয় সত্য। ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে চাহিদা বিধ্বংসী ব্যাটিং। চার-ছক্কার বন্যায় আনন্দ জলে ভাসবে দর্শক-সমর্থকরা সেটাই যেন মূল উপজীব্য।

সে কাজটাই যেন করতে চাইছে পিএসএল গভর্নিং বডি। তবে সেক্ষেত্রে একটা ক্ষতি অবশ্য হয়ে যাচ্ছে। তরুণ ব্যাটারদের ঠিকঠাক পরিমাপ করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ থেকেই যায়। কেননা স্রেফ পাওয়ার হিটিং দিয়ে নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা ভীষণ কঠিন। সে বাস্তবতা নিশ্চয়ই বোঝে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এই ক্ষতি ছাড়াও পাকিস্তানের বোলারদের আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলছে এই ধরণের ব্যাটিং সহায়ক পিচ।

কেননা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফলাফলটা পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে হতাশা এসে ভর করতে পারে বোলারদের মাঝে। সেদিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে তরুণ পেসারদের। যদিও একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া গেছে। সেদিক বিবেচনায় নিলে এমন পিচ অবশ্য ফেলে দেওয়ার নয়। যদিও স্পোর্টিং বিষয়টা ঠিক থাকে না। শুধু যে পিএসএলে এমন ঘটনা ঘটছে বিষয়টা তেমন নয়।

পাকিস্তানে খেলা বিগত বেশ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। যেখানে টেস্টের পঞ্চম দিন অবধি পিচ বোলারদের বিন্দুমাত্রও সুবিধা দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটারদের পরিসংখ্যানের গ্রাফটা তরতর করে বেড়েছে, প্রত্যাশিত ফলাফল বা প্রতিদ্বন্দীতা হয়নি। তাইতো পাকিস্তানের পিচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।

দীর্ঘ একটা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে পাকিস্তানে। এমন পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই পাকিস্তান বৈশ্বিক দলগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে চাইবে না। তেমন ইচ্ছে থাকাটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। সেই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে বেড়িয়ে আসার একটাই মাত্র পথ খোলা। ঘরের সবগুলো পিচকে অন্তত পেস সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা।

যেহেতু পাকিস্তানি পেসারদের প্রশংসা জগৎজোড়া। অন্ততপক্ষে একটা স্পোর্টিং উইকেট নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করতে পারে সিরিজ খেলতে আসা দলগুলো। তাছাড়া ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও এমন নির্জীব পিচ সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসা উচিত পাকিস্তানের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link