রাত দশটা চল্লিশ মিনিট। শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে এসে থামলো উড়োজাহাজটি। যেটিতে করে দেশে ফিরেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করে আসা বাংলাদেশ দল। তাদের জন্যই বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের দীর্ঘ অপেক্ষা।
তবে শীতের আমেজ নামানো রাতে অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। রাত গভীর হলে ঠান্ডার প্রকোপও যেন বাড়তে থাকে। তবুও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরা ক্রিকেটারদের জন্য অপেক্ষা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন ক্রিকেটাররা। আর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
নিজের পারফর্মেন্স, দলের পারফর্মেন্স, বাইরের সমালোচনা সবকিছু নিয়েই কথা বলেছেন এই ওপেনার। তবে শান্ত’র একটা কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত বলছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আসলে আমি সেগুলো নিয়ে একদমই ফোকাস করিনি। আমি আমার ম্যাচে, খেলায় ও প্র্যাকটিসে ফোকাস দিয়েছিলাম।’
এটা সম্ভবত পুরো বাংলাদেশ দলেরই কথা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন করে শুরু করা একটা দলের প্রধান মটো। যে দলটার প্রথম বড় মিশন ছিল অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে কেমন করলো বাংলাদেশ?
এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি দুই ধরনের যুক্তিই পাবেন। অনেকের মতে বিশেষ করে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ শ্রীধরণ শ্রীরাম বারবার বলতে চাইছেন এটাই বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কারণ এবারই প্রথম মূল পর্বে একাধিক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
ওদিকে একটা বড় অংশ মনে করেন, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ব্যর্থই। কারণ বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বড় দলের বিপক্ষে কোন জয় নেই বাংলাদেশের।
দুই পক্ষের মতামতেই যথেষ্ট যুক্তি আছে। বাংলাদেশ আসলে বিশ্বকাপে সফল নাকি ব্যর্থ এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া তাই কঠিন। তবে একটা ব্যাপার ঠিক যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নেদারল্যান্ডস সহজ প্রতিপক্ষ না। এই দলটাই মূল পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। আবার জিম্বাবুয়েও হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। টি-টোয়েন্টি ফর্ম বিবেচনা করলে অবশ্য বাংলাদেশকেই তুলনামূলক দুর্বল মনে হচ্ছিল। তবে মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বড় কোন ভুল করেনি, জয় নিয়েই ফিরেছে।
আরেকটি ব্যাপার এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শেষ ম্যাচ অবধি বাংলাদেশ সেমিফাইনালের রেসে ছিল। পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলত। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সও মাথায় রাখা জরুরি।
কিছু ভাল দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও আছে অনেক। বিশেষ করে ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট কোন ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। আফিফ,মোসাদ্দেক, রাব্বিরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এছাড়া স্পিন বোলিংটাও সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে আবার বলতে হয় বাংলাদেশ সফল নাকি ব্যর্থ সেই সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। তবে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যে পক্রিয়া, যে সংষ্কৃতিটা গড়ে তুলতে চাচ্ছে সেটা সবচেয়ে বেশি প্রশংসার দাবি রাখে।
এই ফরম্যাটে একটা নতুন দল তৈরি করা হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে মানসিকতা থাকা প্রয়োজন সেটা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। মাঠেও আগের থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক থাকতে দেখা যায় ক্রিকেটারদের। যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ শ্রীধরণ শ্রীরাম। তরুণ ক্রিকেটাদের রাখা হচ্ছে সামনের সারিতে।
এছাড়া শান্ত যেটা বিমানবন্দরে বললেন। বাইরের আলোচনায় মনোযোগ দেননি। পুরো দলই সেটা করতে চেয়েছে। অধিনায়ক দলকে একটা বাবলে রাখতে চেয়েছেন। বাইরের কোন হস্তক্ষেপ দলের উপর পড়তে দেননি।
সব মিলিয়ে নতুন একটা দল তৈরি হচ্ছে। যারা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা, টি-টোয়েন্টির মত করেই খেলতে চায়। সেকারণেই সাফল্য আসতে হয়তো একটু সময় প্রয়োজন। সেজন্য তাদের উপর ভরসা রাখা জরুরি। কয়েকমাস আগেও এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অ্যাপ্রোচ আর আজকের অ্যাপ্রোচে ফারাক অনেক। আমরা বিশ্বাস করি যত দিন যাবে এই পার্থক্যটা বাড়বে। এই প্রক্রিয়াটা বজায় থাকলে বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বড় দল হয়ে উঠবে।