ভারতীয় ক্রিকেট কি সত্যি তলানীতে?

সাফল্য বোঝার সূচক বা ইনডেক্স প্যারামিটার বলতে এখনও সবাই বিদেশ সফরে পাওয়া সাফল্য, বা বিশেষত উপমহাদেশের বাইরে হওয়া টুর্নামেন্ট বা সিরিজগুলোকেই মর্যাদার আসনে ভূষিত করা পছন্দ করেন। তাঁরা ভুলে যান যে দেশে (বা ব্যাপকার্থে উপমহাদেশে) খেলা সিরিজগুলোতে জয়ও কষ্টার্জিত, সেখানেও আইসিসির মূল্যবান পয়েন্ট ঘামরক্ত ঝরিয়েই অর্জন করতে হয়, কেনা যায় না!

ভারতীয় হন কি বিদেশি, অনেক বিশেষজ্ঞকেই ইদানীং একটা বিতর্কিত মন্তব্য করতে শুনছি! কি, না ভারতীয় ক্রিকেটের মান নিম্নগামী, কারণ ভারতীয় দল একটাও আইসিসি টুর্নামেন্টে জেতেনি ২০১৩ সালের পর থেকে। ওই সময় থেকেই একটা চিন্তা মাথায় ঘোরাফেরা করছিল। সেটা হচ্ছে, কোনও দলের খেলার মান নির্ধারিত হয় ধারাবাহিকতায় ও নতুন প্রতিভা অন্বেষনে। ভারতের বেলায় সেগুলো একবার খতিয়ে দেখলে কেমন হয়?

দ্বিতীয়টিতে (আইপিএল) কি ঘটেছে, সেটা সবারই জানা। আর এই বিষয়ে এতবেশী আলোচনা/সমালোচনা হয়েছে যে নতুন করে আবার কিছু বলাটা (বা লেখাটা) সময়ের অপচয়মাত্র হতে পারে বলে মনে হল!

তাই আমি প্রথম কারণটি নিয়ে কিঞ্চিত তথ্যের আশ্রয় নিই। কথায় আছে না, ‘গোল্ডফিশ মেমোরি’, যার ফায়দা যুগ যুগ ধরে আমজনতার থেকে নিয়ে চলেছেন রাজনীতিবিদরা। লক্ষ্য করলাম আমরা, অর্থাৎ ক্রিকেটজনতাও এই ঐতিহ্য বহন করা শুরু করে দিয়েছে। আর সেটাও বেশ সিরিয়াসভাবেই!

নমুনাগুলি একে একে দিই তাহলে? এখানে আসছে ২০১৩ সাল থেকে আইসিসি প্রতিযোগিতা আর বিদেশ সফরগুলোতে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটদলের সাফল্য (বা ব্যর্থতার) সংক্ষিপ্ত খতিয়ান (সময়ানুসার বজায় রাখা হয় নি যদিও সবক্ষেত্রে) –

  • আইসিসি ইভেন্ট

৫০ ওভারের ২০১৫ ও ২০১৯ এর পরপর দুটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ভারত। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানার আপ ও ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট। এছাড়া ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির রানার আপ ভারত। ২০২১-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও রানার আপ হয় ভারত।

  • বহুজাতিক টুর্নামেন্ট

২০১৬ ও ২০১৮ সালের পরপর দুই এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ২০১৮ সালের নিধাহাস ট্রফিতে বিজয়ী হয়। ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ বিজয়ী।

  • ভিন্ন কন্ডিশনে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ

২০১৮-২০১৯ আর ২০২০-২০২১ সালের পরপর দুটি অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে ও প্রথমটিতে ওয়ানডে এবং দ্বিতীয়টিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী হয়। ভারত। ২০১৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী। ২০১৮ ও ২০২২ সালের ইংল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী। ২০২১ ও ২০২২ এর বর্ধিত টেস্ট সিরিজ ড্র রাখা ও ওয়ানডে সিরিজে জয়।

২০১৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে বিজয়ী ছিল ভারত। ২০২১ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী। ২০২২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী। ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০২২, টানা তিনটি জিম্বাবোয়ে সফরে যাবতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে তথা সিরিজে বিজয়ী। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে সিরিজে ও ২০১৫ সালে টেস্ট সিরিজে বিজয়ী দল ভারত।

২০১৬ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়, ২০২০ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়, ২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে বিজয়, ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে বিজয়, ২০১৮ এবং ২০২২ সালের আয়ারল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয়ী – এমন অর্জনও আছে ভারতের ঝুলিতে।

আগেই বললাম, এগুলো হল শুধুমাত্র ২০১৩ সাল থেকে ভারতের বিদেশ সফরগুলোর সাফল্যের খতিয়ান। কারণ সাফল্য বোঝার সূচক বা ইনডেক্স প্যারামিটার বলতে এখনও সবাই বিদেশ সফরে পাওয়া সাফল্য, বা বিশেষত উপমহাদেশের বাইরে হওয়া টুর্নামেন্ট বা সিরিজগুলোকেই মর্যাদার আসনে ভূষিত করা পছন্দ করেন। তাঁরা ভুলে যান যে দেশে (বা ব্যাপকার্থে উপমহাদেশে) খেলা সিরিজগুলোতে জয়ও কষ্টার্জিত, সেখানেও আইসিসির মূল্যবান পয়েন্ট ঘামরক্ত ঝরিয়েই অর্জন করতে হয়, কেনা যায় না!

যাই হোক, সে প্রসঙ্গে না হয় আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। আপাতত এখানে দেশের মাটিতে হওয়া দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর হিসাব আর দিলাম না। তার বদলে একটা ছোট প্রশ্ন করছি শুধুমাত্র। আপনারা কি মনে করেন? ভারতীয় ক্রিকেট কি তলানিতে? সত্যিই?

উত্তরটা পাওয়া কিন্তু খুুব জরুরী। আমার, আপনার এবং আপামর ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী জনতার জন্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...