মিরপুরের ‘বিতর্কিত’ পিচের নেপথ্যের গল্প

বাংলাদেশ ক্রিকেটের গামিনি ডি সিলভা—একটা পরিচিত নাম। বিশেষ করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর গতির পিচ নিয়ে যে আলোচনা, তার কেন্দ্রে সবসময়ই থাকতেন এই লঙ্কান কিউরেটর। ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে তাঁর ভূমিকা নিয়েও কম কথা হয়নি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের গামিনি ডি সিলভা—একটা পরিচিত নাম। বিশেষ করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর গতির পিচ নিয়ে যে আলোচনা, তার কেন্দ্রে সবসময়ই থাকতেন এই লঙ্কান কিউরেটর। ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে তাঁর ভূমিকা নিয়েও কম কথা হয়নি। প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সঙ্গে মিলে যে পরিকল্পনা তিনি বাস্তবায়ন করতেন, তা সামলানো ছিল অতিথি দলগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভব কাজ। ১৬ বছর কাজ করার পর গামিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন।

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে জানালেন, কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সাথে দারুণ বোঝাপড়া ছিল তাঁর। ক্রিকবাজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হাতুরু আমার খুব ভালো বন্ধু। শৈশবে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। পরে আমি আম্পায়ার হলাম, সে কোচিংয়ে গেল। যখন আমি বাংলাদেশে এলাম, সেও হেড কোচ হয়ে এল। তাই একসঙ্গে কাজ করা খুবই সহজ ছিল।’

অভিযোগ ছিল গামিনি নিজের মতো করে পিচ বানান—কিন্তু তিনি পরিষ্কার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘মিরপুরের উইকেট আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। দল যেটা চায়, অধিনায়ক–কোচ যেটা বলে, সেটা করতেই হয়। এটা পৃথিবীর সব দেশে হোম অ্যাডভান্টেজ থাকে। আমাকে যেভাবে বলা হত সেভাবেই উইকেট বানিয়েছি।’

বাংলাদেশের ব্যাটিং নষ্ট হয়ে গেছে মিরপুরের উইকেটের জন্য—এই অভিযোগও শোনা গেছে। গামিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা যেরকম উইকে প্র্যাকটিস করতে চাইত, ঠিক সেটাই দিতাম। বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে বেশি বাউন্স, গ্রাসি উইকেট—যা বলেছে, তা-ই করেছি।’

কিছু খেলোয়াড় অভিযোগ করেছেন, গামিনি নাকি তাদের অনুশীলন করতে দিতেন না। ইমরুল কায়েস, এবাদত হোসেনদের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের জবাবে গামিনি ডি সিলভা বলেন, “যারা বোর্ডের কন্ট্রাক্টে আছে, তাদের জন্য সব করি। যাদের কন্ট্রাক্ট নেই, তাদের তো আমি নিজে থেকে ঢুকিয়ে দিতে পারি না।’

মিরপুরের সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়, অন্য কোনো মাঠের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হত এই ভেন্যু। বাংলাদেশের মাঠ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই গামিনি চমকে দেওয়া হিসাব দিলেন। বললেন, ‘মেলবোর্ন ১৪৮ বছরে ১৬০টা ম্যাচ দিয়েছে। আর মিরপুর মাত্র ১৯ বছরে দিয়েছে ২১৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ! এত ম্যাচে একই মাঠ ব্যবহার করলে পিচের অবস্থা খারাপ হবেই। তাছাড়া এখন তিন ফরম্যাট, তিন দল — সবার প্র্যাকটিসই হয় মিরপুরে। ফলে একটি উইকেটকে পরিচর্যা করার জন্য যথেষ্ট সময় পাই না আমরা।’

১৬ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি দেশে ফিরছেন। এর আগে সহজ একটা কথা বললে গেলেন, ‘আমি যা করেছি, বোর্ডের জন্য করেছি। বাংলাদেশের জন্য করেছি। মিরপুরকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক ভেন্যু বানানো সহজ ছিল না। কিন্তু করেছি বলে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে গেছে।’ গামিনির বিদায় হয়ে গেলেও, মিরপুরের বুকে তাঁর নাম বহুকাল টিকে থাকবে।

Share via
Copy link