ব্রাজিলের ধুলোমাখা মাঠে দাপিয়ে বেড়াতেন সকাল বিকেল। চোখে ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং জেদ। সেই জেদই যেন সাহায্য করলো ফুটবল বিশ্বে এক অনন্য ছাপ রেখে যেতে। কথা গুলো কি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে লুইস ফেবিয়ানোর? হ্যাঁ, ফেবিয়ানোই সেই ব্যক্তি যিনি ব্রাজিলের আক্রমণে বনে গিয়েছিলেন এক অনন্য অস্ত্র।
১৯৮০ সালের, ৮ নভেম্বর ব্রাজিলের ক্যাম্পিনাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ফুটবলীয় ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্রাজিলের ক্লাব পন্তে প্রেতার মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি সাও পাওলোতেও খেলেছেন। তার বল রাখার দক্ষতা, নিখুঁত ফিনিশিং এবং গতি সকলকে মুগ্ধ করেছিল। যার ফলে ইউরোপের ক্লাবগুলোর তার উপরে নজর পরেছিল।
পোর্তোতে খেলার মাধ্যমে তার ইউরোপে পদার্পণ ঘটে। ২০০৪ সালে তিনি পোর্তোর হয়ে খেলা শুরু করেন। তবে তিনি ক্যারিয়ারের সব থেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন সেভিয়াতে। তিনি সেভিয়ার হয়ে ১৪৯ ম্যাচ খেলে ৭২ টি গোল করেছেন। তার পুরো ক্লাব ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি মোট ৪২২ টি ম্যাচ খেলে ২১৪ টি গোল করেছেন।
তিনি তার ক্যারিয়ারে মোট ১০ টি শিরোপা জিতেছেন। উল্লেখযোগ্য একটি কোপা আমেরিকা, একটি ইউএফা সুপার কাপ, দুইটি ইউরোপা কাপ, দুইটি স্প্যানিশ লিগ কাপ এবং একটি স্প্যানিশ সুপার কাপ। ক্যারিয়ারে মোট পাঁচ বার সর্বাধিক গোল করার খেতাবও জিতেছেন এই ব্রাজিলিয়ান।
এই স্ট্রাইকারের সবচেয়ে স্মরণীয় সময়টা ছিল ২০০৯ সালের কনফেডারেশন কাপে। সেই টুর্নামেন্টে তিনি দুর্দান্ত খেলেছিলেন। আমেরিকার বিপক্ষে খেলা সেই ফাইনালের জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। ২-০ গোলে ব্রাজিল পিছিয়ে থাকার পরেও জোড়া গোল করে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ব্রাজিল জয়লাভ করে। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে ৪৫ টি ম্যাচ খেলে মোট ২৮ টি গোল করেছেন।
তার ক্যারিয়ারে ইনজুরি এবং নিষেধাজ্ঞা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার। তবে তিনি থেমে যাননি। প্রতিবার তিনি ফিরেছেন তার পরিশ্রম এবং দক্ষতার বলে। তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটা স্মরণীয় মুহূর্ত বলা যায় ২০১০ বিশ্বকাপকে। সেবারই সম্ভবত শেষবারের মত সত্যিকারের একজন নাম্বার নাইন খেলায় ব্রাজিল। সেখানে পাঁচ ম্যাচ খেলে তিন গোল করেন ফ্যাবিয়ানো। ব্রাজিলের দৌড় থামে কোয়ার্টার ফাইনালে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মুহূর্তের ভুলে স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে হয় ব্রাজিলকে।
লুইস ফ্যাবিয়ানো শুধুমাত্র একজন ফুটবলার ছিলেন না; তিনি ছিলেন সংগ্রামের এক মহাকাব্য। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। ইনজুরি, নিষেধাজ্ঞা কিংবা প্রতিকূলতা—কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। তিনি মাঠে ফিরেছেন প্রতিবার আরও শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে।
তার ক্যারিয়ার শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি এক অনুপ্রেরণার গল্প। মাঠে তার নিখুঁত ফিনিশিং যেমন সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, তেমনি তার অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রম নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
যেমন প্রতিভা ছিল, তেমন অর্জন অবশ্য ক্যারিয়ার শেষে খুঁজে পাওয়া যায় না ফ্যাবিয়ানোর মধ্যে। সব লড়াইয়ের শেষে কি আর বিশ্বজয় চাইলেই লেখা যায়!