যেই বয়সে তার সমসাময়িক খেলোয়াড়েরা কমেন্ট্রি বক্সে মাইক্রোফোন হাতে ব্যস্ত, তখনও তিনি আগুন ঝরাচ্ছেন ক্রিকেট পিচে। ২০০৩ সালে বল হাতে ডিওন ইব্রাহিমের বিপক্ষে প্রথমবার দৌড়ানোর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটারের ও বেশি দৌড়িয়ে পেয়েছেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের মুখে ‘ম্যারাথন ম্যান’ খেতাব।
সেই ১৮ বছর আগে, লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ছেলেটা যখন বল হাতে দৌড় শুরু করেছিলেন, কেউ ভাবতেও পারেননি এক দিন টেস্টে ৬০০ উইকেটের মালিক হয়ে উঠবেন তিনি। প্রথম পেসার হিসেবে এই অবিশ্বাস্য মাইল ফলক ছুঁয়েই অবশ্য থেমে যাননি তিনি। দৌড়ে চলেছেন এবং চলেছেন নতুন সব রেকর্ড গড়ে নিজের নামটি উজ্জ্বল থেকে আলোকোজ্জ্বল করতে! হ্যাঁ, কথা বলছি পেসারদের মাঝে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি জেমস অ্যান্ডারসনের কথা।
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য জেমস অ্যান্ডারসনের লাল বলে অভিষেক হয়েছিল ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালে। সেদিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কি ঘূর্ণি ঝড়ই না তুলেছিলেন সুইং এর রাজা জিমি। তার দুপাশে সুইং করানোর ক্ষমতা সবাইকেই অভিভূত করেছে সব সময়। জীবন সংসারে ৪০টি বসন্ত পার হয়ে গেলেও পিচের দুপাশে তার সুইং করানোর দক্ষতা যেকোনো ব্যাটারকে এখনও গোলকধাঁধায় ফেলতে সক্ষম। ব্যাটারদের গোলকধাঁধায় ফেলানোর দারুণ সক্ষমতার প্রশংসা দেড় যুগ ধরে করে আসছেন প্রায় সব ক্রিকেটার,এমনকি কিংবদন্তি বোলারগন ও। পেস বোলারদের মধ্যে উইকেটশিকারির তালিকায় দু’নম্বরে থাকা গ্লেন ম্যাকগ্রাও মুগ্ধ অ্যান্ডারসনে। টেস্টে ৫৬৩ উইকেট পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার বলেছেন, ‘অ্যান্ডারসনের মতো দক্ষতা আমার নেই। যখন ও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে দু’দিকেই বল সুইং করায়, তখন ওর চেয়ে ভাল আর কেউ হয় না।’
লাল বলের ক্রিকেটে আরেক ইংলিশ কিংবদন্তি অ্যালিস্টেয়ার কুকও জিমি মন্ত্রে মন্ত্রমুগ্ধ। দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং বন্ধুর চল্লিশ বছরে পদার্পণের দিনে তাই ইংলিশ এক পত্রিকায় লিখে ফেলেছিলেন পূর্নাঙ্গ এক ফিচার। যেখানে জিমিতে মুগ্ধ কুক শুরুটা করেছিলেন এভাবে, ‘ভাবতে অবাকই লাগে, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছি প্রায় চার বছর, অথচ আমার বন্ধু জেমস অ্যান্ডারসন এখনো কী দারুণ খেলে যাচ্ছে! যে কিনা ৪০ বছর বয়সে একটা টেস্ট খেলতে যাচ্ছে।’
দারুণ সব রেকর্ডে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা জিমি ভেঙে এবং গড়ে চলেছেন নতুন সব অনন্য রেকর্ড!
টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের মাঝে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কিন্তু ক্যাচ এবং উইকেট রক্ষন কর্তৃক ধরা ক্যাচে পাওয়া উইকেট শিকারিদের মাঝেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ক্যাচের মাধ্যমে টেষ্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত জিমি উইকেট পেয়েছেন ৪৩৯টি এবং উইকেট রক্ষকের গ্রাভস বন্দী উইকেট পেয়েছেন ১৮১টি। সাথে সবচেয়ে বেশি দিনের টেষ্ট ক্যারিয়ার তো রয়েছেই।
এমন ভিন্ন অনেক রেকর্ডের ফাঁকে ম্যাজিক্যাল বয় ছুঁয়ে ফেললেন আরো একটি অনন্য রেকর্ড।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেষ্ট ক্রিকেটে ঘরের মাঠে ১০০ তম টেষ্ট ম্যাচ খেলার অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করলেন জিমি অ্যান্ডারসন। ২০০ টেষ্ট খেলে সর্বোচ্চ টেষ্ট ম্যাচ খেলার গৌরব শচীন টেন্ডুলকারের হলেও ঘরের মাঠে শত ম্যাচ খেলার গৌরব নেই শচীনের ও। শচীন ঘরের মাঠে খেলেছিলেন ৯৪ টেষ্ট এবং বিপরীতে বিপক্ষ দলের মাঠে খেলেছিলেন ১০৬ টেষ্ট।
দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত ১৮৯ ইনিংসে ৩৫৯৫ ওভার বল করেছেন জিমি অ্যান্ডারসন। ৩৫৯৫ ওভারের মাঝে মেইডেন ওভার করেছেন ৯৫৯টি। ৬৫৯ উইকেট শিকার করে পেসারদের মাঝে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ঘরের মাঠে শিকার করেছেন ৪২১ উইকেট। যেখানে জিমির ইনিংসে বেষ্ট বোলিং ফিগার ৪২ রানে ৭উইকেট শিকার এবং ম্যাচে তা ৭১ রানে ১১ উইকেট শিকার। পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ২৪ বার এবং ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন ৩ বার।
৪০ বসন্ড পেরিয়ে জিমি এখনো ছুটছেন সেদিনের সেই আনকোরা জেমস অ্যান্ডারসনের মতই। উইকেটের ক্ষুধা সেই প্রথমদিনে মাঠে নামার পূর্ব মুহূর্তে যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড, মাইলফলকের পর মাইলফলক সবই নতুন করে লিখতে হচ্ছে বুড়ো জিমির অনবদ্য পারফরম্যান্স এর কারনে। জিমির লক্ষ্য এখন ৭০০!
যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তাতে ৭০০ খুব বেশি দূরে নয়।