দ্য ওয়ে অব ডেভন কনওয়ে

বয়সটা ২৯ পার হয়ে ৩০ ছুঁই ছুঁই। বহু সংগ্রামের পর লর্ডসে টেস্ট অভিষেকের কেটে গেছে ঘন্টা ছয়েক। দাঁড়িয়ে আছেন ৯৮ রানে, স্কয়ার লেগে ফিল্ডার থাকা সত্ত্বেও ফ্লিক করতে দুবার ভাবলেন নাহ। অবলীলায় ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানাদড়ির ওপারে। ডেভন কনওয়েরা যে ভয় পান নাহ, তারা ভাঙেন তবু মচকান নাহ। তারা লড়ে যান শেষ পর্যন্ত।

ফুটবল কোচ বাবাকে দেখে শৈশবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফুটবলার হবেন। তবে বারো বছর বয়সে এসে প্রেমে পড়লেন ক্রিকেটের। কিন্তু ক্রিকেটে এসে খাবি খেতে শুরু করলেন কনওয়ে। লায়ন্সের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে গড় মাত্র ২১.২৯। তাই ছয় বছর চেষ্টার পরও জায়গা পাকা হয়নি তাঁর। এমন সময় হয়তো বেশিরভাগ মানুষই ক্রিকেট ছেড়ে অন্যকিছুর চেষ্টা করতেন। কিন্তু কনওয়ে অন্য ধাতুতে গড়া, সিদ্ধান্ত নিলেন দেশান্তরী হবেন। সঙ্গী কিমও সায় দিলে একদিন সবকিছু পেছনে ফেলে উঠে বসলেন ওয়েলিংটনের প্লেনে।

ওয়েলিংটনে এসে খোঁজ পেলেন ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট ক্লাবের। নতুন দেশে এসে নতুন করে যেন সবকিছু শুরু করলেন কনওয়ে, রানের বন্যা বইয়ে দিলেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে। ফলাফল পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি, ডাক পেয়ে গেলেন ওয়েলিংটন প্রাদেশিক দলে। টম ব্লান্ডেলের ব্ল্যাক জাতীয় দলে ডাক পাবার সুবাদে তিন ম্যাচের জন্য সুযোগ পেলেন ওয়েলিংটন দলে।

অভিষেকে ৩০-এর কিছু বেশি, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৪ বলে ৭৮ আর তৃতীয় ম্যাচে লোকি ফার্গুসনের দলের বিপক্ষে দ্রুতগতির ৫০ – তিন ম্যাচের ওই অগ্নিপরীক্ষায় কনওয়ে খারাপ করেননি খুব একটা। কনওয়ের ভাগ্যলিপিটাও সম্ভবত লেখা হয়ে গিয়েছিল ওই তিন ম্যাচের পর।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি, সেখানেই ব্যাট করেছেন রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। ফোর্ড ট্রফিতে ৯ ম্যাচে ৫৫.৩০ গড়ে ৫৫৩ রান এবং টি-টোয়েন্টি সুপার স্ম্যাশে ৬৭.৮৩ গড়ে ৫৪৩ রান করেন। অবশেষে ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে। দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখেন, দ্বিতীয় ম্যাচেও ফিফটি, ৩৭ বলে ৬৫ রানে নট আউট।

এর আরো চার মাস পরে এ বছর মার্চে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচে বেশি করতে পারেন নি, লো স্কোরিং ম্যাচে ২৭ রান করে ফিরে যান। পরের দুই ম্যাচে ফিফটি (৯৩ বলে ৭২) ও সেঞ্চুরি (১১০ বলে ১২৬) করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে যান, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান যার, তার চেয়ে ১০৭ বেশি রান করেন। সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও হন তিনি।

ধারাবাহিকভাবে রান করে গেছেন প্লাংকেট শিল্ডেও, শেষ মৌসুমে ওয়েলিংটনের হয়ে ১০ ইনিংসে ৮৭.৬২ গড়ে করেছেন ৭০১ রান। ক্যান্টাবুরির বিপক্ষে খেলেন ৩২৭ রানের অনবদ্য ইনিংস। এতো দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদেই ডাক পেয়ে যান নিউজিল্যান্ড টেস্ট দলে। সাদা পোশাকে অভিষেকটাও হয়ে গেল গতকাল, ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে।

জীবনের উত্থান-পতন দেখেছেন বহুবার। সেইকারণেই কিনা অভিষেকের উত্তেজনা দেখা যায়নি ব্যাটিংয়ে। জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডের সুইং কিংবা মার্ক উডের গতিতে পরাস্ত হয়ে কেন উইলিয়ামসন-রস টেলররা ফিরে গেলেও তিনি ছিলেন অবিচল। উইকেটে ছিলেন সাবলীলতা, সারাদিনে একবারের জন্য চাপে ফেললে পারেননি ইংরেজ বোলাররা।

১৬ চারের নিয়ন্ত্রিত এক ইনিংসে তুলে নিয়েছেন অভিষেকেই সেঞ্চুরি। দিনের শেষে অপরাজিত আছেন ১৩৬ রানে। বিদেশের মাটিতে কোনো কিউই অভিষিক্তর ব্যাটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে এতেই, ১৩১ রান করে এর আগে যে কৃতিত্ব ছিল তাঁর এখনকার অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের।

কাকতালীয়ভাবে এত দিন লর্ডসে অভিষেকে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানও ছিল ১৩১। ১৯৯৬ সালে যা করেছিলেন ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি। কাকতালের তো এখানেই শেষ নয়। যাঁর রেকর্ড ভেঙেছেন, সেই সৌরভ গাঙ্গুলির মতো ডেভন কনওয়ের জন্মদিনও ৮ জুলাই!

সেঞ্চুরিটা লর্ডসে বলে নয়, কনওয়েরা মানুষের অন্তরে জায়গা ধরে রাখেন জার্নিটার জন্য! দক্ষিন আফ্রিকার দ্বিতীয় বিভাগের লিগ থেকে শুরু করা জার্নিটা আজ ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসের সবুজ ঘাসে। জার্নিটা চলতে থাকুক, কনওয়েরা বিশ্বজয় করুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link